রোগীকে সান্ত্বনা দেয়া ইবাদত
- ডা: মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
- ০৪ জুন ২০২৪, ০০:০৫, আপডেট: ০৬ জুন ২০২৪, ০৫:৪১
রোগীর দেখভাল করা, সেবা ও সান্ত¡না দেয়া ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে ইবাদত এবং মহানবী সা:-এর একটি মর্যাদাপূর্ণ সুন্নত। কোনো কোনো ইসলামী আইনজ্ঞ এটিকে ওয়াজিবও বলেছেন। রোগীর সেবা প্রদানের মাধ্যমে সেবাকারীর ঈমান ও সমাজে সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। সামগ্রিক প্রচেষ্টা ও সচেতনতার মাধ্যমে বড় ধরনের বিপর্যয় রোধ করা যায়।
রোগীর সেবা বা খোঁজখবর নেয়া শুধু সামাজিক দায়বদ্ধতা নয়; বরং এটি এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের দ্বীনি অধিকার। কোনো অসুস্থ ব্যক্তির প্রতি সমবেদনা, সহানুভূতি ও সহযোগিতা থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমাকে সেবা করোনি। বান্দা বলবে, হে প্রভু! আপনি তো সব সৃষ্টির প্রতিপালক, আমি কিভাবে আপনার সেবা করতাম? আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, তুমি তার সেবা করোনি, তুমি যদি তার সেবা করতে তাহলে সেখানে আমাকে পেতে!’ (সহিহ মুসলিম) অন্যত্র রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের ছয়টি হক রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো- কোনো মুসলমান যখন অসুস্থ হয়ে যাবে তখন তার সেবা করা।’ (মুসলিম)
অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজখবর নেয়া বা তাকে দেখতে যাওয়া বা তার কোনো সহযোগিতা করা অনেক ফজিলত ও মর্যাদার কাজ। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যখন কোনো বান্দা তার অসুস্থ মুসলমান ভাইকে দেখতে যায় অথবা তার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য যায় তখন একজন ফেরেশতা উচ্চস্বরে আকাশ থেকে চিৎকার করে বলেন, তুমি ভালো থাকো, তোমার চলাফেরা ভালো ছিল, তুমি বেহেশতে ঠিকানা করে নিয়েছ।’ (তিরমিজি) সুতরাং মহামারী করোনাসহ যাবতীয় রোগব্যাধিতে আক্রান্ত অন্য মুসলিম ভাইয়ের সেবায় নিজেদের সম্পৃক্ততা হবে কল্যাণের। কেননা, সাক্ষাৎ করা বা ধরাছোঁয়া ছাড়াও অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করা সম্ভব। আর তাতে সে হতে পারে জান্নাতের অধিকারী। এ ছাড়া মুমিন মুসলমান অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া করার মাধ্যমে এ হক আদায় করতে পারে।
হাদিসে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য একাধিক দোয়া রয়েছে। হজরত ইবনে আব্বাস রা: বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা: যখন কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন তখন তার শিয়রে বসতেন তারপর সাতবার ‘আসআলুল্লাহাল আজিমা রাব্বাল আরশিল আজিমি আই-ইয়াশফিয়াকা’ পড়তেন। অর্থ-‘আমি মহান আরশের মালিক আল্লাহর কাছে তোমার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছি।’ প্রিয়নবী সা: বলেছেন, ‘যদি তার মৃত্যু নির্ধারিত হয়ে না থাকে তবে সে অবশ্যই সুস্থ হয়ে যাবে।’ (মিশকাত) রোগীর কাছে গিয়ে তার কুশলাদি জিজ্ঞাসা করা, তার জন্য সুস্থতার দোয়া করা। রাসূলুল্লাহ সা: যখন অসুস্থ ব্যক্তির কাছে পৌঁছতেন তখন জিজ্ঞাসা করতেন, ‘তোমার অবস্থা কেমন? এরপর সান্ত¡না দিয়ে বলতেন, ‘লা বা’সা তুহুরা ইনশাআল্লাহ।’ অর্থ-ভয়ের কোনো কারণ নেই, আল্লাহর ইচ্ছায় সুস্থ হয়ে যাবে।’ রোগীর কষ্ট লাঘবে দোয়া, উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আজহিবিল বা’সা রাব্বান্নাসি ইশফিহি ওয়া আনতাশ শাফি লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা লা ইউগাদিরু সুক্বমা।’ অর্থ- ‘হে আল্লাহ! এ কষ্টকে দূর করে দাও। হে মানুষের প্রভু! তাকে সুস্থতা দান করো। তুমিই সুস্থতা দানকারী। তুমি ছাড়া আর কারো কাছে সুস্থতার আশা নেই। এমন সুস্থতা দান করো যে, রোগের নাম নিশানাও যেন না থাকে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
যেকোনো মহামারী প্রাদুর্ভাবের সময় যারা অসুস্থ তাদের মনোবল বাড়াতে বেশি বেশি খোঁজখবর নেয়াসহ মানসিকভাবে তাদের আশ্বস্ত করা সবার জন্য জরুরি। আর তাদের জন্য হাদিসে শেখানো দোয়াগুলোর মাধ্যমে তাদের সুস্থতা কামনা করা।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা