১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
নোবেলজয়ীদের কথা-দুই.

রোমান ইতিহাসে বিপ্লব ঘটিয়েছেন থিওডর মোমসেন

থিওডর মোমসেন। নোবেল পুরস্কারের দ্বিতীয় বছরেই (১৯০২ সালে) সাহিত্যে নোবেল জয় করেন তিনি -

থিওডর মোমসেন (ঞযবড়ফড়ৎ গড়সসংবহ) একজন প্রাণবন্ত ও শক্তিশালী লেখক। নোবেল পুরস্কার চালুর দ্বিতীয় বছরে (১৯০২ সালে) তিনি সাহিত্যে নোবেল জয় করেন। রোমান ইতিহাসের জন্য এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। ৯ শতাধিক বিষয়ে তার লেখা রোমান ইতিহাসে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
বার্লিন একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত রোমান শিলালিপির বিশাল সংগ্রহ কর্পাস ইনক্রিপশনাম ল্যাটিনারামের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন থিওডর মোমসেন। এই কাজটি রোমান সরকার, প্রশাসন, অর্থনীতি এবং অর্থের একটি পদ্ধতিগত অধ্যয়নের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। প্রতœতত্ত্ব, মুদ্রাবিদ্যা, এপিগ্রাফি ইত্যাদিতেও তার প্রচণ্ড দখল ছিল।
থিওডর মোমসেন কর্মজীবনে আইনের অধ্যাপক ছিলেন। কিছু দিন প্রশাসনিক কাজও করেছেন। ফ্রান্স এবং ইতালিতে কয়েক বছর সাংবাদিকতাও করেছেন। তবে ‘হিস্টরিয়ান অব রোম’ নামেই খ্যাতি লাভ করেছিলেন। বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত ‘রোমান ইতিহাস’ তাকে সমগ্র ইউরোপে ব্যাপকভাবে পরিচিত ও গৌরবান্বিত করেছে।
ঐতিহাসিক মোমসেন রোম সম্পর্কে প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব। দেশটির সামাজিক অবকাঠামো ও রাজনৈতিক ভিত্তি সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের অধিকারী এবং আইনবিষয়ক পণ্ডিত ছিলেন। আইনের সবচেয়ে জটিল ক্ষেত্রগুলোর সাথে ক্রমাগত পরিবর্তনশীল প্রবিধানগুলোর বিষয়েও ছিলেন ওয়াকিবহাল। তাই ঊনবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ শাস্ত্রীয় ইতিহাসবিদ হিসেবে সম্মানীত হয়েছেন।
রোমে এখনো ধরে নেয়া হয় যে, রোমান আইন যে জানে না, সে রোমান ইতিহাস জানে না। আর এ কারণেই ঐতিহাসিক মোমসেন শতাব্দীকাল পরে রোমে এখনো অবশ্য পাঠ্য। মোমসেনের কাজের শক্তি এত টেকসই যে, তার ‘রোমান পাবলিক ল’(১৮৭৪-৮৮) কে ‘রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উপর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক গ্রন্থ’ বলা হয়ে থাকে।
এই ইতিহাসবিদকে আজও মনে রাখার কারণ হচ্ছে, তার কাজ সর্বত্র প্রামাণিক। এক শ’ বছর আগে তিনি যা করে গেছেন, এখনো কেউ তা ডিঙ্গাতে পারেনি। উল্টে দিতেও সফল হয়নি।

থিওডর মোমসেন ১৮১৭ সালে ৩০ নভেম্বর উত্তর জার্মানির শ্লেসউইগ-হলস্টেইনের হার্ডিংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। একজন প্রোটেস্ট্যান্ট মন্ত্রীর পুত্র ছিলেন। তার কৈশোর ও ছাত্রজীবন কাটে তৎকালীন ডেনমার্কের হলস্টেইন শহরে। অ্যাটনের খ্রিস্টানিয়াম ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি মর্যাদাপূর্ণ কিয়েলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন এবং ক্লাসিক অধ্যয়ন করেছেন।
পণ্ডিত বাবা-মা’র ঘরে জন্ম নেয়া থিওডর মোমসেন ছেলে বেলায় পারিবারিক পরিবেশে গ্রিক, জার্মান, ফরাসি এবং ইংরেজি ভাষা শিখেছিলেন। প্রচণ্ড সাহিত্যানুরাগী ছিলেন তার বাবা। স্কুলের ছাত্র অবস্থায়ই বাবার সংগ্রহ থেকে শেক্সপিয়ার, ভিক্টর হুগো, লর্ড বায়রন প্রমুখের সাহিত্যগ্রন্থ পড়েছেন তিনি। বিশাল এই সাহিত্য ভাণ্ডার থেকে অনেক কিছু জার্মান ভাষায় অনুবাদও করেছেন।
আইনের অধ্যাপক হয়েও রোমের সমৃদ্ধ ইতিহাস রচনা করেছেন মোমসেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে সরকারী বৃত্তি দিয়ে তিন বছরের জন্য ইতালিতে পাঠিয়েছিল। ১৮৪৪ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত ইতালিতে থাকাবস্থায় তিনি প্রাচীন এবং আধুনিক ইটালিক বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। সেখানে অনেক বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সাথে মিলিত হয়েছেন। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এবং জনপ্রিয় কবিদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।
১৮৪৮-৪৯ সালের বিপ্লবে থিওডর মোমসেন সামনের কাতারে ছিলেন। তার প্রধান কাজ ‘রোমের ইতিহাস’ সে বিপ্লবের দৃষ্টিভঙ্গিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। রোমান মুদ্রা এবং রোমান সাংবিধানিক ও ফৌজদারি আইনের ওপর মোমসেনের বই ক্লাসিক গ্রন্থ হিসেবেই বিবেচিত। প্রাচীন রোমান শিলালিপি ও মুদ্রাসংশ্লিষ্ট প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করে তিনি ১৬ খণ্ডের বই লিখেছেন। প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৮৩৩ সালে। আর ১৬তম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৮৬৩ সালে।

থিওডর মোমসেন ‘রোমের ইতিহাস’ রচনা করেন ১৮৫৪ সালে। এতে ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ অব্দ থেকে শুরু করে দিগি¦জয়ী বীর জুলিয়াস সিজার কর্তৃক উত্তর আফ্রিকার সেনেট সৈন্যদের পরাজয় পর্যন্ত সমগ্র রোমের ইতিহাস বৃত্তান্ত। ১৮৫৪ সালে তিনি আবার জার্মানিতে ফিরে আসেন এবং প্রুশিয়ার ব্রাস্ল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। এ সময়ই তিনি সেখানকার এক পুস্তক ব্যবসায়ীর কন্যা মেরী রেইমারকে বিয়ে করেন।
১৮৫৮ সালে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রোমান ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপকের পদে যোগ দেন মোমসেন। কর্মজীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি এই পদে বহাল ছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করার সময় তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি জার্মানির প্রগতিশীল দলের সমর্থনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। ১৮৬৩-১৮৬৬ এবং ১৮৭৩-১৮৭৯ সাল পর্যন্ত প্রুশিয়ার সংসদের সদস্য ছিলেন।
১৮৭০ সালে সেডানে প্রুশিয়ার সাথে যুদ্ধে ফ্রান্স পরাজিত হয়। ১৮৭১ সালে ফ্রাঙ্কফুর্টে সম্পাদিত এক অপমানজনক চুক্তিতে ফ্রান্স স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। এতে জার্মানির প্রকৃত ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ঐক্যের নির্মাতা ছিলেন অটো ফন বিসমার্ক। এই ঐক্যের পর মম্জেন জার্মান সাম্রাজ্যিক সংসদের সদস্য হন। তখন তিনি বিসমার্কের অভ্যন্তরীণ রীতি-নীতির তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। এ কারণে তাকে কারাগারে অন্তরীণ থাকতে হয়েছিল।

তারপর লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন। জুরিখ এবং ব্রেসলাউ বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক পদে ছিলেন অনেক দিন। অবশেষে ১৮৫৮ বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচীন ইতিহাসের চেয়ারে নিযুক্ত হন। ১৮৭৪ সালে তিনি বার্লিন একাডেমি অব সায়েন্সেসের স্থায়ী সচিব হিসাবে মর্যাদাপূর্ণ নিয়োগ পান। ১৯০৩ সালে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দিয়ে তার ক্যারিয়ারের মুকুট পরিয়ে দেয়া হয়। এভাবে রোমান ইতিহাসে বিপ্লব সাধন করে নোবেলজয়ী থিওডর মোমসেন ১৯০৩ সালে ১ নভেম্বর বার্লিনের শার্লটেনবার্গে মারা যান।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর চিকিৎসা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। সুইডেনের বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নামে এটি চালু হয়েছে। তিনি ছিলেন সুইডিশ শিল্পপতি এবং ডিনামাইটের উদ্ভাবক। তার মৃত্যুর পাঁচ বছর পর ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার চালু হয়েছে। ১৮৯৬ সালের ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেল মারা যান। সেজন্য এই তারিখেই বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। ৫টি শাখার প্রতিটি পুরস্কারের মূল্য ৯ লাখ মার্কিন ডলার। এ ছাড়া একটি সনদ ও একটি স্বর্ণপদক দেয়া হয়।
বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার মানুষ নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়ে থাকেন। নোবেলের উইল মতে, পুরস্কারগুলো তাদেরই দেয়া উচিত, যারা পূর্ববর্তী বছরে মানবজাতির জন্য সর্বাধিক সুবিধা প্রদান করেন। মানবজাতির মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের জন্য সবচেয়ে সেরা কাজ করে থাকেন।


আরো সংবাদ



premium cement
মহাদেবপুরে যুবকের লাশ উদ্ধার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম মুখ্য সংগঠকসহ ৩ নেতাকে মারধর সিরিয়ায় ইসরাইলের অবৈধ আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ১২ বছর পর দামেস্কে আবার কার্যক্রম শুরু করল তুর্কি দূতাবাস দেশের মানুষকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আমরাই যথেষ্ট : আসাদুজ্জামান রিপন জনগণের অধিকার রক্ষায় বিএনপি ঐক্যবদ্ধ : খন্দকার মুক্তাদির সব ধরনের ক্রিকেটে নিষিদ্ধ সাকিবের বোলিং ফেনীতে গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তা বিজয় দিবস উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূতের সাথে মঈন খানের বৈঠক দেশকে উন্নত ও শক্তিশালী করতে আমরা বদ্ধপরিকর : প্রধান উপদেষ্টা

সকল