কে মৃতদের জীবিত করবে
- মাওলানা এম এ হালিম গজনবী এফসিএ
- ১০ জুন ২০২৪, ০০:০৫
(শেষাংশ)
হযরত ইবরাহীমের (আ:) ঘটনাটি ওই একই বিষয়ে অর্থাৎ মৃতকে পুনরায় জীবিত করা। ইবরাহিমের (আ:) মনে প্রশ্ন জাগল- আল্লাহ কিভাবে মৃতকে জীবিত করেন। মানসিক এ প্রশ্নের জবাব ইবরাহীম (আ:) বাস্তবে পেয়ে গেলেন। যেমন আল্লাহ বলেন- ‘যখন ইবরাহীম (আ:) বলেছিলেন, হে আমার পালনকর্তা! তুমি কিভাবে মৃতকে জীবিত কর তা আমাকে দেখাও, আল্লাহপাক এরশাদ করলেন, তবে কি তুমি তা বিশ্বাস কর না? ইবরাহীম (আ:) বললেন হ্যাঁ, অবশ্যই বিশ্বাস করি, তবে এজন্যে দেখতে চাই যেন আমার অন্তর শান্ত হয়। আল্লাহপাক এরশাদ করলেন, চারটি পক্ষী লও এবং তাদেরকে নিজের কাছে রাখ। এরপর পক্ষীর টুকরা কিছু অংশ প্রত্যেক পাহাড়ের উপর রেখে দাও, এরপর তাদেরকে ডাক, তারা তোমার কাছে দৌড়ে চলে আসবে এবং নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ যে, আল্লাহ পাক অত্যন্ত প্রতাপশালী ও মহাজ্ঞানী। সূরা বাকারা, আয়াত: ২৬০।
সাঈদ এবনে যোবায়ের (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যখন আল্লাহপাক হযরত ইবরাহীমকে (আ:) তার বন্ধু বলে ঘোষণা করলেন তখন আল্লাহ পাকের হুকুমে আজরাঈল (আ:) এসে তাকে এ সুসংবাদ দিলেন। হযরত ইবরাহীম (আ:) বললেন, এ সুসংবাদের কোনো আলামত বা নিদর্শন আছে কি? ফেরেশতা বললেন, আছে, তা হলো আল্লাহ পাক আপনার দোয়া কবুল করবেন এবং আপনার প্রার্থনা মোতাবেক মৃতদের জীবিত করবেন। তখন হযরত ইবরাহীম (আ:) এ প্রশ্ন করেছিলেন, হে প্রতিপালক! তুমি কিভাবে মৃতকে জীবিত কর আমাকে দেখাও। এ প্রশ্নের জবাবে আল্লাহপাক জিজ্ঞাসা করলেন পবিত্র কুরআনের ভাষায়- ‘এতে কি তোমার বিশ্বাস নেই?’ ইবরাহীম (আ:) বললেন, ‘নিশ্চয়ই আছে। তবে আমি চাই মনের সান্ত¡না এজন্যে আমাকে দেখিয়ে দাও কিভাবে তুমি মৃতকে জীবিত কর’।
আল্লাহ পাক এরশাদ করলেন (যখন তুমি মনে সান্ত¡নার জন্যে সচক্ষে মৃতকে জীবিত করার দৃশ্য দেখতে চাও তাহলে) চারটি পাখি ধরে আনো এবং সেগুলোকে নিজের কাছে এমনভাবে লালন-পালন কর যেন তারা তোমার পোষ্য এবং তুমি যখনই ডাক তখনই তোমার ডাকে তারা হাজির হয় এবং তুমিও তাদের চিনতে পার। এরপর পাখিগুলোকে জবাই কর এবং প্রত্যেকটি পাখির হাড় মাংস প্রভৃতি একত্রিত কর, এরপর সেগুলোকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত কর এবং নিজের ইচ্ছামতো বিভিন্ন পাহাড়ে একেকটি ভাগ রেখে দাও, তারপর তুমি এদের ডাক তখন ওই পাখিগুলো আল্লাহ পাকের বিশেষ কুদরতে জীবিত হবে এবং তোমার কাছে দৌড়ে আসবে।
