১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

যেভাবে ধ্বংস হয়েছিল আদ জাতি

-

হজরত নূহ আ:-এর বংশধরদের মধ্যে আদ নামক এক ক্ষমতাশালী বাদশাহ ছিলেন। তার সমকক্ষ শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান ব্যক্তি সে যুগে আর কেউই ছিল না। এ বাদশাহর সন্তান-সন্ততি ও বংশধররাও সব দিক দিয়ে শক্তিমান ও প্রভাবশালী ছিল। বাদশাহ আদের নামানুসারে এরা কওমে আদ বা আদবংশীয় লোক নামে ইতিহাসে পরিচিত। এদের মধ্যে কারো কারো দেহের উচ্চতা ছিল চারশ’ গজ পর্যন্ত। এদের মধ্যম শ্রেণীর লোকদের উচ্চতা ছিল দুইশ’ গজ পর্যন্ত। আর যারা সবচেয়ে খাটো তাদের উচ্চতা ছিল সত্তর গজ পর্যন্ত। এরা সবাই যেমন ছিল সাহসী, তেমনই ছিল শক্তিশালী। তারা ছিল খুব অহঙ্কারী ও তাদের অন্তর ছিল খুব কঠিন। তারা সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বলে প্রচার করত। তারা দুর্বল ও নিরীহ মানুষদের খুব অত্যাচার করত। তাদের বাসভূমি ছিল ইয়েমেনের আহকাফ নামক জায়গায়। তারা ছিল মরুচারী ও পাহাড়ি লোক। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

সাহস ও শক্তির গৌরবে তারা আল্লাহ ও নবীকে ভুলে যায়। তারা সৎ কাজ ও ভালো কাজ কখনো করত না; বরং শয়তানের কুপরামর্শে দেবদেবির পূজা করত। আদ কওমের যখন এ অবস্থা প্রবল আকার ধারণ করল, তখন তাদেরকে হেদায়াত করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ পাক কওমে আদের মধ্য হতেই হুদ নামক এক ব্যক্তিকে নবীরূপে প্রেরণ করলেন। আল্লাহ বলেন, আদ জাতির কাছে তাদের ভাই হুদকে নবীরূপে পাঠিয়েছিলাম। সে বলল : হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো মাবুদ নেই, তোমরা কি সাবধান হবে না? (সূরা আল আরাফ-৬৫) হজরত হুদ আ: আদ জাতিদের দেবদেবির পূজা ছেড়ে এক আল্লাহর ইবাদত করতে বললেন। তখন তারা নবীর সাথে বিতর্ক করতে থাকে।

পবিত্র কুরআন মজিদে এসেছে, তার জাতির নেতারা বলল : আমরা তোমাকে নির্বোধ দেখছি এবং আমরা তো তোমাকে নিশ্চিতরূপে মিথ্যাবাদী মনে করি। তিনি (নবী) বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! আমি নির্বোধ নই; বরং আমি হলাম সারা জাহানের রবের মনোনীত রাসূল। (সূরা আল আরাফ : ৬৬-৬৭) হজরত হুদ আ: তাদের আল্লাহর সত্য ধর্মের প্রতি আহ্বান করলেন এবং আল্লাহর নিয়ামত ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য বললেন। পবিত্র কুরআন মাজিদে এসেছে, আমি আমার রবের বার্তা তোমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি, আমি তোমাদের একজন বিশ্বস্ত হিতাকাক্সক্ষী তোমরা কি এতে বিস্মিত হচ্ছ যে, তোমাদের জাতিরই একটি মাধ্যমে তোমাদের রবের পক্ষ হতে তাঁর বিধান ও উপদেশসহ তোমাদের কাছে এসেছে? তোমরা সেই অবস্থার কথা স্মরণ করো যখন নূহের সম্প্রদায়ের পর আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন এবং তোমাদেরকে অন্যদের চেয়ে শক্তিতে অধিকতর বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছেন। তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, হয়তো তোমরা সফলকাম হবে। (সূরা আল আরাফ : ৬৮-৬৯)

হজরত হুদ আ: তাদের অনেক বুঝালেন ও অনেক উপদেশ দিলেন। কিন্তু শুনল না। হজরত হুদ আ: দীর্ঘদিন ধরে তাদের আল্লাহর পথে আনার জন্য অনেক চেষ্টা করলেন, কিন্তু তাতে তিনি সফল হননি। মাত্র ৭০ জন লোককে তিনি কোনোরূপে হেদায়াত করতে সক্ষম হলেন। তারাও কাফেরদের ভয়ে গোপনে আল্লাহর ইবাদত করত, প্রকাশ্যে ইবাদত করতে সাহস পেত না। তার পরেও হজরত হুদ আ: আদ জাতিকে ধর্মের পথে আহ্বান করেছিলেন। আর আদ জাতি এভাবে তার উত্তর দিচ্ছিল, হুদ! তুমি কি আমাদের কাছে এ আশা করছ যে, আমরা তোমার কথামতো বাপ-দাদার ধর্ম দেবদেবির পূজা ত্যাগ করে এক খোদার উপাসনা করব? তা তুমি জেনে রাখো, আমরা তোমার খোদার ইবাদত করব না। তুমি যে তোমার খোদার ভয় দেখাচ্ছ যদি সত্যি হয়, তবে তা আমাদেরকে প্রত্যক্ষ করাও না কেন? না হলে আমরা তো তা বিশ্বাস করবই না; বরং আমরা তোমাকে জানে মেরে ফেলব। কুরআন মাজিদে এসেছে, তারা বলল : তুমি কি আমাদের কাছে শুধু এই উদ্দেশ্যে এসেছ যে, আমরা যেন একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করি এবং আমাদের পূর্বপুরুষরা যাদের পূজা করত তাদের বর্জন করি? তুমি তোমার কথা ও দাবিতে সত্যবাদী হলে আমাদেরকে যে শাস্তির ভয় দেখাচ্ছ তা আনয়ন করো। (সূরা আল আ’রাফ-৭১)

হজরত হুদ আ: এদের সম্পর্কে নিরাশ হয়ে আল্লাহর দরবারে এরূপ দোয়া করলেন, হে মাবুদ! এরা আমার কথা শুনছে না। উল্টো আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখাচ্ছে। আমার এমন শক্তিও নেই যে, আমি তাদের সাথে পেরে উঠব। তারা অনেক শক্তিশালী। আপনি আমাকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করুন। বাদশাহ এত বেশি শক্তির অধিকারী ছিল যে, সে যখন কোনো পাথরের ওপর দিয়ে হেঁটে যেত তার জানু পর্যন্ত ওই পাথরের মধ্যে ডুবে যেত। শক্তির গর্বে আ’দ কওমের লোকেরা এরূপ বলত যে, কে আছে সারা জাহানের বুকে আমাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী?

হজরত হুদ আ: তার ৭০ জন উম্মত নিয়ে অন্য এলাকায় চলে যাওয়ার সময় আরো একবার কাফেরদের সত্যধর্মে প্রতি আহ্বান করে বললেন, এখনো তোমরা আমার কথা মেনে নাও। না হলে কিন্তু অচিরেই তোমরা আল্লাহর গজবে ধ্বংস হয়ে যাবে। আ’দ জাতি হজরত হুদ আ:-এর কথা শুনে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করল। যার ফলে আল্লাহ তায়ালা তাদের দেশে একাধারে তিন বছর বৃষ্টিপাত বন্ধ রাখলেন। দেশে কোনো ফসল হয়নি। ফলে সারা দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। গজব শুরু হওয়ার আগে হজরত হুদ আ: তাঁর উম্মতকে নিয়ে তাড়াতাড়ি সে স্থান ত্যাগ করলেন। আল্লাহ বলেন- ‘এরপর তাকে (হুদকে) এবং তাঁর সঙ্গী সাথীদের আমার অনুগ্রহে রক্ষা করলাম, আর যারা আমার নিদর্শনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল এবং যারা ঈমানদার ছিল না তাদের মূলোৎপাটন করলাম।’ (সূরা আল আরাফ-৭২)

পরে ভয়াবহ গজব শুরু হলো। মুহূর্তের মধ্যে এমন প্রবল বেগে তুফান শুরু হলো যে, দাম্ভিক আ’দ কওম ধূলিসাৎ হয়ে গেল। তাদের ঘরবাড়ি প্রথম ঝাপটায়ই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। দ্বিতীয়বারে তাদের আশ্রয় জায়গা পাহাড়ের গুহাগুলোতে বায়ু প্রবেশ করে তাদের সবাইকে বাইরে উড়িয়ে এনে এমনভাবে আছাড় মারল যে, সাত লাখ মানুষের দেহ উৎপাটিত খেজুর গাছের মতো নিষ্প্রাণ ভূমিতলে পড়ে রইল। তারপর প্রবল বায়ুর তাণ্ডব ধুলামাটি উড়িয়ে লাশগুলোর উপরে এমনভাবে নিয়ে এলো যে, তাতে তারা চাপা পড়ে যায়। আল্লাহ বলেন-‘আর আ’দ সম্প্রদায়কে ধ্বংস করা হয়েছিল এক প্রচণ্ড ঝঞ্ঝাবায়ু দ্বারা।’ (সূরা আল হাক্কাহ-৬) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন- ‘তুমি কি দেখনি তোমার রব কী করেছেন আ’দ বংশকে।’ (সূরা আল ফাজর-৬)

লেখক : আলেম, গবেষক


আরো সংবাদ



premium cement
মহাদেবপুরে রাস্তার পাশে থেকে যুবকের জবাই করা লাশ উদ্ধার মহাদেবপুরে রাস্তার পাশে থেকে যুবকের জবাই করা লাশ উদ্ধার শ্রমিকদের অবহেলিত রেখে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয় : সেলিম উদ্দিন মহাদেবপুরে যুবকের লাশ উদ্ধার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম মুখ্য সংগঠকসহ ৩ নেতাকে মারধর সিরিয়ায় ইসরাইলের অবৈধ আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ১২ বছর পর দামেস্কে আবার কার্যক্রম শুরু করল তুর্কি দূতাবাস দেশের মানুষকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আমরাই যথেষ্ট : আসাদুজ্জামান রিপন জনগণের অধিকার রক্ষায় বিএনপি ঐক্যবদ্ধ : খন্দকার মুক্তাদির সব ধরনের ক্রিকেটে নিষিদ্ধ সাকিবের বোলিং ফেনীতে গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তা

সকল