আত্মজিজ্ঞাসা আত্মসমালোচনা
- মাওলানা এম এ হালিম গজনবী এফসিএ
- ১৩ জুলাই ২০২৪, ০০:০৫
(দ্বিতীয়াংশ)
আমি আল্লাহর আদেশ ও নিষেধাজ্ঞা পালন করি কি না? উত্তর যদি হয় ‘হ্যাঁ, আমি পালন করি’ তখন প্রশ্ন আসবে আমি যে পালন করি তার প্রমাণ কী? আমি কি সব ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত পালন করি? যদি করি তাহলে প্রমাণিত হবে আমি আল্লাহর আদেশ পালন করছি। তারপর প্রশ্ন- নফল, মুস্তাহাব পালন করি কি না। যদি উত্তর হয় ‘হ্যাঁ, পালন করি’ তাহলে বুঝতে হবে আমি আল্লাহর আদেশ পালনে অতি উৎসাহী; কারণ নফল, মুস্তাহাব হওয়ার সত্ত্বেও আমি তা পালন করলাম। যদিও এ আদেশ পালন না করলে আমি তেমন পাপী বা মহাপাপী হতাম না, তা সত্ত্বেও আমি তা করলাম আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। অন্য দিকে আলোচ্য প্রশ্নের উত্তর যদি ‘না’ হয় অর্থাৎ আমি আল্লাহর আদেশ পালন করি না এ ক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন হবে ‘আমি কোন যুক্তিতে আমার স্রষ্টার আদেশ পালন করছি না, যা না করা মহাপাপ এবং পরিণতি জাহান্নামবাস?’ আমি মানুষ, আমি সৃষ্টির সেরা জাতি, আমি শুধু যে আল্লাহর আদেশই পালন করব তা নয়; বরং সৃষ্টির সেরা ব্যক্তি হিসেবে আল্লাহর কাছে পরিচিতি পেতে হলে অন্য সবাইকেও সৎ কাজের আদেশ আমাকে করতেই হবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখতেই হবে; অন্যথায় আমি হবো নিকৃষ্ট মানুষ। প্রমাণ আল্লাহর বাণী। ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, মানবজাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে; তোমরা (মানুষকে) সৎ কাজের নির্দেশ দান কর, অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখ এবং আল্লাহকে বিশ্বাস কর।’ (সূরা আল ইমরান-১১০ )
এ অবস্থায় আমাকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে আমি ইনশাআল্লাহ আল্লাহর সব আদেশ যথাসাধ্য পালন করবই, পার্থিব ও পারলৌকিক জীবনে কল্যাণের জন্য যে প্রসঙ্গে আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি বলতে গেলে প্রত্যেক সালাতের পর বা দোয়া মাহফিলে- ‘রব্বানা আতিনা ফিদদুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাঁও ওয়া কিনা আজাবান নারি।’ অর্থ ‘হে আমাদের প্রতিপালক! দয়া করে আমাদেরকে পার্থিব জীবনে এবং পারলৌকিক জীবনের কল্যাণগুলো দান করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামে শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।’ (সূরা বাকারা-২০১)। পার্থিব জীবনের কল্যাণগুলো হলো সৎ কর্মগুলো বাস্তবায়ন এবং অসৎ কর্মগুলো বর্জন করা ও করানো, সৎ উপার্জন, হালাল খাদ্য, সৎ স্বামী-স্ত্রী, সুসন্তান, সুস্বাস্থ্য, ধর্মীয় জ্ঞান, দীর্ঘায়ু, ধর্মপালন ইত্যাদি। এবং পরকালের কল্যাণগুলো হলো ঈমান নিয়ে মৃত্যু, সৎ কাজের পাল্লা ভারী, ফলে চিরসুখ-শান্তিময় জান্নাত, আল্লাহ ও রাসূল সা:-এর দর্শন লাভ।
তেমনি করে প্রশ্ন- আমি আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা পালন করি কি না অর্থাৎ সব নিষিদ্ধ কাজ বর্জন করি কি না। জবাব যদি হয় ‘হ্যাঁ’ তাহলে প্রশ্ন আসবে- নিষেধাজ্ঞা পরিপূর্ণভাবে পালন করি নাকি আংশিকভাবে পালন করি। উত্তর যদি হয় ‘হ্যাঁ, পরিপূর্ণভাবে পালন করি’ যা সত্যিকার অর্থে মহাকঠিন কাজ, তাহলে আমি সম্পূর্ণরূপে নিষ্পাপ আর উত্তর যদি হয় ‘আমি আংশিকভাবে পালন করি’ অর্থাৎ নিষিদ্ধ কাজগুলো সম্পূর্ণরূপে বর্জন করি না তাহলে আমি হবো আংশিক নিষ্পাপ। এ অবস্থায় আমার কি দায়িত্ব হবে না ধর্মীয় জ্ঞান, বিবেক-বিবেচনা ইত্যাদি অবলম্বনে, বিশেষ করে আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে আল্লাহর আদেশ ও নিষেধাজ্ঞা যথাসাধ্য পালন করা, যাতে আমি ঈমানের সাথে এবং পাপের চেয়ে অধিক পুণ্য নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারি এবং ফলে আল্লাহর ইচ্ছায় জান্নাতবাসী হতে পারি? উত্তর : অবশ্যই আমার দায়িত্ব কর্তব্য হবে উপরোক্ত বিষয়গুলো পালন করে জান্নাত অর্জন করা, ইনশা আল্লাহ।
