১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

শিশুদের মসজিদে আসা

-

আমাদের সমাজে ছোট শিশুদের মসজিদে আসাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয় না। অধিকাংশ মসজিদে এই ভুলটি প্রতিষ্ঠিত। ছোটরা দুনিয়ার যে স্থানে যায় সাথে করে আনন্দ, ভালো লাগা এবং ভবিষ্যতের আগাম ফলাফল নিয়ে যায়। একটু-আধটু দুষ্টুমির দরুন কোথাও কোথাও বা শিশুদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করার নিউজও আসে। (মায়াজাল্লাহ) ছোটদের সাথে করে মসজিদে নামাজ পড়তে আসার কালচারটি সেই ইসলামের শুরু থেকেই চলমান। এটি একটি প্রশংসনীয় ব্যাপারও। শিশুকে দ্বীনের রীতিনীতির সাথে ছোট থেকেই পরিচয় করিয়ে দেয়া, ইসলামী মনমানসিকতায় গড়ে তোলা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পরবর্তীতে এর ফলাফল পাওয়া যায়। অথচ অনেক লোক অজ্ঞতার দরুন এ ক্ষেত্রে চরম বাড়াবাড়িতে লিপ্ত। শিশুরা নামাজে একটু দুষ্টুমি করতেই পারে। এটি নতুন কিছু নয়। হাদিসে এসেছে- শাদ্দাদ ইবনুল হাদ রা: বর্ণনা করেন- একদা রাসূল সা: হাসান বা হুসাইনকে কোলে নিয়ে মাগরিব বা ইশার নামাজের উদ্দেশে বের হলেন। তাকে পাশে রেখে তিনি সামনে অগ্রসর হলেন এবং তাকবির বলে নামাজ শুরু করলেন। নামাজের মাঝখানে একটি সিজদা খুব লম্বা করলেন। আমি মাথা উঠালাম। দেখি, তিনি সিজদায়, আর শিশুটি তার পিঠে! আমি আবার সিজদায় চলে গেলাম। নামাজ শেষ হলে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! নামাজের মধ্যে একটি সিজদা অনেক দীর্ঘ করলেন! আমাদের তো আশঙ্কা হচ্ছিল- কোনো দুর্ঘটনা ঘটল না তো! বা ভাবছিলাম, আপনার প্রতি কোনো ওহি নাজিল হলো! নবী করিম সা: বললেন, ‘এগুলোর কোনোটিই ঘটেনি; বরং আমার এই ছেলে (নাতি) আমার ওপর সওয়ার হয়েছে। আমার পছন্দ হলো না, তার (শিশুমনের) ইচ্ছেটুকু পূরণ হওয়ার আগে তাকে সরিয়ে দিই’ (সুনানে নাসায়ি-১১৪১, মুসনাদে আহমাদ-১৬০৩৩)।
এরকম অনেক হাদিসে স্পষ্ট শিশুদের প্রতি শিশুরা যদি সীমাহীন দুষ্টুমিতে মাতে, এতে নামাজ আদায়ে সমস্যা হলে কিছু পদ্ধতি নেয়া যেতে পারে। যেমন- শিশুদেরকে বোঝানো, কথা বলার সময় আঙুল দিয়ে চুপ থাকতে ইঙ্গিত করা, শাসনের সুরে হালকা ভয় দেখানো, শিশুদের সাথে নামাজের কাতারে মান্যবর ব্যক্তিদের দাঁড়ানো ইত্যাদি। এতে সব কিছু নিয়ন্ত্রণে আসতে বাধ্য। কিন্তু উল্টো মসজিদে আসা চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধকরণ ইত্যাদি মারাত্মক ঘৃণিত কাজ। একটি সুষ্ঠু সমাজগঠনে আমাদের যেভাবে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে আগাতে হবে ঠিক সেভাবে অনুজদের প্রতি শাসনের উদার মনোভাব দেখাতে হবে।
লেখক : শিক্ষার্থী, উচ্চতর ইসলামী আইন ও গবেষণা বিভাগ, জামিয়া ইসলামিয়া আব্বাসি কৌড়িয়া, বিশ্বনাথ, সিলেট।


আরো সংবাদ



premium cement