২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস

আফ্রিকান ভ্যারিয়ান্টে আক্রান্তদের নতুন উপসর্গ, চিকিৎসায় চ্যালেঞ্জ

দেশে আফ্রিকান ভ্যারিয়ান্টে আক্রান্তদের নতুন উপসর্গ, চিকিৎসা চ্যালেঞ্জ - ফাইল ছবি

ঢাকায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান- আইসিডিডিআরবির এক গবেষণায় দেখা গেছে যে বাংলাদেশে শনাক্ত করোনাভাইরাসের ধরনগুলোর মধ্যে এখন ৮১ শতাংশই দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়ান্ট। এ ধরনটির আবির্ভাবে বাংলাদেশে ভাইরাস বিস্তারের ক্ষেত্রে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের শনাক্ত হওয়ার হার দ্রুত বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে শনাক্ত ও মৃত্যুর হার। এজন্যই ধারণা করা হচ্ছিল, সংক্রমণের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হয়তো হয়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়ান্টের মাধ্যমে যারা কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের সাথে আগে আক্রান্ত রোগীদের বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন কিছু বৈশিষ্ট্যও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

অবস্থার দ্রুত অবনতি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত সেবা দিচ্ছেন মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফজলে রাব্বী। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছেন, প্রথম দফার তুলনায় এবারে রোগীদের কারো কারো অবস্থার দ্রুত অবনতি হওয়ার একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অনেককে আক্রান্ত হওয়ার ছয়-সাত দিনের মধ্যেই উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। তাও আবার তুলনামূলক দীর্ঘ সময়। যেমন- ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে।

একই হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের কনসালটেন্ট সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন, করোনার চলতি ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীদের অবস্থা একটু খারাপ হলে তা দ্রুতই চূড়ান্ত খারাপ পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, আগে আইসিইউতে কোনো রোগী এলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে রিকভারি করে কেবিনে পাঠাতে পারতাম। কিন্তু এবার সেটি হচ্ছে না। এবার অনেক দীর্ঘ সময় লাগছে। আইসিইউ থেকে অনেকে আবার ফিরতেও পারছেন না। মূলত অনেকেরই ফুসফুস দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছে। রক্ত জমাট বাঁধছে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের মার্চের শুরুতে। তখন চিকিৎসরা এর উপসর্গ হিসেবে জ্বর, শুষ্ক কাশি, শরীর ব্যথার মতো উপসর্গের কথা জানিয়েছেন। এখন গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে করোভাইরাসের দু’টি নতুন ভ্যারিয়ান্ট ছড়িয়েছে। এর মধ্যে ইউকে ভ্যারিয়ান্ট শুরুতে শনাক্ত হলেও এখন সবচেয়ে বেশি প্রকোপ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রজাতিটির।

রোগীদের চিকিৎসার সাথে সরাসরি জড়িত চিকিৎসকরা বলছেন যে নতুন ভ্যারিয়ান্টে আক্রান্তদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের নতুন বৈশিষ্ট্যও দেখতে পাচ্ছেন তারা।

নতুন উপসর্গের পার্থক্য
ডা: ফজলে রাব্বী বলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে সেকেণ্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্যাটার্ন আগের তুলনায় অনেকটাই ভিন্ন। তিনি জানান, প্রথম ওয়েভের সময় আক্রান্তদের মধ্যে অনেককে সাত-আট দিন পার হওয়ার পর অক্সিজেন দিতে হয়েছিল। কিন্তু এবারে দিতে হচ্ছে আরো আগেই।

এ ছাড়া, এবারে আক্রান্তদের অনেকের মধ্যে স্নায়ুতন্ত্রের উপসর্গ আরো প্রকট দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে অনেকের প্রচণ্ড মাথা ব্যথা হচ্ছে। এবার নিউরোসাইক্রিয়াটিক সমস্যা, যেমন কারো কারো মধ্যে পাগলামি আচরণের প্রবণতা কিংবা ব্রেইন ইনফেকশনের মতো উপসর্গও দেখা যাচ্ছে।

