১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ব্যাংকের নিরাপত্তায় যে ধরনের ব্যবস্থা রাখতে হয়

ব্যাংকের নিরাপত্তায় যে ধরনের ব্যবস্থা রাখতে হয় - ছবি : বিবিসি

বান্দরবানে দিনে দুপুরে ডাকাতির ঘটনায় ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে। দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের দু’টি এলাকার ব্যাংকে অস্ত্রধারীদের এ ধরনের হামলার ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন উঠছে নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাংকগুলোর নানা ধরনের ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলো কতটুকু পালন করা হচ্ছে?

নিয়ামানুযায়ী ব্যাংকের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কী কী পদক্ষেপ নিতে হয়? এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো গাইডলাইন রয়েছে কি না?

ব্যাংকগুলো বা সিকিউরিটি এজেন্সিগুলোর দায়ই বা কতখানি? এমন নানা ধরনের প্রশ্ন উঠে আসছে।

যেসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকতে হবে ব্যাংকে
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশিত গাইডলাইন রয়েছে।

সারাদেশের সব ব্যাংকগুলোকে ওই গাইডলাইন অনুসরণ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোতে দুই থেকে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকতে হবে।

এই স্তরগুলোর মধ্যে রয়েছে
১. বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা থাকতে হবে।

২. ব্যাংকের যে রুমে ভল্ট থাকে সেটিকে স্ট্রং রুম বলা হয়। এই রুম পুরোপুরি আরসিসি ঢালাই হতে হবে। সেটি ইটের হতে পারবে না।

যে ভল্টে টাকা রাখা হয় সেটির দরজা মোটা স্টিলের। এর দরজা হবে ফায়ার-প্রুফ এবং বুলেটপ্রুফ।

৩. ব্যাংকের ভল্টের তালা চাবির নিয়ন্ত্রণ তিনজনের কাছে থাকবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে। দ্বায়িত্বরত ব্যবস্থাপকের কাছে যে চাবিটি থাকবে তাকে‘কাভারিং কি’ বলে।

বাকি চাবি ব্যবস্থাপকের মনোনীত দু’জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কাছে থাকবে। এই দু’জন সাধারণত ভল্ট খোলা ও বন্ধের কাজে নিয়োজিত থাকেন।

এই তিন ব্যক্তির হাতেই শুধুমাত্র টাকা রাখার ভল্টের চাবির নিয়ন্ত্রণ থাকবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে।

যেকোনো একটি চাবি দিয়ে কোনোভাবেই এই ভল্ট খোলা যাবে না।

৪. বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, ব্যাংকের টাকার ভল্টে একটা অ্যালার্ম সিস্টেম থাকতে হবে।

অর্থাৎ ভল্টে এমন একটা ডিভাইস থাকবে যাতে ওই রুমে কোনো ব্যক্তি বা কোনো কিছু প্রবেশ করলে তাৎক্ষণিকভাবে অ্যালার্ম বেজে উঠে।

এর রিমোট সিস্টেমটি ব্যবস্থাপকের বাসায় অথবা তার ফোনে থাকবে। যাতে সাথে সাথে তিনি ভল্টে কোনো অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হয়েছে কি না তা জানতে বা বুঝতে পারেন।

অনেক সময় এই অ্যালার্ম স্থানীয় বা নিকটস্থ থানার সাথে সংযুক্ত থাকতে পারে।

৫. নিরাপত্তার জন্য ব্যাংকের প্রবেশ পথে নিরাপত্তা প্রহরী থাকবে। এসব প্রহরীরা বন্দুকধারী হতে হবে।

এসব বন্দুক সচল রয়েছে কি না বছরে একবার বা দু’বার তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

সারা দেশের তফসিলি ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর যত শাখা রয়েছে, সব শাখাতেই এসব নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।

২০০৮ সালের জানুয়ারিতে দেশের সবচেয়ে আলোচিত ব্যাংক লুটের ঘটনাটি ঘটে। ধানমণ্ডির শুক্রাবাদে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের এক শাখায় এ লুটের ঘটনায় তোলপাড় চলে দেশজুড়ে।

এরপরই ওই মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন ব্যাংকের নিরাপত্তা জোরদারে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে।

ওই বছর ৩১ জানুয়ারি দেয়া প্রজ্ঞাপনটিতে বলা হয়েছে, যে সব ব্যাংকের শাখায় লকার রয়েছে সেখানে পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

ব্যাংকাররা যা বলছেন
ব্যাংকাররা বলছেন, সাধারণত সরকারি ট্রেজারি বা সোনালী ব্যাংকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকেন।

কিন্তু অন্যান্য ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্বে আনসার সদস্য বা বেসরকারি বিভিন্ন সিকিউরিটি এজেন্সির সদস্যদের নিয়োগ করা হয়।

সোনালী ব্যাংকের সিইও আফজাল করিম বলেন, নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের যে নির্দেশনা রয়েছে তা প্রত্যেকটি ব্যাংকেই অনুসরণ করা হয়।

তিনি বলেন, ব্যাংকের ভল্টের দুটি চাবি থাকে। একটা চাবি সংশ্লিষ্ট শাখার ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে থাকে। আরেকটা চাবি ব্যাংকের জয়েন্ট কাস্টোডিয়ানের কাছে থাকে। যেকোনো একটা চাবি দিয়ে ভল্টের তালা খোলা সম্ভব না। এটি শতভাগ অনুসরণ করা হয়।’

সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা ভেদে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে, সিটি এরিয়াতে ব্যাংকের নিজস্ব নিরাপত্তা প্রহরী বা আনসারও মোতায়েন করা হয় বলে জানান তিনি।

তবে, নিরাপত্তার জন্য কতজন প্রহরী থাকবে তা এলাকা ভেদে নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া যে অ্যালার্ম থাকার কথা রয়েছে সেটিও বেশিরভাগ ব্রাঞ্চেই রয়েছে।

মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আমিন বলেন,‘নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব নির্দেশনা রয়েছে তা বেশিরভাগ ব্যাংকই অনুসরণ করে। ট্রেজারি বা ব্যাংকের বড় ব্রাঞ্চে সিকিউরিটি আরো স্ট্রংলি করা হয়।’

তিনি আরো বলেন,‘মফস্বল ব্রাঞ্চে এই নির্দেশনা পালন করে কি না তা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ টাকাকে সিকিউর করার জন্য এসব নির্দেশনাই যথেষ্ট।’

এদিকে, মঙ্গলবার ও বুধবার বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে তিনটি ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক এক সংবাদ সংম্মেলনে বলেন,‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে আমরা প্রতিনিয়তই যোগাযোগ রাখছি। তারা যে কার্যক্রমগুলো করছে আমরা সেটা সম্পর্কে অবগত আছি এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।’

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
ফেনীতে ভারতীয় আধিপত্যবাদ রুখতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি চৌগাছায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক নারী নিহত শিবচরে শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার ১১তম শাহাদাত বার্ষিকী পালন প্রাথমিকের শিক্ষকদের পদোন্নতির বিষয়ে যা বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ চট্টগ্রামে টিভি বিস্ফোরণে বসতঘর পুড়ে ছাই কুয়াকাটায় সাবেক মেয়রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন লক্ষ্মীপুরে যুবলীগের ২ নেতা গ্রেফতার বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে নিবন্ধন দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ নাতনিকে অপহরণে বাধা দেয়ায় নানিকে হত্যার অভিযোগ, আহত ২ ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে চীনা প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জয়কে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্রের মামলায় দণ্ডিত বিএনপি নেতা মিজানুরের জামিন

সকল