হযরত ইবরাহীম (আ:) আল্লাহর পাকের এই নির্দেশ লাভ করে, একটি ময়ূর, একটি মোরগ, একটি কাক, একটি কবুতর এক কথায় এই চারটি প্রাণী ধরে আনেন এবং নির্দেশ মোতাবেক চারটিকে জবাই করে একটি পাহাড়ে চারটি মাথা, অন্য একটি পাহাড়ে তাদের পা, অপর এক পাহাড়ে তাদের ধড় রেখে এলেন এবং এসব পাহাড়ের মধ্যস্থলে দণ্ডায়মান হয়ে পাখিগুলোকে ডাকলেন এবং একেকটি করে অঙ্গ ছুটে আসে এবং একটির সাথে আরেকটি একত্রিত হয়। এভাবে প্রত্যেকটি জীবিত হয়ে তার কাছে চলে আসে। প্রত্যেকটি পাখির প্রতিটি রক্তবিন্দু একটি আরেকটির সাথে মিশ্রিত হয়ে এবং প্রতিটি হাড় পরস্পর মিলিত হয়ে হযরত ইবরাহীমের (আ:) সম্মুখে মস্তকবিহীন একটি দেহে পরিণত হয় এবং এরপর দেহটি নিজ নিজ মস্তকের সাথে মিলিত হয় আর এভাবে প্রতিটি প্রাণী পুনর্জীবন লাভ করে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে এ প্রক্রিয়াটি ছিল অত্যন্ত অভিনব, বিস্ময়কর, অস্বাভাবিক কিন্তু আল্লাহ পাকের কাছে কোনো কিছুই যে অসম্ভব নয়। তার জন্যে সবই সহজ সম্ভব, কেননা তিনি সর্বশক্তিমান, তিনি মহাজ্ঞানী।’
কুরআনের বিশেষ বিশেষ অংশ মানুষের বিবেক-বিবেচনা, চিন্তাভাবনা, ধ্যাণ-ধারণ ইত্যাদির যথেষ্ট উদ্রেক করার মতো সত্যিকার অর্থে জোরালো বা প্রভাবশালী। সূরায়ে আল-ক্বিয়ামাহ ৩১ নং আয়াত থেকে ৪০ নং আয়াতগুলো আলোচ্য বিষয়ে উল্লেখযোগ্য ।
প্রসঙ্গত আল্লাহর সে বাণীটি আমাদের দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস ও স্মরণ রাখতে হবে তাহলে সত্যিকার মৃত্যু মুহূর্ত আসার আগে আমরা কাল্পনিক বা শঙ্কিত মৃত্যুর ভয়ে ভীত হবো না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে রাসূল! আপনি বলে দিন, আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত আমি তো আমার নিজের জন্য কোনো অকল্যাণ বা কল্যাণের মালিক নই। প্রত্যেক উম্মতের জন্য (মৃত্যুর) একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে; যখন তাদের সেই নির্দিষ্ট সময় এসে পৌঁছে যাবে, তখন তারা মুহূর্তকালও বিলম্ব করতে বা এগুতেও পারবে না। সূরা ইউনুস, আয়াত : ৪৯। আলোচ্য আয়াত সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে প্রত্যেক মানুষের মৃত্যুমুহূর্ত পূর্বনির্ধারিত। পূর্ব নির্ধারিত মুহূর্তেই প্রত্যেক মানুষ মৃত্যুবরণ করবে
এক মুহূর্ত আগেও নয় এক মুহূর্ত পরেও নয়।
বিশ্বের সব মানুষ জন্মগ্রহণ করার মানে পরকালীন চিরস্থায়ী অস্তিত্বের অধিকারী হয়ে গেল। কোনো দিন না বিলীন হবে, না নিশ্চিহ্ন হবে; তবে সাময়িক বিবর্তন হবে। যেকোনো মানুষ ছিল অস্তিত্বহীন এবং নিশ্চিহ্ন। মা-বাবার মাধ্যমে আসে মাতৃগর্ভে এবং সর্বাধিক ১০ মাস ধরে হতে থাকে বিবর্তন। একসময় গঠিত হলো পূর্ণাঙ্গ দেহ কিন্তু নি®প্র্রাণ, কোনো এক সময় পেল প্রাণ, হলো জীবিত। এ জীবিতাবস্থায় যারা জন্মগ্রহণ করল তারা হয়ে গেল চিরস্থায়ী। কিছু সময় পার্থিব জীবনে কাটাবে, পূর্বনির্ধারিত সময় শেষ হলে বরণ করবে মৃত্যু, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মিশে যাবে মাটিতে কিন্তু দ্বিতীয় শিংগা ফুঁক দেয়ার পর সবাই সমবেতভাবে হাশরের মাঠে গিয়ে দাঁড়াবে, হবে হিশাব-নিকাশ, অতিক্রম করতে শুরু করবে পুলসিরাত তবে একদল সফল হবে আর অন্য একদল ব্যর্থ হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে, হবে পাপ-পুণ্যের ওজন মিজানে তন্মধ্যে একদল সরাসরি প্রবেশ করবে জান্নাতে আর একদল বিভিন্ন মেয়াদে প্রবেশ করবে জাহান্নামে এবং মেয়াদোত্তীর্ণ হলে ফেরত আসবে জান্নাতে। পরিণামে একদল হবে চিরস্থায়ী জাহান্নামবাসী আর একদল হবে চিরস্থায়ী জান্নাতবাসী চিরকালের জন্য। উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো জীবিত জন্মপ্রাপ্ত প্রত্যেক মানুষ বিবর্তনের মধ্য দিয়ে চিরস্থায়ী জীবিত। সম্মানিত পাঠক ভাই ও বোনেরা! দয়া করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন চিরস্থায়ী জীবনে আপনি আপনাকে কোন অবস্থানে রাখার জন্য সচেষ্ট হবেন, জান্নাতে না জাহান্নামে? এবং আপনার সিদ্ধান্ত মোতাবেক অবশ্যই হতে হবে আপনার কর্মপন্থা, চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণা যা আন্তরিক এবং এ দুটাই হবে বিচারের মাপকাঠি। সৎ চিন্তা, সৎ ভাবনা, সৎ ধ্যান-ধারণা এবং সৎকর্ম ইত্যাদি হবে জান্নাতবাসী হওয়ার উপকরণ তবে অবশ্যই ঈমান থাকতে হবে অন্যথায় হবে বিকল্প স্থান জাহান্নামবাসী চিরকালের জন্য যদি ঈমানহারা মৃত্যুবরণ করে। ভেবে দেখুন দুটো জীবনের মধ্যে কোন জীবনটাকে প্রাধান্য দেবেন, অস্থায়ী পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী জীবনটাকে স্বেচ্ছাচারিতার মধ্যে কাটিয়ে, না পরকালের চিরস্থায়ী জীবনটাকে ইসলামধর্ম পালন করে? সিদ্ধান্ত অবশ্যই আপনার। প্রয়োজনে ধর্মীয় জ্ঞানে জ্ঞানী লোকের পরামর্শ নিতে পারেন।
হে আল্লাহ! দয়া করে আমাদের পরিপূর্ণ মুত্তাকি, মুমিন এবং মুসলিম হওয়ার তাওফিক দান করুন যাতে করে আমরা কুরআনের প্রত্যেকটি বাণী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে পারি দ্বিধা-দ্বন্দ্ব মুক্ত হয়ে আমাদের উভয় জগতের কল্যাণের স্বার্থে ।
লেখক : সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্স অব বাংলাদেশ ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা