বাংলাদেশের জন্য সুযোগ ও সম্ভাবনা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:০০
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছয় দিনের সফরে বুধবার থাইল্যান্ড গেছেন। এ সফরে উভয় দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরুর জন্য একটি সম্মতিপত্র স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে।
মূলত বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার পাশাপাশি জ্বালানি, পর্যটন এবং নির্মাণ খাতে পারস্পারিক সহযোগিতার সুযোগ তৈরির ওপরেই বাংলাদেশের দিক থেকে জোর দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আগেই জানিয়েছেন যে শেখ হাসিনার এ সফরে দুই দেশের মধ্যে মোট পাঁচটি দলিল স্বাক্ষরিত হতে পারে। এগুলোর মধ্যে একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক ও একটি আগ্রহপত্র রয়েছে।
এছাড়া থাইল্যান্ড সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউএনএসকাপের অধিবেশনে যোগ দিবেন।
এই সফরে থাইল্যান্ডের সাথে অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতির বিষয়ে চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। চুক্তিটি হলে উভয় দেশের সরকারি কর্মকর্তারা ভিসামুক্ত ভ্রমণ সুবিধা পাবেন।
সোমবার এ সফর উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছিলেন, ‘এটি একটি দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সফর। এই সফরের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং আমদানি-রফতানি বৃদ্ধির জন্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পর্যালোচনার পাশাপাশি অন্য অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর প্রথম দিকেই স্বীকৃতি দানকারী দেশগুলোর একটি থাইল্যান্ড। যদিও এত বছরেও থাইল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্ভাবনার খুব একটা উন্মোচিত হয়নি বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।
থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত শাহেদ আখতার বলেছেন, উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বহুগুণ বৃদ্ধির সুযোগ আছে। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির দিতে অগ্রসর হতে পারলে বাণিজ্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্ভাবনা আরো উজ্জ্বল হবে বলে মনে করছেন তিনি।
আখতার বলেন,‘বাংলাদেশের জন্য থাইল্যান্ড খুবই সহযোগিতা পরায়ণ একটি দেশ। বাণিজ্য ছাড়াও সমুদ্রসীমার সমস্যা মিটে যাওয়ায় সমুদ্র কেন্দ্রিক অনেকগুলো খাতে থাই বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে বাংলাদেশের।’
সম্পর্ক এখন কোন পর্যায়ে, সম্ভাবনা কতটা
ব্যাংক অফ থাইল্যান্ডের হিসেবে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের বাণিজ্যের মধ্যে থাইল্যান্ড থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল মাত্র ১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার আর থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ ছিলো মাত্র ৯০ মিলিয়ন ডলার।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করেন, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির দিকে এগুনো সম্ভব হলে দু’দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
ব্যাংককে বাংলাদেশ দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ যেসব পণ্য থাইল্যান্ডে রফতানি করে তার মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের বস্ত্র, তৈরি পোশাক, প্রাণিজ পণ্য, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক উপকরণ ও মাছ।
অন্যদিকে থাইল্যান্ড থেকে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তার মধ্যে আছে কটন ও কটন ফেব্রিকস, শিল্প যন্ত্রপাতি, চিনি ও চিনি-জাত দ্রব্য, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীসহ আরো কিছু পণ্য।
দূতাবাস মনে করে, বাংলাদেশ থেকে থাই বাজারে রফতানির ক্ষেত্রে যেসব পণ্যের সম্ভাবনা বেশি তার মধ্যে আছে ওষুধ ও রাসায়নিক, রাসায়নিক পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ফ্রোজেন ফিশ, কাঁচাপাট ও পাটজাত দ্রব্য, নিটওয়্যার ও ওভেন গার্মেন্ট ও চায়ের মতো কিছু পণ্য।
সব মিলিয়ে জ্বালানি, পর্যটন ও শুল্ক ক্ষেত্রে পারস্পারিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।
সফর উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএর আলোচনা শুরুর মাধ্যমে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ছাড়াও বিনিয়োগ, পর্যটন, জ্বালানি, স্থল ও সমুদ্র যোগাযোগ নিয়ে এই সফরে বিস্তারিত আলোচনা হবে।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত শাহেদ আখতার বলছেন, জ্বালানি, পর্যটন ও সমুদ্র খাতে উভয় দেশের কাজ করা ও লাভবান হওয়ার দারুণ সুযোগ আছে বলে তিনি মনে করেন।
বিশেষত ফ্লাইওভার ও সুউচ্চ ভবন নির্মাণে বিশেষভাবে দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি সমুদ্রে গবেষণা, মৎস্য উৎপাদন বাড়ানো এবং বিশেষত সাগরে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে থাইল্যান্ডের সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশ উপকৃত হবে বলেই মনে করছেন তিনি।
আখতার বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে থাইল্যান্ড কিছু বিনিয়োগ করছে বাংলাদেশে। তবে এর পরিমাণ অনেক কম। ব্লু ইকোনমির নানা পর্যায়ে দেশটি প্রযুক্তি বিনিময় ও অভিজ্ঞতা দিয়ে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে। সাগরের ফিশারিজে ওরা অনেক এগিয়ে। বাংলাদেশ মাত্র শুরু করতে যাচ্ছে। আর মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরুর মানেই হলো বাণিজ্য সম্প্রসারণের সম্ভাবনা।’
এর বাইরে আসিয়ান জোটে থাইল্যান্ড খুবই প্রভাবশালী দেশ। বাংলাদেশ আগেও থাইল্যান্ড থেকে এ বিষয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে সহযোগিতা পেয়েছে। তাছাড়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার কার্যালয় থাকায় ব্যাংককের আলাদা গুরুত্ব আছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।
এছাড়া কূটনীতিকরা অনেকে মনে করেন রোহিঙ্গা ইস্যুতেও থাইল্যান্ডের সহযোগিতা চাওয়ার সুযোগ আছে বাংলাদেশে।
সোমবার সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ায় আরো সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য বাংলাদেশ আসিয়ানের সদস্য হিসেবে থাইল্যান্ডের প্রতি তাগিদ পুনর্ব্যক্ত করবে। যেহেতু থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার দুই দেশই আসিয়ানের সদস্যভুক্ত দেশ, তাই রোহিঙ্গা ইস্যুটি যথাযথ গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হবে’।
শাহেদ আখতারও বলছেন যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত অগ্রগতি আনতে থাইল্যান্ডের সহযোগিতা পাওয়ার সুযোগ আছে বাংলাদেশের জন্য।
অন্যদিকে বাংলাদেশের বৌদ্ধ ধর্মীয় স্থাপনাগুলোকে নিয়ে প্রচারণা এবং পর্যটন খাতে বিনিয়োগ ও যৌথ কার্যক্রম আশা করছে বাংলাদেশ এবং এ বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রীর সফরে আলোচনায় আসবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যা পর্যটক ছাড়াও চিকিৎসার জন্যও বহু বাংলাদেশী থাইল্যান্ডে যান। সাম্প্রতিককালে উভয় খাতে বাংলাদেশ থেকে ভ্রমণকারী অনেকে বেড়েছে।
সূত্র : বিবিসি