১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

গভীর সঙ্কটে বেসিক ব্যাংক

সহায়তা চেয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ে চিঠি
-

গভীর সঙ্কটে পড়েছে বেসিক ব্যাংক। এক সময়কার লাভজনক ব্যাংকটি এখন ভাবমূর্তির সঙ্কটসহ প্রায় দুই হাজার কোটি এসএলআর (বিধিবদ্ধ তারল্য রিজার্ভ) ঘাটতির মুখে পড়েছে। এটির ওপর একটি বেসরকারি ব্যাংকের সাথে মার্জারে সংবাদ প্রচারের পর থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বেসিক ব্যাংকে রক্ষিত আমানত তুলে নিতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে আড়াইহাজার কোটি টাকার আমানত তুলে নেয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছে শতকরা শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন এই ব্যাংকটি।

চলমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও আমানত সরবরাহের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বরাবর চিঠি দিয়েছেন বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আনিসুর রহমান। এতে তিনি অর্থ সরবরাহ করাসহ চার দফা সুপারিশও করেছেন।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বরাবর প্রেরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বেসিক ব্যাংক ১৯৯২ সাল থেকে সরকারের ভালো একটি ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। কিন্তু, ২০১৪-২০১৫ সময়ে অনিয়মিতভাবে ঋণ বিতরণ করার ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঋণ শ্রেণিকৃত হওয়ার কারণে ব্যাংকটি আস্থার সঙ্কটে পড়ে। এ কারণে ব্যক্তি পর্যায়ে আমানত সংগ্রহ করা দুরূহ হয়ে পড়ে। সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক হিসেবে বর্তমানে ব্যাংকের মোট আমানতের প্রায় ৮০ শতাংশ আমানত সরকারি উৎস থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন, শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড, যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত সংস্থা, তিতাস গ্যাস ট্রান্সফিউশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডসহ আরো অনেক সরকারি দফতর/ অধিদফতর/ সংস্থা বেসিক ব্যাংকে নিয়মিত আমানত রাখে। সরকারি দফতর/ অধিদফতর/ সংস্থার অধিকাংশ এসব আমানত উচ্চ সুদবাহী।

চিঠিতে বলা হয়, বর্তমান পর্ষদের নেতৃত্বে সুশাসন নিশ্চিত হওয়ায় বিভিন্ন ব্যবসায়িক সূচকে ব্যাংকটি ভালো অবস্থায় ধাবিত হচ্ছিল। ব্যাংকের আমদানি, রফতানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়েছে। গত তিন বছরে ব্যাংকের বিতরণকৃত কোনো ঋণ শ্রেণিকৃত হয়নি এবং আলোচ্য সময়ে শ্রেণিকৃত ঋণ থেকে ৫৬৩ কোটি টাকা নগদ আদায় হয়েছে। মোট ৭২টি শাখার মধ্যে লোকসানি শাখার সংখ্যা ৩২টি থেকে ১৭টিতে কমানো হয়েছে। খরচ কমিয়ে আনার ফলে পরিচালন ব্যয় কমেছে। ঋণ আমানতের অনুপাত ১১৫ শতাংশ থেকে কমে ৮৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু শ্রেণিকৃত ঋণের আধিক্য ও উচ্চ সুদের আমানতের কারণে ব্যাংকের মূল ব্যবসায়িক সূচকগুলো ভালো থাকা সত্ত্বেও লোকসান হচ্ছে। ফলে প্রভিশন ঘাটতি ও মূলধন ঘাটতি হচ্ছে। যার বিরূপ প্রভাব ক্যামেলস রেটিং-এ পড়েছে।
অন্যদিকে বৃহৎ অংকের শ্রেণিকৃত ঋণ এবং উচ্চ সুদের আমানতের কারণে লোকসান হওয়া সত্ত্বেও বেসিক ব্যাংক ইতঃপূর্বে কখনোই বিধিবদ্ধ তারল্য রিজার্ভ (সিআরআর ও এসএলআর)-এর ঘাটতির সম্মুখীন হয়নি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কখনোই অর্থ ধার করার প্রয়োজন হয়নি।

চিঠিতে বলা হয়, কিন্তু গত ৮ এপ্রিল গণমাধ্যমে একটি বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকটি একীভূতকরণের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে অস্বাভাবিকভাবে আমানত উত্তোলনের ফলে ব্যাংকটি গভীর সঙ্কটে নিমজ্জিত হয়েছে। বিভিন্ন আমানতকারী ইতোমধ্যে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। উপরন্তু সরকারি বিভিন্ন দফতর/ অধিদফতর/ সংস্থা কর্তৃক আরো আমানত উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্য কোনো উৎস থেকে নতুন আরো আমানত পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া ব্যক্তি পর্যায়েও অস্বাভাবিকভাবে প্রতিনিয়ত আমানত উত্তোলন করা হচ্ছে।
এ দিকে বর্তমানে বেসিক ব্যাংকের পক্ষে বন্ড রেখে/রেপো করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নেয়ার সুযোগ নেই বা শেষ হয়ে গেছে। আন্তঃব্যাংক কল মার্কেটেও টাকা ধার পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে, সৃষ্ট আতঙ্কে বেসিক ব্যাংকে মারাত্মক তারল্য সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে।

বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একত্রীকরণের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার কারণে গ্রাহকদের মধ্যে যে আস্থার সঙ্কট তৈরি হয়েছে, এতে ব্যাংকের বিধিবদ্ধ তারল্য রিজার্ভ (এসএলআর)-এর ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, ইতঃপূর্বে এ ব্যাংকে কখনো তারল্য রিজার্ভ (এসএলআর)-এর ঘাটতি হয়নি বা চেকও ফেরতের ঘটনা ঘটেনি। বর্তমান পরিস্থিতির আশু উন্নতি না ঘটলে যে কোনো মুহূর্তে চেক ফেরতের আশঙ্কা রয়েছে, যার ফলে ব্যাংকটির ওপর আর কোনো ধরনের আস্থা অবশিষ্ট থাকবে না।

এমন অবস্থা চলতে থাকলে ব্যাংকটি অচিরেই গভীর সঙ্কটে পড়বে যার নেতিবাচক প্রভাব সমগ্র ব্যাংকিং খাতের ওপর পড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। এ ছাড়া উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেয়া না গেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি দেয়াও অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে পড়তে পারে।

চলমান অবস্থা থেকে উত্তরণে বেসিক ব্যাংকের পক্ষ থেকে চিঠিতে চার দফা সুপাশি করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, বেসিক ব্যাংক একটি সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক এবং এ ব্যাংকে আমানত রাখা ঝুঁকিমুক্ত এবং নিরাপদ - এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা/ দফতরকে বলা; আমানত প্রদানকারী সরকারি সংস্থাসমূহকে আমানত সংরক্ষণের পরামর্শ/ নির্দেশনা দেয়া; স্বল্প সুদে সরকার থেকে আমানত সরবরাহসহ নীতি সহায়তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা; একীভূতকরণ সংশ্লিষ্ট সংবাদটির বিষয়ে মালিকপক্ষ হিসেবে সরকারের অবস্থান স্পষ্টীকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

উল্লেখ্য, সরকারি মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক ২০০৯ সাল পর্যন্ত একটি লাভজনক ব্যাংক ছিল। কিন্তু এরপর যখন রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে নিয়োগ দেয়া হয় তখন থেকেই ব্যাংকটির আর্থিক অনিয়মের সূত্রপাত ঘটে। চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদের প্রত্যক্ষ মদদে বেসিক ব্যাংকে একে একে ঘটে যায় অনেকগুলো আর্থিক কেলেঙ্কারি। এই কেলেঙ্কারিতে আত্মসাৎ করা হয় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা।

যা ফেরত পাবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে এই চিত্র ফুটে উঠেছে। ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রধান কার্যালয়ের ঋণ যাচাই কমিটি বিরোধিতা করলেও বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সেই ঋণ অনুমোদন করেছে। ৪০টি দেশীয় তফসিলি ব্যাংকের কোনোটির ক্ষেত্রেই পর্ষদ কর্তৃক এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয় না। পর্ষদের ১১টি সভায় ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে ৩ হাজার ৪৯৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। যার অধিকাংশ ঋণই গুরুতর অনিয়ম সংঘটনের মাধ্যমে করা হয়েছে। এই ঋণ পরিশোধ বা আদায় হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেও মতামত দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

 


আরো সংবাদ



premium cement
শনিবার থেকে শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে’ পাওনা টাকা চাওয়ায় চা দোকানির হাত ঝলসে দেয়ার অভিযোগ হাসিনার বিবৃতিকে ভারত সমর্থন করে না : বিক্রম মিশ্রি ডুয়েটে কৃষি যন্ত্রপাতি প্রতিভা অন্বেষণে সেমিনার ও প্রদর্শনী মেলা শুক্রবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি চলাচল স্বাভাবিক মধ্যপ্রাচ্য সফরে যাচ্ছেন ব্লিঙ্কেন, যেসব বিষয়ে আলোচনা হবে ট্রাইব্যুনালে যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি কংগ্রেসে সমালোচকদের সম্মুখীন ব্লিংকেন সিরিয়ার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে রাশিয়া, সামরিক ঘাঁটির নিরাপত্তার ওপর জোর

সকল