অধ্যাপক ফজলে রাব্বী বলেন, হাসপাতালে এমন অনেক রোগী পেয়েছি, যাদের রক্তের অনুচক্রিকার সাথে হিমোগ্লোবিনও কমে যাচ্ছে। যদিও তাদের আগে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার রোগ বা রেকর্ড নেই। অথচ গত বছর প্রথম দফার সংক্রমণের সময় অনেকের রক্তের অনুচক্রিকা কমলেও তখন হিমোগ্লোবিনের সমস্যা আমরা রোগীদের মধ্যে পাইনি।

এসব নতুন ধরনের সমস্যার কারণে অবস্থার দ্রুত অবনতি হয়ে অনেককে খুব তাড়াতাড়ি আইসিইউতে নিতে হচ্ছে বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা।

চিকিৎসা ব্যবস্থার পার্থক্য
আইসিইউ বিভাগের কনসালটেন্ট ডা: সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আগে আইসোলেশনে থাকার সময় চিকিৎসাতেই সুস্থ হতো বেশিরভাগ রোগী। কিন্তু এখন ফুসফুস খুব দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অক্সিজেন লেভেলও আগের তুলনায় দ্রুত কমে যাচ্ছে। আগে রিকভারি হতে সময় লাগতো পাঁচ-ছয় দিন। এখন যাদের রিকভারি হচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রেও আরো বেশি সময় লাগছে।

ডা: সাজ্জাদ হোসেন আরো বলেন, আগে যাদের অক্সিজেন দরকার হতো, তাদের হয়তো দু’লিটার দিয়ে শুরু করে পর্যায়ক্রমে ৫/১০/১৫/২০ লিটার বা প্রয়োজনে হাই-ফ্লো নেজাল অক্সিজেন দেয়া হতো। অবস্থার অবনতি হলে কয়েকটি ধাপে চিকিৎসা দেয়ার পরে আরো অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হতো। কিন্তু এখন এতো সময়ই পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি আরো জানান, ভাইরাসটি থেকে সংক্রমিত হওয়ার ধরনেও পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন তারা। এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ভাষায়, ‘রেকর্ড নিতে গিয়ে দেখি, আগে হয়তো একজন থেকে একজন সংক্রমণই বেশি হতো। কিন্তু এবারে আক্রান্তরা তাদের কাছে থাকা তিন-চারজনকে একসাথে সংক্রমিত করছেন।’

এই চিকিৎসক বলেন, আইসিইউ থেকে চিকিৎসা দিয়ে আগে অনেক রোগীকে কয়েক দিনের মধ্যে বেডে ফেরত পাঠানো সম্ভব হতো। এখন রোগীর ফুসফুস সংক্রমণের পাশাপাশি রক্ত জমাট বেঁধে যাচ্ছে। ফলে রিকভারি কঠিন হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে আসা রোগীদের অবস্থা দেখে কোভিড চিকিৎসায় সরাসরি জড়িত এই দুই চিকিৎসক মনে করছেন যে এবারের ভ্যারিয়েন্ট খুব দ্রুতই রোগীদের অবস্থার অবনতি ঘটাচ্ছে। ফলে অনেক রোগীকে সুস্থ করে তোলা কঠিন হয়ে পড়ছে।

সূত্র : বিবিসি।


আরো সংবাদ



premium cement
মানিকগঞ্জে আগুনে পুড়ে যাওয়া মলিরানীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বরেকর্ড ইন্দোনেশিয়ার নারী ক্রিকেটার রোহমালিয়ার ‘এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব’ যদি বন্ধু হও, সীমান্তে অহরহ গুলি কেন : ভারতকে ফারুক সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূত হচ্ছে : সরকারকে দায়ী করে রিজভী মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে ২ ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ শ্রীলঙ্কাভিত্তিক এয়ারলাইন্স ফিটসএয়ারের ঢাকা-কলম্বো সরাসরি ফ্লাইট চালু রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসাথে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইলি হামলায় আহত শিশুর মুখে ২০০ সেলাই বিষখালীতে মৎস্য বিভাগের অভিযান : জেলে নিখোঁজ, আহত ২ দক্ষিণ এশিয়ার যে শহরগুলোর তাপমাত্রা এখন সর্বোচ্চ

সকল