প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২১-২২ জুনের রাষ্ট্রীয় সফরসূচির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ভারতের
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২০ জুন ২০২৪, ২৩:৪১
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ২১-২২ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করবেন বলে বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রের খবর অনুযায়ী, অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের পর ভারতে সরকার গঠনের পর এটাই হবে প্রথম দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফর।
সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ছাড়াও দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদি মুর্মু ও উপরাষ্ট্রপতি জগদিপ ধনখড়ের সাথেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর।
গত ৯ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক নেতাদের সাথেও যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আগামী ২১-২২ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হবে। এছাড়া নতুন কিছু উদ্যোগের সাথে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বেশ কিছু দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই হতে পারে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
তারা বলেন, দুই দিনের এই রাষ্ট্রীয় সফরে ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতার কিছু নির্দেশনা থাকতে পারে।
১৫ দিনেরও কম সময়ের মধ্যে এটি হবে নয়া দিল্লিতে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় সফর।
মঙ্গলবার (১৮ জুন) এক জেষ্ঠ কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে সুনির্দিষ্টভাবে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে কোনো অগ্রগতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তবে বিষয়টি আলোচনায় থাকবে। বিস্তৃত তিস্তা উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক প্রকল্প নিয়ে সম্ভাব্য আলোচনা হবে।
এর আগে গত ৯ মে ভারত বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পে অর্থায়নের আগ্রহ প্রকাশ করে, যা 'তিস্তা রিভার কম্প্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টুরেশন প্রজেক্ট' নামে পরিচিত।
গত ৯ মে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার সাথে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, 'আপনারা জানেন, তিস্তা নিয়ে আমরা একটা বড় প্রজেক্ট নিয়েছি। এই প্রকল্পে অর্থায়ন করতে চায় ভারত। আমাদের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা আমাদের চাহিদা পূরণ দেখতে চাই।’
গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির নবায়ন করার বিষয় নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সম্প্রতি বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সইয়ের কথা রয়েছে এবং সহযোগিতার কিছু ক্ষেত্র নিয়ে কিছু ঘোষণা দেয়ার বিষয় রয়েছে।
সম্প্রতি এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ফাঁকে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'সম্পর্কের ধারাবাহিকতা থাকবে এবং আমরা আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু নতুন উদ্যোগ দেখার আশা করি।’
সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, নতুন ম্যান্ডেটের ধারাবাহিকতায় দুই প্রতিবেশী দেশে নতুন সরকার গঠিত হওয়ায় তারা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।
প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা আকাশচুম্বী উল্লেখ করে শুক্রবার তিনি বলেন, ‘২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আমরা যা রেখে এসেছি তা নিয়ে একটি স্টক-টেকিং হবে এবং আমরা আগামী পাঁচ বছরে সম্পর্ককে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত সফরকালে আগের আলোচনার কথা স্মরণ করে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন সম্পর্কিত অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি সম্পাদনের জন্য বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করেন, যেটির খসড়া ২০১১ সালে চূড়ান্ত করা হয়েছিল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আলোচ্যসূচির মধ্যে রয়েছে আন্তঃসীমান্ত যোগাযোগের উদ্যোগ, তিস্তা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতের বিনিয়োগ, মোংলা বন্দরের ব্যবস্থাপনা এবং বিদ্যুৎ বাণিজ্য।
এছাড়া একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি সম্পর্কে আলোচনারও আশা করা হচ্ছে।
গত এক দশক ধরে একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক অংশীদারিত্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অসংখ্য আন্তঃসীমান্ত উদ্যোগ চালু করা হয়েছে।
আগামী ২২ জুনের মোদি-হাসিনা শীর্ষ বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব বাড়ানোর বিষয়েও গুরুত্ব দেয়া হতে পারে।
হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ বলছে ভারত বন্ধুপ্রতিম দেশ। আর বাংলাদেশ ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ককে অন্য কারো সঙ্গে তুলনা করে না। ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত আমাদের পাশে ছিল। ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক বহুমুখী। ভারতের সাথে আমাদের সীমান্ত রয়েছে। আমরা একে অপরকে সমর্থন করি।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট শুক্রবার দুপুর ২টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবে।
ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় নয়া দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। বিমানবন্দরে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো: মোস্তাফিজুর রহমান প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন।
শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় (দিল্লি সময়) প্রধানমন্ত্রী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে নয়া দিল্লির পালাম বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন এবং রাত ৯টার দিকে ঢাকায় অবতরণ করবেন।
সূত্র : ইউএনবি