মানুষ মানুষের জন্য
- ইমদাদ ফয়েজী
- ০৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০৫
ইসলাম মানবতার ধর্ম, কল্যাণকামিতার ধর্ম। দুর্বল, দুঃখীজনের প্রতি সদয় হওয়া এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ, কোমল আচরণ ইসলামের অবিচ্ছেদ্য সংস্কৃতি ও আদর্শ। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘তাদের (ধনীদের) সম্পদে রয়েছে প্রার্থী (অসহায়) ও বঞ্চিতদের অধিকার।’ (সূরা জারিয়াত-১৯) রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘দ্বীন হচ্ছে কল্যাণকামিতা।’ (মুসলিম)
বন্যার্ত আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, নিঃস্ব, দুর্বল, অসহায়, অনাথদের প্রতি মমতার হাত বিস্তৃত করতে হবে। তাদের কল্যাণার্থে উদ্যোগী হতে হবে এবং প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। নাম কুড়ানো, লৌকিকতা কিংবা দায়সারাভাবে নয়; মনুষ্যত্ব ও মানবিক দায় থেকে সাধ্যানুযায়ী বন্যাদুর্গত, অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হবে। ইসলামের অন্যতম নির্দেশ ও শিক্ষা হচ্ছে, অসহায় বিপদগ্রস্তদের দুঃখ-কষ্ট নিবারণ করা, ক্ষুধার্তকে আহার দেয়া, বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদান, রোগীর সেবা-শুশ্রƒষা করা প্রভৃতি। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘আত্মীয়স্বজনকে দাও তার প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। আর কিছুতেই অপচয় করো না।’ (সূরা ইসরা-২৬)
কেউ কেউ মানবতার কল্যাণে খোঁজে খোঁজে হৃদ্যতা ভালোবাসা দেখাচ্ছেন। আল্লাহ প্রদত্ত কোমল হৃদয় আর মনুষ্যত্বের দায়িত্ববোধ থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এর বিপরীতে আবার অনেকের প্রাচুর্য যেন শুধু নিজেদের জন্য জমা করে রাখার মধ্যেই। সঙ্কীর্ণ মানসিকতার চার দেয়ালের বাইরে তারা আসতে পারছেন না। পানিবন্দী মানুষের কষ্ট, অসহায়ত্ব তাদের বিবেকের টনক নাড়াতে সক্ষম হচ্ছে। এমন কঠিন হৃদয় লোকদের সতর্ক করে রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন না।’ (বুখারি ও মুসলিম) রাসূল সা: আরো বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি মুমিন নয় যে পেটপুরে খায় অথচ তার প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে।’ (আদাবুল মুফরাদ)
সময় এখন পারস্পরিক কল্যাণকামিতা, সহানুভূতি ও সহযোগিতার। দুঃখীদের মুখে একমুঠো অন্ন তুলে দেয়া আমাদের সবর নৈতিক দায়িত্ব। প্রয়োজন, তাদের মুখে একটুকরো হাসি ফুটানো। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা: বর্ণনা করেছেন- জনৈক ব্যক্তি রাসূল সা:-কে প্রশ্ন করলেন ‘ইসলামে উত্তম কাজ কোনটি? তিনি বললেন, ‘কারো মুখে আহার তুলে দেয়া।’ (বুখারি)
রাসূল সা: আরো ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট হবে, মহান আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের পার্থিব কষ্ট বা বিপদ দূর করে দেবে আল্লাহ কিয়ামত দিবসে তার কষ্ট বা বিপদ দূর করে দেবেন।’ (বুখারি ও মুসলিম) আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তাদের প্রতিদান তাদের রবের কাছে রয়েছে। আর তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।’ (সূরা বাকারা-২৭৪)
রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ তার অপর মুসলিম ভাইয়ের সাহায্য করে আল্লাহও ততক্ষণ তার সাহায্য সহযোগিতা করেন।’ (মুসলিম) অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘দান-সদকা বিপদ-বিপর্যয় দূর করে, জীবনে সমৃদ্ধি এনে দেয়, পাপমোচন করে, আল্লাহর ক্রোধ থেকে বাঁচিয়ে রাখে, অসুখ-বিসুখ থেকে সুস্থতা পাওয়া যায়।’
বলা হয়, ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য।’ আমাদের হৃদয়টাকে আরো প্রশস্ত করতে হবে। অহমিকা, সঙ্কীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে পারস্পরিক কল্যাণকামিতা আর মনুষ্যত্বের দায় থেকে হলেও কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘উত্তম ব্যক্তি সেই যে মানবতার অধিক কল্যাণকর ও উপকারী।’ (সহিহ আল জামে)
লেখক : সহকারী শিক্ষক, ওসমানীনগর ইসলামিক একাডেমি দাখিল মাদরাসা, সিলেট
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা