০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ডেঙ্গুতে লড়াই করছেন চিকিৎসকরা

- ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স উজ্জল বড়ুয়া। কাজ করছেন ডেঙ্গু রোগীদের জন্য গঠন করা ডেঙ্গু সেলে। তিনি জানান, ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত তিনি সময় মতো বাসায় ফিরতে পারতেন। কিন্তু জুলাই থেকে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় ঠিক সময় এখন আর বাসায় ফিরতে পারছেন না। শুধু উজ্জল নন। তার মতো অন্যান্য নার্স, স্টাফ, চিকিৎসকদের অবস্থাও একই। একান্তু প্রয়োজন বা অসুস্থ্য না হলে কেউ ছুটিও পাচ্ছেন না।

উজ্জল বড়ুয়া বলেন, অতিরিক্ত কাজের চাপে আমি এখন ক্লান্ত। শেষ কবে বিশ্রাম নিয়েছি মনে নেই। এরমধ্যে আমার কয়েক সহকর্মী অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। ভয়ে আছি আমি না আবার অসুস্থ হয়ে পড়ি। তিনি বলেন, এতো কিছুর পরও যখন রোগী ও তার স্বজনরা বাজে আচরণ করে বা অবহেলার অভিযোগ দেয়, তখন মনে অনেক কষ্ট লাগে। কিন্তু সেগুলোকে চাপা দিয়েই আবারও নেমে পড়ি সেবায়। বাস্তবতা হলো, আমাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে। সেগুলোও বোঝা উচিত।

উজ্জল জানান, তারা রোগীদের নিয়মিত সেবা দিলেও সামান্য ত্রুটিতেই বকা-ঝকা শুনতে হয়। ডাক্তাররাও বকেন, রোগীরাও বকেন। আগের থেকে রোগী বেড়েছে চার গুণ। বারান্দাতেও ঠাঁই নেই। কিন্তু আমাদের কষ্ট কে বুঝবে?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. ইলিয়াস বলেন, প্রতিদিনি অসংখ্য রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। এখন আর তাদের কোনো নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা নেই। নেই পর্যাপ্ত বিশ্রাম। এর পরও কোনো রোগী ডাকলে যেতে একটু দেরি হলেই বাজে আচরণ করে। কর্তৃপক্ষকে বিচার দেয়। তারা আবার শোকজ করে। তবুও আবিরাম সেবা দিয়ে চলছেন তারা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কেএম নাছির উদ্দীন জানান, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য তারা আলাদা সেল গঠন করেছেন। নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকে সব ধরণের টেষ্ট ও মেডিসিন ফ্রিতে দিচ্ছেন তারা। তিনি জানান, প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাতে একান্ত প্রয়োজন হলে নবনির্মিত এক হাজার বেড়ের ভবনে ভর্তি নিবেন।

ডেঙ্গু চিকিৎসায় তাদের হাসপাতালের সবাই নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। প্রতিদিন মিটিং করছেন বলেও জানান তিনি।

চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার, নার্স কিংবা কর্মচারী কেউই এখন আর রাতের আগে বাসায় ফিরতে পারেন না। ডেঙ্গুর মৌসুম এখনো বাকি থাকায় তারা চিন্তিত। তাদের মতে, এভাবে পরিশ্রম করতে থাকলে অল্প দিনের মধ্যে প্রায় সবাই অসুস্থ হয়ে পড়বেন। তখন দেশের চিকিৎসাসেবায় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালই নয়, সরকারি-বেসরকারি সবকটি হাসপাতালেই চিকিৎসকরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বলা যায়, ডেঙ্গু মোকাবিলায় চিকিৎসক, নার্স এবং সংশ্লিষ্ট সবাই সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে লড়াই করছেন।

চিকিৎসক ও নার্সরা অনেক বেশি সময় দিচ্ছেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু আরও ভয়াবহরূপ নিতে পারে। সে পর্যন্ত চিকিৎসকরা কতটা সুস্থ থাকবেন তা-ও চিন্তার বিষয়। তাই ডেঙ্গু বিস্তার রোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা নেওয়া দরকার। নইলে চিকিৎসা সেবায় ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

দেখা যায়, সারা দেশে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু রোগীদের সামলাতে গিয়ে বেসামাল অবস্থা সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে। বিশেষ করে ঢাকার হাসপাতালগুলোর অবস্থা চরমে পৌঁছেছে। সরকারি হাসপাতালে চাহিদার তুলনায় ডাক্তারের সংখ্যা কম। কিন্তু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন। এতে বাড়তি সময় কাজ করতে হচ্ছে ডাক্তারদের। কোনো কোনো ডাক্তারকে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে দিনে ১৬ ঘণ্টার বেশিও সময় রোগী দেখতে হচ্ছে। অতিরিক্ত পরিশ্রমে এরমধ্যে অনেকেই অসুস্থ হয়েছেন বলে জানা গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছেন অনেকে। সংকট সমাধানে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।


আরো সংবাদ



premium cement