আমার কোনো কোনো কর্মকাণ্ড বা কথাবার্তা শিরকের (আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব স্থাপন) অন্তর্ভুক্ত হিসেবে গণ্য হয় এবং তা জানি কি না? যদি উত্তর পাই ‘অন্তর্ভুক্ত হিসেবে গণ্য হয় এবং তা জানি’ তাহলে প্রশ্ন করব আমি তা পরিহার করি কি না। যদি উত্তর হয় ‘পরিহার করি’ তবে তা চমৎকার ও সন্তোষজনক। পক্ষান্তরে, উত্তর যদি হয় তা পরিহার করি না আদৌ বা আংশিক, তখন প্রশ্ন করব আমি কি জানি ‘শিরক’ নামক পাপের ভয়াবহ পরিণাম? উত্তর যদি হয় ‘হ্যাঁ, জানি’ তখন প্রশ্ন হবে- ভয়াবহ পরিণতি জানা সত্ত্বেও তা কেন পরিত্যাগ করি না? যদি উত্তর হয় ভয়াবহ পরিণাম আমি জানি না, তখন অবশ্যই আমার কর্তব্য হবে তা জানা। উল্লেখ্য, ‘শিরক’ নামক পাপ ক্ষমার অযোগ্য, তা আল্লাহ কখনোই ক্ষমা করবেন না। প্রমাণ আল্লাহর বাণী- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শরিক (অংশীদারিত্ব) করা ক্ষমা করেন না। এটি ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন; এবং যে কেউ আল্লাহর শরিক করে সে ক্ষমার অযোগ্য মহাপাপ করে।’ (সূরা নিসা-৪৮)। বিশেষভাবে লক্ষণীয় ও স্মরণীয় বিষয়- শিরক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। কোনো অবস্থায়ই দয়ালু আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। যেকোনো মূল্যে তা থেকে আমরা যেন বিরত থাকি। হে আল্লাহ! তুমি দয়া করে আমাদের এ তৌফিক দান কর।
আমি কি জানি তওবা কী এবং তওবার ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশনা কী? উত্তর যদি হয় ‘হ্যাঁ’ তাহলে প্রশ্ন আসবে- ‘আমি কি তা পালন করি?’ উত্তর যদি হয় ‘হ্যাঁ’ তাহলে আমি সৎকাজ করছি। আর উত্তর যদি হয় ‘না’ তাহলে প্রমাণিত হবে আমি আল্লাহর আদেশ অমান্য করছি। ফলে তা আমাকে পরিহার করতেই হবে অর্থাৎ তওবা করেই যেতে হবে। আমার উত্তর যদি হয় ‘তওবা কী আমি তা জানি না’- এ ক্ষেত্রে এটি আমাকে অবশ্যই জানতে হবে। কারণ মানার পূর্বশর্ত জানা। তওবা মানে সব পাপ কাজ থেকে ফেরত আসা বা বন্ধ করে দেয়া এবং প্রতিজ্ঞা করা যে এসব পাপ কাজ ভবিষ্যতে পুরোপুরি এড়িয়ে চলা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর নির্দেশ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা বিপদগামী হওয়া থেকে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর; সত্যিকার অর্থে প্রত্যাবর্তন; অচিরেই তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কর্মগুলো মুছে দিবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত।’ (সূরা তাহরিম-৮)
এমনি করে হতে পারে অনেক অনেক আত্মজিজ্ঞাসা, আমরা যেন সেসব আত্মজিজ্ঞাসা উদ্ভাবন করে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করি আত্মশুদ্ধির জন্য এবং অর্জন করতে পারি আল্লাহর সন্তুষ্টি, বিস্তৃত করতে পারি উভয়জগতের সুখ ও শান্তির পথ বা উপায়গুলো।
আমি কি মানবাধিকার লঙ্ঘন বা অত্যাচার করি অর্থাৎ অঙ্গীকার ভঙ্গ, প্রতারণা, ধনসম্পদ আত্মসাৎ, ব্যভিচার, অসদাচরণ, দায়িত্ব পালনে অবহেলা, শারীরিক বা মানসিকভাবে আঘাত প্রদান, হত্যা, অপহরণ ইত্যাদি করি? উত্তর যদি হয় ‘হ্যাঁ’ তাহলে তা হবে আমার জন্য অপূরণীয় ক্ষতি ও ভয়াবহ দুঃসংবাদের কারণ। বিশেষ করে শেষ বিচারের দিনে। কারণ আমার এ অপরাধের ক্ষমা কস্মিনকালেও আল্লাহ করবেন না। আমি এ ক্ষমা পেতে পারি অত্যাচারিত বা যার অধিকার আমি লঙ্ঘন করলাম যদি সে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে ইহকালে, তাহলে আমি মুক্ত, তা না হলে পরকালে আমাকে অত্যাচারের মূল্য পরিশোধ করতে হবে, আল্লাহর বিচারে অত্যাচারিতদের আমার নেক বা পুণ্য অত্যাচারের সমপরিমাণ দিয়ে দিতে হবে। যদি তা দিয়ে পরিশোধ না হয়, তাহলে তার বা তাদের পাপ আমাকে বহন করতে হবে অত্যাচারের পরিমাণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত।
লেখক : সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউড অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা