সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ কিন্তু আমরা!
- সফিউল্লাহ সাকিব মিয়াজি
- ১৩ জুলাই ২০২৪, ০০:০৫
মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে ১৮ হাজার জীব সৃষ্টি করেছেন, এত জীবের ভিড় থেকে মানবসম্প্রদায়কে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। অথচ উদাসীন মানব জাতি ভুলেই গিয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের মর্ম। মানুষের মধ্যে মানবতার জন্ম নেবে এটি খুবই একটি সহজসাধ্য বিষয়। অথচ, কেমন জানি অস্পষ্ট হয়ে ধূসর হয়ে পড়েছে মানবতা নামক শব্দটি।
আমরা মানুষ, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব, অন্যান্য প্রাণী বা সব কিছু থেকে আমাদের আলাদা করা হয় বিচার-বুদ্ধির জন্য, বিবেকের জন্য। কিন্তু আমরা কি আমাদের বিচার-বুদ্ধি, বিবেককে কাজে লাগাচ্ছি বা লাগাই? আমাদের প্রতিদিন কী পরিমাণ নৈতিক স্খলন, বিবেকের স্খলন হচ্ছে তা আমরা ভেবে দেখি না। আমাদের কাছে থাকা মানবীয় গুণাবলি বিসর্জন দিচ্ছি প্রতিনিয়ত, হারিয়ে যাচ্ছে নীতি-নৈতিকতা, লোপ পাচ্ছে আমাদের ভালো-মন্দ বিচার করার ক্ষমতা।
মানুষের প্রতি মানুষের সহমর্মিতা বিলীন হয়ে যাচ্ছে, প্রেম-ভালোবাসা ও দয়া-মায়া, ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মাঝ থেকে। আমরা কিন্তু মানবীয় গুণাবলি হারিয়ে ক্রমেই মানুষ হিসেবে নয়, ক্রমেই হিংস্র প্রাণীর মতো নিষ্ঠুর আচরণ করছি। এমন কেন হচ্ছে? সময়ের আবর্তনে সভ্য মানুষ হিসেবে আমাদের মধ্যে মানবতাবোধ যেখানে বৃদ্ধি পাওয়ার কথা, সেখানে মানবতাবোধ কমছে, প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে। কিন্তু কেন? শিক্ষিত মানুষের মধ্যে মানবীয় গুণাবলি আরো বেশি থাকার কথা, তা কিন্তু এখন আর তেমন দেখা যাচ্ছে না। আজকাল প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হতে হয়, দৈনিক পত্রিকার পাতা উল্টালেই নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। মা নিজের হাতে তার সন্তানকে বিষ খাইয়ে হত্যা করছে। বাবার লাঠি বা অস্ত্রের আঘাতে ছেলে মৃত্যুবরণ করছে। স্বাধীন জীবন-যাপনের জন্য মেয়ে বাবা-মাকে হত্যা করছে, ছেলে জন্মদাতা মা-বাবাকে হত্যা করছে। সামান্য জমি বা টাকার জন্য ভাই ভাইকে হত্যা করছে। ভালো-মন্দের বিচারক্ষমতা দিয়ে বিবেক নির্ধারিত হয়।
কিন্তু, আমরা কি বিবেক নিয়ে ভাবি? এখন আমরা ব্যস্ত আছি কে কতটা নিচে নামতে পারি সেই প্রতিযোগিতায়। কী পরিমাণ নৈতিক স্খলন হচ্ছে প্রতিদিন তা আমরা ভেবে দেখি না, জীবনযাত্রার দৌড়ে সবাই শামিল কে কাকে কীভাবে পেছনে ফেলে নিজে এগিয়ে যাব তা নিয়েই ব্যতিব্যস্ত, বিবেকের যে স্খলন হচ্ছে তা আমাদের কাছে যেন কোনো ব্যাপারই নয়। যেকোনো মূল্যে সম্পদশালী হতেই হবে। আমাদের কাছে থাকা মানবীয় গুণাবলি বিসর্জন দিচ্ছি প্রতিনিয়ত, সম্পদ আহরণের জন্য, ভোগ বিলাসের জন্য। আমাদের মধ্যে থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নীতি-নৈতিকতা, লোপ পাচ্ছে আমাদের ভালো-মন্দ বিচার করার ক্ষমতা। চারদিকে হত্যা ও জিঘাংসা মানুষকে অন্ধ করে ফেলছে। মানুষের মনে শুধু প্রতিহিংসাপরায়ণতা, টাকা উপার্জনের চেষ্টা, সন্তান, পরিবার-পরিজন কে কোথায় কী করছে, এত কিছু ভাবার সময় নেই। সন্তান, পরিবার-পরিজন ইতিবাচক ভূমিকা পালন না করলে, শুধু টাকা দিয়ে কিছু হবে না এই উপলব্ধি আমরা করতে পারছি না। জেনে না জেনে শুধু টাকার পেছনে দৌড়াচ্ছি। তুচ্ছ কারণে মানুষ মানুষকে হত্যা করছে। সামান্য বিষয়ে খুন-খারাবি একটি নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? এমন তো হওয়ার কথা ছিল না।
আমাদের মধ্যে এমন পশুপ্রবৃত্তি বাড়ছে কেন? এই যে সামাজিক অস্থিরতা চলছে এর শেষ কোথায়? মানুষের পশুপ্রবৃত্তি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু আইনি কাঠামো দিয়ে এ অবক্ষয় দূর করা যাবে না। এ জন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক আন্দোলন এবং নাগরিক সমাজকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের মানবিক মূল্যবোধ এতটাই নি¤œগামী হয়েছে যে, একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। আমরা আমাদের ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য শিশুর মতো পবিত্র নিষ্পাপ প্রাণ কেড়ে নিতেও দ্বিধা করছি না। কেন এমন হলো?
শিক্ষিত হয়ে আমরা আরো বর্বরতার দিকে ধাবিত হচ্ছি কি না তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। শিক্ষা আমাদের মূল্যবোধ ও মনুষ্যত্ববোধ তৈরিতে সহায়ক হচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আমরা ক্রমেই আদিম যুগে ফিরে যাচ্ছি। ব্যাপারটি নিয়ে গভীরভাবে ভাবা জরুরি। একবার খাদের কিনার থেকে ছিটকে নিচে পড়ে গেলে কোমর সোজা করে উঠে দাঁড়ানো জাতির জন্য কঠিন হয়ে যাবে।
আমাদের সমাজে মেধাবী কম না হলেও আদর্শনিষ্ঠ এবং সৎ ও নীতিপরায়ণ মেধাবী প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যা কমে আসছে। নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের দিক থেকে আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে।
আসুন আমরা আবার সামনের দিকে ঘুরে দাঁড়াই, নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আমাদের সুকুমারবৃত্তিগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে, নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় রোধ করে আমাদের মনুষ্যত্ববোধকে জাগিয়ে বাংলাদেশেকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই।
লেখক : প্রবন্ধকার ও সংগঠক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা