বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার দীর্ঘ মেয়াদে বেশি ঋণ নিচ্ছে। এতে জনগণের আমানতের অর্থ সরকারের কোষাগারে দীর্ঘ সময়ের জন্য আটকে যাচ্ছে। ফলে বেসরকারি খাতে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা যেমন আটকে যাচ্ছে, পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির হিসাবে ব্যাংকের মূলধন ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। আবার বাজেট ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ঋণনির্ভরশীলতা বেড়ে যাচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে ঋণ পরিচর্চা ব্যয়; অর্থাৎ সুদব্যয়ে জনগণের ঘাড়ে ঋণের বোঝাও বেড়ে যাচ্ছে।
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি অর্থায়নে দেশের ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ হাজার ৯৪ কোটি টাকা। আর স্বল্পমেয়াদি ১৯ হাজার ২৭০ কোটি টাকা; অর্থাৎ ব্যাংকব্যবস্থা থেকে প্রায় ৬০ শতাংশ দীর্ঘমেয়াদি এবং ৪০ শতাংশ স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ৮-৯ বছর আগেও ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার স্বল্প মেয়াদে বেশি ঋণ নিত। বলা চলে বেশির ভাগ ঋণই নেয়া হতো স্বল্প মেয়াদ অর্থাৎ ১ বছরের কম সময়ের জন্য। ২৮ দিন, ৬৪ দিন, ২৮০ দিন ও ৩৬৪ দিন মেয়াদের জন্য সরকার বেশি হারে ঋণ নিত। কিন্তু সরকারের এ ঋণ নেয়ার ধরন পাল্টায় ২০০৯ সাল থেকে। আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দোহাই দিয়ে সরকার স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিবর্তে বেশি হারে দীর্ঘমেয়াদি ৫ বছর, ১০ বছর, ১৫ বছর ও ২০ বছর মেয়াদি বেশি হারে ঋণ নিতে থাকে। বর্তমানে ২৮ দিন মেয়াদের ঋণ নেয়া বন্ধ রয়েছে। প্রসঙ্গত, ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার দু’টি পদ্ধতিতে ঋণ নেয়। এর মধ্যে একটি ট্রেজারি বিল ও অপরটি ট্রেজারি বন্ড। এক বছরের কম সময়ের জন্য ঋণকে ট্রেজারি বিল বলা হয়। আর এক বছরের বেশি সময়ের জন্য নেয়া ঋণ হলো ট্রেজারি বন্ড।
দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ নেয়ায় সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণের স্থিতি বাড়তে থাকে। এতে এক দিকে যেমন ব্যাংকের তহবিল দীর্ঘ মেয়াদে সরকারের কোষাগারে আটকে যাচ্ছে, পাশাপাশি বেসরকারি খাতে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। অন্য দিকে মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে পড়ে প্রকৃত অর্থে ব্যাংকের মূলধনও ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। কারণ ১০০ টাকা দিয়ে যে পণ্য আজ কেনা যাবে, ১০ বছর বা ২০ বছর পর ১০০ টাকায় ওই পণ্য অর্ধেকও কেনা যাবে না। এভাবেই ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে ব্যাংকের মূলধন।
ব্যাংকব্যবস্থা থেকে গত দুই বছরে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত অর্থবছরে (২০১৭-১৮) সরকার বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে দীর্ঘ মেয়াদে ৫৩ শতাংশ ও স্বল্প মেয়াদে ৪৭ শতাংশ ঋণ নেয়। চলতি অর্থবছরের (২০১৮-১৯) বাজেটে দীর্ঘ মেয়াদে ৫৭ শতাংশ ও স্বল্প মেয়াদে ৪৩ শতাংশ ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ৫৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৮ শতাংশ করা হয়েছে। বিপরীতক্রমে স্বল্প মেয়াদে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ৪৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩২ শতাংশ করা হয়েছে। এভাবেই দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ নেয়ার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটের বেশির ভাগ অর্থাৎ ৫১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকাই বরাদ্দ রাখা হয়েছিল সুদ পরিশোধের জন্য, যা কিনা অনুন্নয়ন বাজেটের একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশ। আর সামগ্রিক বাজেটের ১১ দশমিক ১ শতাংশ। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা ৪৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ছিল ৪৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। আর আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৫৭ হাজার ৭০ কোটি টাকা ঋণের সুদ পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে; যা অনুন্নয়ন বাজেটের ১০ দশমিক ৯ শতাংশ এবং একক খাত হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫২ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকরা জানান, দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা সরকার না কমালে একসময় বেসরকারি খাতে ঋণ কমে যাওয়ায় নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন কমে যাবে। ফলে কাক্সিক্ষত হারে কর্মসংস্থান বাড়বে না। বেড়ে যাবে বেকারত্বের হার; যা জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ কারণে বাজেট ঘাটতি কমিয়ে এনে বিকল্প অর্থের সংস্থান বাড়াতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা