১৫ অক্টোবর ২০২৪, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

সীমান্তে প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহারে একমত ঢাকা-দিল্লি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ভারতের ভোটের পর তিস্তা নিয়ে আলোচনা এগিয়ে যাবে
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ - ছবি : ইউএনবি

সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে ‘প্রাণঘাতী নয়’ এমন অস্ত্র ব্যবহারে ঢাকা ও দিল্লি একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করা হলে সীমান্ত হত্যা হবে না বলে তিনি (ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী) আমার সাথে একমত হয়েছেন।’

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দিল্লি সফর বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

মন্ত্রী জানান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা ইস্যু, নিরাপত্তাসহ নানা বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ২০২৬ সালে গঙ্গা চুক্তি নবায়ন, তিস্তার পানিবণ্টন, জনগণের সাথে জনগণের যোগাযোগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধি, মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা ইস্যুসহ নানা সহযোগিতার ক্ষেত্র নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ভারতের নেতারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানব উন্নয়নের সব সূচকে আমাদের অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। একইসাথে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে আজ আমরা বিশ্বে পঞ্চম ও এশিয়া-ওশেনিয়া অঞ্চলে দ্বিতীয়। ভারতের নেতারা এ অগ্রগতির প্রশংসা করেছেন এবং একসাথে কাজের আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন।

সফরের প্রথম দিন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সাথে ও শেষ দিনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকর, রাজ্যসভার লিডার অব দ্য হাউস এবং বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযুষ গয়ালের সাথে বৈঠক হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

পাশাপাশি সফরের দ্বিতীয় দিন দিল্লির রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিবিজড়িত সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, নয়াদিল্লির বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের এক দশক’ শীর্ষক একক বক্তৃতা দান, প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া এবং ‘ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাব অব সাউথ এশিয়া’তে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

দিল্লি থেকে ঢাকায় ফেরার পথে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন আয়োজিত অভ্যর্থনায় উপস্থিত সুশীল সমাজ প্রতিনিধি, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও সাংবাদিকদের সাথে সংক্ষিপ্ত আলাপ হয়েছে বলে জানান ড. হাছান।

ভারতের রাষ্ট্রপতিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ
শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের রাষ্ট্রপতিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি। আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর কাজ চলছে।’

গত ৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম দ্বিপক্ষীয় তিন দিনের সফরে ভারতে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান। সেখান থেকে দেশে ফিরে সোমবার তার দফতরে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংলি এবং ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুয়েন্টসিলের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

রমজানের আগে ভারতকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ, ১ লাখ টন চিনি পাঠানোর অনুরোধ
রমজানের আগে ভারতকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ ও ১ লাখ টন চিনি পাঠানোর অনুরোধ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ৯ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে ভার‌তের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযুষ গয়ালের সাথে বৈঠকে রমজানের আগে ভারতকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ এবং ১ লাখ মেট্রিক টন চিনি রফতানি করতে অনুরোধ করেছি। ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী সেটা ভালোভাবে নিয়েছেন। এর আগে তারা ২০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ এবং ১০ হাজার মেট্রিক টন চিনি রফতানির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

ড. হাছান বলেন, আমরা অনেক ভোগ্যপণ্যের জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে, পেঁয়াজ, চিনি, ডাল ও কিছু মসলা জাতীয় পণ্য। ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি তাকে বলেছি, এসব ভোগ্যপণ্যে যেন বিশেষ কোটা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। যাতে আমরা তাদের থেকে এসব পণ্য সঠিক মূল্যে এবং আমাদের প্রয়োজনে আমদানি করতে পারি।

মিয়ানমার ইস্যুতে সরকার তথ্য গোপন করছে- বিএনপির এমন অভিযোগ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি তো বক্তব্য দিয়ে তাদের দলের অস্তিত্ব জানান দিতে চায়। এখানে মিয়ানমারের যতজন সদস্য আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে, সে বিষয়ে আমরা সব সময় গণমাধ্যমকে জানিয়েছি। এখানে লুকোচুরি করার প্রশ্নই আসে না। তাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করি, খুব শিগগিরই তাদের ফেরত পাঠাতে পারব।’

তিনি বলেন, বিএনপি এসব বক্তব্য ও নানা কর্মসূচি দিয়ে তাদের হতাশা কাটানোর চেষ্টা করছে। আমরা চাই তারা গণতান্ত্রিক কর্মসূচির মধ্যে থাকবে। সরকারের প্রতিবাদ তারা করতেই পারে। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে তাদের অগ্নিসন্ত্রাস আর করতে দেয়া হবে না।

নাফ নদীর তীরে অনেক রোহিঙ্গারা অপেক্ষা করছে, তাদের জন্য বর্ডার খুলে দেয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন রেখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের দেশে রোহিঙ্গা আছে ১.২ মিলিয়ন। এখন রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে। যেমন পরিবেশগত সমস্যা, নিরাপত্তাজনিত সমস্যা, মাদকজনিত সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের পক্ষে কি আরো রোহিঙ্গা আশ্রয় দেয়া সম্ভব? আর মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিয়েই সংঘাত চলছে তা নয়। তাদের মধ্যে নানা জাতিগোষ্ঠী আছে। তাদের মধ্যে নানা সমস্যা চলছে। সেই সংঘাতের উত্তাপের কারণে আমাদের দেশে আমরা নানা ধরনের সমস্যায় পড়ব সেটি কি সঙ্গত?’

মিয়ানমার ইস্যুতে ভারত সফরে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে এখন যে সংঘাত চলছে সেই সংঘাতের কারণে আমাদের অঞ্চলে যে সংকট তৈরি হয়েছে, নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়েছে সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে যেসব রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করা হয়েছে, তাদের নাগরিক অধিকার দিয়ে সেখানে ফেরত নেয়ার বিষয়ে ভারতের সহায়তা কামনা করেছি।

মিয়ানমার ইস্যুতে ভারত-বাংলাদেশ কিভাবে একসাথে কাজ করবে- এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা তাদের সাথে বর্ডার শেয়ার করি। সুতরাং মিয়ানমারে যদি কোনো পরিস্থিতির উদ্বেগ ঘটে তাহলে সেটি আমাদের দেশকে যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা উদ্বিগ্ন করে তাদেরও উদ্বিগ্ন করে। সুতরাং দুই দেশেরই যেহেতু উদ্বেগ প্রতিবেশীকে নিয়ে তাই আমাদের একসাথে কাজ করার অনেক বিষয় তো রয়েছে।

সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement