২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বন্ধ হওয়া ২৬টি পাটকলের জমি বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা

-

বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকলের জমি কোনোভাবে বিক্রি করা যাবে না। এসব জমি পাট সম্পর্কিত কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহারও করা যাবে না। বর্তমানে বন্ধ করে দেয়া এসব সরকারি পাটকলের উদ্বৃত্ত জমি রয়েছে ৭৫ একর।

বন্ধ ঘোষিত রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬ পাটকল ও বিজেএমসির অন্যান্য সম্পত্তির যথাযথ ব্যবহার বিষয়ে অনুসরণীয় কর্মপন্থা ও কর্মকৌশল সম্পর্কিত নীতিনির্ধারণী কমিটির প্রথম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি এই বৈঠকটি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জুম প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গাজি গোলাম দস্তগীর।

উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই থেকে এই পাটকলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

বৈঠকের কার্যপত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, বৈঠকে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- দ্রুততম সময়ে চালু করা সম্ভব এমন পাটকলগুলো চিহ্নিত করা; সরকারি মালিকানা ও স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে পিপিপি-যৌথ উদ্যোগে-জি টু জি বা ইজারার মাধ্যমে পাটকল চালু; দীর্ঘ মেয়াদে ইজারা প্রদান ও এ ক্ষেত্রে পাট খাত সংশ্লিষ্টদের অগ্রাধিকার দেয়া; মিলগুলো শুধু পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত রাখা; পাটচাষিদের পাটের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে গ্রহণীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে সুপারিশ প্রদান ইত্যাদি।

বৈঠকে অর্থ সচিব বলেন, কোনো অবস্থাতেই মিলের জমি বিক্রি করা যাবে না। ইজারার মেয়াদ বাড়ানো; মিলের মজুদ কাঁচামাল- তৈরি পণ্য- যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সম্পত্তির দ্রুত মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। মিলের বর্তমান যন্ত্রপাতি স্ক্র্যাপ ঘোষণা করা এবং মিল চালুর ক্ষেত্রে তরুণ ও কর্মক্ষম শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন।

বাণিজ্য সচিব বলেন, এসব ক্ষেত্রে তিন ক্যাটাগরি করা প্রয়োজন। এগুলো হলো- ইজারাযোগ্য, বিএমআরই যোগ্য, দীর্ঘমেয়াদি অংশীদার (পিপিপি)। এর মাধ্যমে বন্ধ পাটকলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ (বিডা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, এ ক্ষেত্রে জমির অবস্থান, যন্ত্রপাতির ধরন ও মান বিবেচনায় মিলগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।

বৈঠকে উল্লেখ করা হয়, পাটশিল্পে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর অবদান ৮.২৯ শতাংশ । পাটপণ্য রফতানিতে অবদান ৪.৪৫ শতাংশ । ৪৮ বছরের মধ্যে ৪৪ বছর লোকসান দিয়েছে বিজেএমসি।

জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প-কারখানার অ-ব্যবহৃত উদ্বৃত্ত জমি বিক্রি না-করার সিদ্ধান্ত এটাই প্রথম নয়। বর্তমানে বিলুপ্ত ‘বেসরকারীকরণ কমিশন’-এর উদ্যোগে ২০১৩-১৪ সালে গঠিত উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্সও সরকারকে একই পরামর্শ দিয়েছিল। শিল্পায়নের জন্য জমির সঙ্কট দূরীকরণ ও কৃষিজমি রক্ষায় রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প-কারখানার অব্যবহৃত উদ্বৃত্ত জমি বিক্রির পরিবর্তে লিজ বা ইজারা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিল টাস্কফোর্স এবং এ লক্ষ্যে একটি লিজ ডকুমেন্টও প্রণীত হয়েছিল। কিন্তু সেটি আর বেশি দূর অগ্রসর হয়নি।

পরবর্তীতে ২০১৭ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর প্রয়োজনীয় জমি ও অবকাঠামো অক্ষত রেখে উদ্বৃত্ত জমি প্লট আকারে দীর্ঘ মেয়াদে ইজারা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। তখন এসব জমিতে শুধুই পাটকল স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল।

এর আগে গত ১ জুলাই থেকে শ্রমিকদের শতভাগ পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকলের উৎপাদনকার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। ১ জুলাই থেকে বন্ধ করা এসব পাটকলের শ্রমিকদের পাওনা অর্থ এককালীন দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। তবে পাওনার অর্ধেক অর্থ তারা পাবেন নগদে। বাকি অর্থ পাবেন তিন মাসের মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। ২০১৫ সালের সর্বশেষ মজুরি কাঠামো অনুযায়ী প্রায় ২৫ হাজার পাটকল শ্রমিক অবসরকালীন সুবিধাসহ প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা পাবেন। এ পর্যন্ত এই পাটকলগুলোর পুঞ্জীভূত ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা।

জানা গেছে, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীন থাকা ২৬টি পাটকলের মধ্যে মনোয়ার জুট মিল ছাড়া সবগুলোতেই উৎপাদনে ছিল। এসব কারখানায় ২৪ হাজার ৮৬৬ জন স্থায়ী শ্রমিকের বাইরে তালিকাভুক্ত ও দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক ছিল প্রায় ২৬ হাজার। বেসরকারি খাতের পাটকলগুলো লাভ দেখাতে পারলেও বিজেএমসির আওতাধীন মিলগুলো বছরের পর বছর লোকসান করে যাচ্ছে, যার পেছনে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement