আহা স্বপ্ন আহা জীবন
- রেজাউল করিম খোকন
- ১৭ মে ২০২৪, ০০:০৫
একটি মাত্র লাশ এসেছে আজ। সেটা বাইশ বছর বয়সী একজন তরুণীর। এরকম লাশ প্রায় প্রতিদিন আসে বিভিন্ন দেশ থেকে। এটা কোনো নতুন ঘটনা নয়। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমাবন্দরে পোস্টিং হওয়ার পর থেকে রোজই এ রকম এক বা একাধিক মরদেহ নিয়ে জামিলকে ছুটোছুটি করতে হয়। বিদেশে চাকরি নিয়ে গিয়ে একসময় লাশ হয়ে ফিরে আসাদের নানা তথ্য সংগ্রহ করতে হয় তাকে। একটি এনজিওর পক্ষ থেকে এ কাজের জন্য তাকে রাখা হয়েছে এখানে। বিদেশে কাজ করতে গিয়ে স্বাভাবিক-অস্বাভাবিক দু’ভাবেই মারা যায় লোকজন। কখন, কেন, কীভাবে মারা গেল, মৃতদেহের সাথে থাকা কাগজপত্র ঘেঁটে এবং মৃতদেহ নিতে আসা আত্মীয়স্বজন আপনজনদের সঙ্গে কথা বলে এ সম্পর্কে যতটা জানা সম্ভব হয় তার আপ্রাণ চেষ্টা করে জামিল। আজ একটি লাশ এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই শহর থেকে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের জমকালো, আনন্দ-বিনোদন, বিলাসবহুল জীবনযাপন, অফুরন্ত ব্যবসায়-বাণিজ্য, অর্থ-বিত্ত-সম্পদের আশ্চর্য এক সম্মিলন বলা যায় দুবাই শহরকে। সাথে থাকা কাগজপত্র অনুযায়ী মেয়েটির বয়স ২২ বছর। খবর পেয়ে লাশ বুঝে নিতে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে তার বাবা বশিরুদ্দি এসেছে। সাথে গ্রামের আরো দু’জন এসেছে। কন্যা হারানো পিতা বশির চুপচাপ বিষণœ মুখে বসে আছে। সরকারি কর্মকর্তারাও এসে গেছেন। তাদের তত্ত্বাবধানে দুবাই শহর থেকে লাশটি এসেছে। বিমানবন্দরে স্বজনের হাতে লাশ বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্বও তাদের। বিভিন্ন নথিপত্রে সই স্বাক্ষর করতে হয়েছে বশিরকে। যদিও তার আগে কফিনের একটি অংশ সরিয়ে মেয়ের মরামুখো দেখানো হয়েছে তাকে। বাবা যে লাশটি গ্রহণ করতে এসেছে, সেটা যে তার মেয়ের, নিশ্চিত হয়েই সই স্বাক্ষর করেছে শোকাহত মানুষটি। তরতাজা প্রাণবন্ত হাসিখুশি যে মেয়েটি বাড়ি এবং গ্রামের আশপাশের পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে মাতিয়ে রাখত, সে এখন নিথর হয়ে শুয়ে আছে কফিনের বাক্সে।
বেশ ভালোভাবেই কাঠের তৈরি কফিন বাক্সটি। অনেক মজবুত। বেশ যতœ নিয়ে দামি কাঠের তৈরি। মৃতদেহটি যাতে এই কফিনের মধ্যে সুরক্ষিত এবং অবিকৃত থাকে তার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিমানের মধ্যেও অনেক কম তাপমাত্রায় কফিনের বাক্সটি রাখা হয়েছিল। তার আগে দুবাইয়ের হাসপাতালেও মর্গের হিমঘরে রাখা ছিল মরদেহটি। যদিও এখন কফিনের বাক্সটি দেশের প্রধান বিমানবন্দরে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা হয়েছে। বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা সারতে যতটুকু সময় লাগে, তা দ্রুত শেষ করার চেষ্টা থাকলেও নানা কারণে কিছুটা দেরি হচ্ছে। গরমকাল বলে কফিনের গায়ে বিন্দু বিন্দু শিশির মতো পানি জমতে শুরু করেছে ইতোমধ্যেই। এভাবে খুব বেশি সময় ধরে রাখলে কফিনের ভেতর শুয়ে থাকা মৃতদেহটি ক্রমেই বদলাতে শুরু করবে। এ রকম নিটোল, সুন্দর, অবিকৃত রাখা সম্ভব হবে না। পচন ধরে তা গন্ধ ছড়াতে শুরু করবে।
বশির কফিনের মধ্যে শুয়ে থাকা কন্যার মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল দীর্ঘক্ষণ। এখন পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে মেয়েটি। তার মধ্যে কোনো দুঃখ-বেদনা, উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা নেই। দেশে ফিরে আসার আকুতি কিংবা আকাক্সক্ষা নেই। কোনো পাশবিক নির্মম নির্যাতনের আতঙ্ক, ভয়, শঙ্কা নেই। নিজের সর্বস্ব হারানোর হাহাকার, হতাশা কিংবা কষ্ট নেই। কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ কিংবা নালিশ নেই। মৃত কন্যার মুখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না বাবা বশিরুদ্দিন। উপস্থিত কর্মকর্তাদের সামনে দাঁড়িয়ে শুধু দুই বার উচ্চারণ করেছে, ‘স্যার, এইডা আমার মেয়ে সোহাগী। স্যার, আমার মেয়ে সোহাগীরে আর আটকাইয়া রাইখেন না। দয়া কইরা আমারে দিয়া দেন। আমি মাইয়াডারে বাড়িত লইয়া যাই, বলে হাউমাউ করে কাঁদতে গিয়েও হঠাৎ চুপ হয়ে গেছে। বুকের মধ্যে জেগে ওঠা অনেক কষ্টটাকে পাথর চাপা দিয়ে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করেছে। এখানে বিমানবন্দরে আশপাশে অনেক লোকজনের আনাগোনা, চলাফেরা। এ জায়গায় হাউমাউ করে কান্নাকাটি, আর্তনাদ করলে কৌতূহলী হয়ে আশপাশের লোকজন ভিড় করবে, কত কিছু জানতে চাইবে। নানা ধরনের প্রশ্ন করবে। সেসব প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বাবা হয়ে বশির কী বলবে? সে কীভাবে বলবে, সংসারের সবার ভাগ্য পরিবর্তন করতে অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে যাওয়া আপন কন্যাটির দুর্ভাগ্যের শিকার হওয়ার নানা কাহিনী। এ নিয়ে লোকজন উল্টেপাল্টা, নানা মন্তব্য করবে। করাটাই স্বাভাবিক। হয়তো কেউ কেউ মুখের ওপর বলে দেবে, ‘সোমত্ত বয়সের মাইয়াডারে কেন বিদেশ বিভূঁইয়ে পাঠাইলেন আপনি, যেখানে নানা বদনাম আছে। ওইখানে এক কাজের কথা কইয়া মাইয়াগো নিয়া অন্য কামে লাগায়, যেখানে ইজ্জত সম্মানের কোনো দাম নাই, সব জাইন্যা-শুইন্যা সেই জাহান্নামে কেন পাঠাইলেন নিজের মাইয়ারে?
এখন নিজেকে সবচেয়ে বড় অপরাধী মনে হয় তার। বশিরের কেবলই মনে হয়, নিজের হাতে ধরে আপন কন্যাটিকে হত্যা করেছে সে। টাকা উপার্জনের জন্য সোহাগীকে দুবাই পাঠিয়েছিল। একই গ্রামের শায়লা-নায়লা দুই বোনের মিষ্টি কথার ফাঁদে পা দিয়ে চরম সর্বনাশ ডেকে এনেছে। মেয়েটিকে এত টাকা খরচ করে বিদেশে পাঠানোর আগে আশপাশের মানুষজন, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনদের বুদ্ধি পরামর্শ না নিয়ে চরম ভুল করেছে সে। এখন উপলব্ধি করছে প্রতি মুহূর্তে। নিজের একার বুদ্ধিতে কাজ করতে গিয়ে এতোটা ক্ষতি হয়ে যাবে, ভাবতে পারেনি। নিজেকে একটা চাবুক দিয়ে আঘাতের পর আঘাত করে ক্ষত-বিক্ষত, রক্তাক্ত করলেও তার অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি হবে না, বশিরের মনে হতে থাকে।
জামিল বশিরুদ্দির কাছে জানতে চায়, আচ্ছা আপনি আপনার মেয়ের মৃত্যুটা স্বাভাবিকভাবে মেনে নেবেন? এর বিচার চাইবেন না, যারা আপনার মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী, তাদের শাস্তি দাবি করবেন না?
জামিলের প্রশ্নগুলো শুনে সাথে সাথে কিছু বলতে পারে না বশির। বেশ কিছুক্ষণ নীরবে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার দু’চোখ বেয়ে ঝরঝর করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না অশ্রুধারা।
‘আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী, স্যার। আমিই নিজ হাতে তার মৃত্যু ডাইক্যা আনছি। এইভাবে কোনো কিছু যাচাই না কইরা, কোনো খবর-টবর না লইয়া তাগো কথায় বিশ্বাস কইরা মাইয়াডারে তুইল্যা দিছিলাম তাগো হাতে। এজন্য আমিই দায়ী। আমার বিচার হওয়া দরকার সবার আগে’, কথাগুলো বলতে বলতে তার গলাটা ধরে আসে। বুকফাটা আর্তনাদে আকাশ-বাতাস সব কিছু কাঁপিয়ে তুলতে মন চাইলেও আশ্চর্যজনকভাবে নিজেকে দমন করে সে। অনেক কষ্ট হলেও কান্নাটাকে থামিয়ে রাখে। তার বুকের ভেতরটাতে তুমুল তোলপাড় চলছে। কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে পারছে না।
‘আমি এখন কার কাছে বিচার চামু। কে করব এর বিচার? তারা তো রিপোর্ট লেইখ্যা দিচ্ছে, উপর থিকা পইড়া আমার মাইয়া মারা গেছে। কেউ তারে মারে নাই। আমি বিশ্বাস করি না তাগো কথা। মাইয়াডা মরণের আগে কয়েকবার ফোনে জানাইছিল অনেক কথা। কিছুই করতে পারি নাই আমরা এইখান থিকা। পরানডা কেমন করত। কিন্তু কিছু করতে পারতাম না...
সন্তানহারা পিতার আর্তনাদ বিমানবন্দরের হাজার মানুষের কোলাহলে হারিয়ে যায়। হাজার হাজার মাইল দূরে কন্যার অসহায় অবস্থার কথা জেনেও কিছুই করতে পারেনি বশির। সহ্য করতে না পেরে সোহাগী তার সম্ভ্রম হারানোর কথা, তার ওপর ক্রমাগত যৌন নির্যাতন চালানোর কথা নিজের বাবা-মাকে জানিয়েছিল। হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চাকরির মিথ্যে কথা বলে দুবাই শহরে নিয়ে শায়লা-নায়লা সেখানকার এক নারী ব্যবসায়ীর কাছে তাকে বিক্রি করে দিয়েছে। ভয়ঙ্কর নির্মম নিষ্ঠুর স্বভাবের মানুষটি বিভিন্ন দেশ থেকে আসা কম বয়সী মেয়েদের কিনে খারাপ কাজে লাগায়। বাইরে থেকে বাসাবাড়ির মতো দেখতে হলেও সেখানে চলে নানা খারাপ কর্মকাণ্ড। সোহাগী তাদের কথামতো কাজ করতে রাজি না হওয়ায় তার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়েছে অনেকবার। শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্ত ঝরেছে অনেকবার। তাকে রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত করেও মিসরীয় মালিক লোকটি শান্ত বা নিবৃত্ত হয়নি। নানা কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে। মানুষ মানুষের ওপর এত নির্মমতা চালাতে পারে- জানা ছিল না সোহাগীর। সেই নরক থেকে তাকে রক্ষার জন্য বেশ কয়েকবার বাবা-মায়ের কাছে আকুতি জানিয়েছে সে। কিন্তু তার জন্য কিছু করতে পারেনি তারা। নিজের কন্যার জন্য কিছু করতে না পারার অক্ষমতা নিয়ে তারা শুধু অসহায়ত্বের যন্ত্রণা অনুভব করেছে।
শায়লা-নায়লার সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে জানার এবং এর একটা বিহিত করার অনেক চেষ্টা করেছে বশির। কিন্তু তাদের নাগাল পাওয়া তো অসম্ভব ব্যাপার। গ্রামের সাধারণ একজন ভ্যানচালকের পক্ষে সেটা সম্ভব হয়নি। অগত্যা গ্রামের চেয়ারম্যান, মেম্বর এবং থানার শরণাপন্ন হয়ে অভিযোগ জানিয়েছে। তাদের প্রতারণার শিকার হয়ে বিদেশের মাটিতে চরম অসহায়ত্ব ও দুর্ভোগ আর নির্মম নির্যাতনের কারণে তাদের কন্যার জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠার কথা খুলে বলেছে। এক পর্যায়ে তাদের অভিযোগ শুনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নড়েচড়ে বসেছে। অবস্থা বেগতিক দেখে বড় বোন শায়লা তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মোকাবেলা করতে দেশে ফিরে এলে সবার চাপে পড়ে অবশেষে স্বীকার করেছে, সোহাগীকে হাসপাতালের চাকরির কথা বলে দুবাই শহরে নিয়ে গেলেও অনেক টাকার বিনিময়ে একজন মিসরীয় নারী ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। তার স্বীকারোক্তির পর পুলিশ শায়লাকে আটক করে জেলে পাঠিয়েছে। এভাবে কয়েক মাস কেটে যাওয়ার পর হঠাৎ একদিন দুবাই থেকে একজন অপরিচিত মানুষ বশিরকে ফোন করে জানায়, সোহাগী মারা গেছে। জোর করে খারাপ কাজে বাধ্য করা হয়েছিল মেয়েটিকে। ক্রমাগত নির্যাতনের শিকার হতে হতে সে মৃত্যুবরণ করেছে। তার মরদেহ দুবাই জেনারেল হাসপাতালে রয়েছে। অজ্ঞাত একজনের ফোনে কন্যার মৃত্যু সংবাদ শোনার পর শুরুতে বিশ্বাস করেনি বশির কিংবা তার স্ত্রী সমিরণ। ভেবেছে, দেশে শায়লাকে পুলিশ আটক করায় দুবাই শহরে আত্মগোপনে থাকা তার ছোটবোন নায়লা ভয় দেখাতে এমন একটি খবর ছড়িয়েছে।
কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে দুবাই বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে একজন কর্মকর্তা সেখানকার হাসপাতালের বরাত দিয়ে বশিরকে জানায়, তার মেয়ে তিনতলা ভবনের ছাদ থেকে নিচে পড়ে গিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। তারপর থেকে সত্যি সত্যি ভেঙে পড়ে বাবা-মা দু’জন। মিথ্যে চাকরির কথা বলে দুবাই শহরে নিয়ে নারী পাচারকারী সিন্ডিকেটের দুই বোন শায়লা ও নায়লার বিরুদ্ধে মানব পাচার ও খুনের অভিযোগ এনে নালিশী মামলা করা হয়েছে মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে।
কিছুক্ষণ আগে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িটা ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দির উদ্দেশে ছেড়েছে। সামনে ড্রাইভারের পাশের সিটে একাই বসেছে বশিরুদ্দিন। গ্রাম থেকে যে দু’জন সাথে এসেছিল তারা সায়দাবাদ থেকে বাসে করে যাচ্ছে। ঢাকা থেকে সোহাগীর মরদেহ কীভাবে দাউদকান্দি গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাবে, তা নিয়ে এক ধরনের দুশ্চিন্তা ছিল। এই গরম আবহাওয়ায় মিনি ট্রাক ভাড়া করে কফিনটি নিতে গেলে ক্ষতি হতে পারে মরদেহের। দ্রুত পচন ধরতে পারে গন্তব্যে পৌঁছুতে পৌঁছুতে। কিন্তু বশিরের দুশ্চিন্তা দূর করে দিয়েছে জামিল। যে এনজিওতে কাজ করে সে, তারাই ফ্রিজিং গাড়ি ভাড়া করে দিয়েছে। ভাড়ার টাকা তারাই পরিশোধ করে দিয়েছে। এই এনজিওর বিশেষ তহবিল থেকে অসচ্ছল, দরিদ্র অভিবাসী বাংলাদেশী শ্রমিক কর্মীদের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছে দিতে সহায়তাও করা হয়ে থাকে। জামিল দ্রুতই সব ব্যবস্থা করেছে। এই বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতিদিনই তাকে নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা, বিচিত্র সব ঘটনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। যার অধিকাংশই ভীষণ বেদনাদায়ক এবং কষ্টের। সংসারে সুখ আনার স্বপ্ন দেখা গ্রামের সাধারণ এক তরুণীর অকালে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি জামিলকে প্রচণ্ডভাবে আলোড়িত করেছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কন্যা হারানো পিতা বশিরের সঙ্গে কথা বলে তার সীমাহীন কষ্ট বেদনার কিছুটা অনুভব করেছে সে। অকালে সন্তান হারানো পরিবারটির দুঃখকষ্ট, বেদনা, অসহায়ত্বের সাথে কেন জানি নিজেকে অংশীদার ভেবেছে।
লাশবাহী ফ্রিজিং ভ্যানটা ঢাকা শহরের প্রচণ্ড যানজট অতিক্রম করে একসময় কাঁচপুর ব্রিজ পেরিয়ে দাউদকান্দির দিকে এগোতে থাকে। গাড়িতে পেছনে হিমশীতল চেম্বারে এখন কফিনের মধ্যে শুয়ে আছে সোহাগী। মেয়েটা দুবাই যাওয়ার আগে বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে আহলাদী কণ্ঠে বলেছিল, ‘আব্বা-আম্মা, আমি যখন দুবাই শহর থিকা দেশে ফিরা আসমু তখন তোমরা ভালো একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করবা। ঐ গাড়িতে যেন এসির ব্যবস্থা থাকে। এয়ারপোর্ট থিকা আমরা সবাই অনেক আরাম কইরা বাড়িতে ফিরমু। গ্রামের মানুষজন আমাগো দেখবো। আমারে দেইখ্যা অবাক হইব পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন সবাই...
মেয়ের কথাগুলো বশিরের কানে এখনো বাজছে। ‘আব্বা, এয়ারপোর্ট থিকা ভাড়া করা এসি গাড়িতে কইরা আরাম করতে করতে আমরা বাড়িতে ফিরমু। গরমে কোনো কষ্ট করতে হইব না। গ্রামের মানুষ আমারে দেইখ্যা তখন অবাক হইব, পাড়াপ্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন সবাই আমারে দেখতে বাড়িতে আইব।’
বুকের মধ্যে অসহনীয় কষ্ট আর বেদনার বোঝা ক্রমেই আরো ভারী হয়ে উঠতে থাকে বশিরের। চোখ দুটো অশ্রুতে টলমল করছে। দু’চোখের দৃষ্টি ক্রমেই আরো ঝাপসা হয়ে আসে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা