১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কে মৃতদেরকে জীবিত করবে

-


[প্রথমাংশ]
আরবের কোনো এক কাফের বা মুশরিক বলেছিল ‘মৃতকে কে জীবিত করবে (জাহান্নামে নিক্ষেপ করা বা জান্নাত দানের জন্য)?’ সূরা ইয়াসিন, আয়াত : ৭৮। উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তরে মহান আল্লাহ তার প্রিয় রাসূল সা:কে বললেন, হে রাসূল! আপনি বলুন, যিনি প্রথমবার এগুলোকে (মৃত মানুষকে) সৃষ্টি করেছিলেন, তিনিই তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করবেন এবং প্রত্যেকটি সৃষ্টি সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন। সূরা ইয়াসিন আয়াত : ৭৯। মানুষ ক্ষুদ্র জ্ঞান বা ক্ষুদ্র শক্তির অধিকারী। ফলে তাদের চিন্তাধারা সে অনুসারেই হয়ে থাকে। প্রমাণ আল্লাহর বাণী-১. ‘হে রাসূল! তারা আপনাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। আপনি বলুন, রূহ আমার রবের আদেশ থেকে, আর তোমাদেরকে আল্লাহর জ্ঞান থেকে অতি সামান্যটুকুই দেয়া হয়েছে।’ সূরা বনী-ইসরাঈল, আয়াত : ৮৫। ২. ‘আল্লাহ তোমাদের ওপর তার বিধিবিধান সহজ করতে চান, কারণ মানুষকে দুর্বলরূপে সৃষ্টি করা হয়েছে।’ সূরা আন-নিসা, আয়াত : ২৮।

উপরোক্ত আয়াতদ্বয় দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত, মানবজাতির জ্ঞান ও শারীরিক শক্তি নগণ্য। ফলে নগণ্য জ্ঞান ও শক্তি দ্বারা সীমাহীন জ্ঞানী ও মহাশক্তিধর আল্লাহর কার্যাবলি আয়ত্ত করা স্বভাবত কিছুতেই সম্ভব নয়। তাই তারা তাদের অবাস্তব প্রশ্নাবলি রাসূল সা:কে করত। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা সবকিছু খুলে খুলে বলে দিয়েছেন, যাতে করে মানবজাতি কুরআন থেকে জ্ঞান সঞ্চয় করে ভ্রান্ত ধারণার পরিবর্তে সঠিক ধারণা পেতে পারে এবং ভ্রান্ত পথের পরিবর্তে সঠিক পথের পথিক হতে পারে। আমরা মানুষেরা যদি এ জ্ঞানটুকু কুরআন থেকে অর্জন করি ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান’ (সূত্র-সূরা বাকারাহ, আয়াত : ২০) ‘যা আল্লাহ ইচ্ছা করেন তাই তিনি করতে পারেন।’ তাহলে কিছুতেই অবান্তর ও অযৌক্তিক প্রশ্নগুলো আমরা উত্থাপন করতাম না।

সীমাহীন শক্তিধর আল্লাহ যখন কোনো কিছু করতে বা সৃষ্টি করতে ইচ্ছা পোষণ করেন তখন এ বলে আদেশ করেন (উদ্দিষ্ট বস্তু) ‘হয়ে যাও’, তখন তা তৎক্ষণাৎ বা যথাসময়ে হয়ে যায়। প্রমাণ আল্লাহর বাণী ‘আল্লাহ পাকের নিয়ম-নীতি এই, তিনি যখন কোনো কিছুর ইচ্ছা পোষণ করেন, তখন তিনি তাকে বলেন, ‘হও’ ফলে তা হয়ে যায়। সূরা ইয়াসিন, আয়াত : ৮২। হজরত ইবরাহিম আ:কে নিক্ষিপ্ত অতুলনীয় অগ্নিকুণ্ডকে আল্লাহ আদেশ করলেন, আমি (আল্লাহ) বললাম, ‘হে অগ্নিকণ্ড তুমি হয়ে যাও শীতল এবং আরামদায়ক ইবরাহিমের জন্য’। সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত : ৬৯। প্রচণ্ড জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড তৎক্ষণাত তাই হয়ে গেল এবং ইবরাহিম আ: তন্মধ্যে শান্তিতে বসবাস করতে থাকলেন, জান্নাত থেকে আসা পানাহার গ্রহণ করছিলেন এবং জান্নাতের পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করলেন।

মৃতকে জীবিত করা সীমাহীন শক্তিধর আল্লাহর জন্য শুধু একটি আদেশের ব্যাপার মাত্র। পার্থিব জীবনে এ মহাসত্যের উদাহরণ আমাদের অধিকাংশ মানুষেরই জানা- হজরত ঈসা আ: কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ‘কুমবিয়িজনিল্লাহ’ (অর্থাৎ আল্লাহর হুকুমে জীবিত হয়ে যাও) উচ্চারণ করতেই কবরবাসী জীবিত হয়ে ভৃ-পৃষ্ঠে চলে আসত এমনকি কিছু বছর ধরে পৃথিবীতে অবস্থান করত, প্রশ্ন উত্তরে অংশগ্রহণ করত।
হজরত মূসা আ:-এর যুগে সম্পদলোভী ভাতিজার হাতে নিহত একজন ব্যক্তির হত্যাকারীকে চিহ্নিত করার ব্যাপারে সমাজে বিশাল ধরনের বাগি¦তণ্ডার সৃষ্টি হয়েছিল। এমতাবস্থায় আল্লাহ তায়ালা তার ফায়সালা করিয়ে দিলেন যা নিম্নোক্ত আয়াতদ্বয়ে বর্ণনা করা হয়েছে- ‘আল্লাহর আদেশক্রমে নিহত ব্যক্তি জবাই করা গরুর গোশতের আঘাতে জীবিত হয়ে হত্যাকারীর নাম প্রকাশ করেই পুনরায় মৃত্যুবরণ করল।’ আর স্মরণ করো, যখন তোমরা একজনকে হত্যা করলে অতঃপর সে ব্যাপারে একে অপরকে দোষারোপ করলে। আর আল্লাহ প্রকাশ করে দিলেন তোমরা যা গোপন করছিলে। অতঃপর আমি (আল্লাহ) বললাম, তোমরা তাকে আঘাত কর গাভীটির গোশতের কিছু অংশ দিয়ে। এভাবে আল্লাহ জীবিত করেন মৃতদেরকে। আর তিনি তোমাদেরকে তার নিদর্শনগুলো দেখান, যাতে তোমরা বুঝতে পারো। সূরা বাকারাহ, আয়াত : ৭২-৭৩।

উপরোক্ত ঘটনা ও আয়াতদ্বয় নিঃসন্দেহে আল্লাহর সীমাহীন শক্তির স্বাক্ষর সন্দেহাতীতভাবে বহন করে বিশেষ করে মৃতকে জীবিত করার ব্যাপারে।
আদম আ: থেকে শুরু করে বিশ্বের সর্বশেষ আগত ব্যক্তি/ব্যক্তিরা মৃত্যুর পর নিম্নবর্ণিত উপায়ে একই সময় জীবিত হবে এবং আল্লাহর সামনে একত্রিত হবে, যার প্রমাণ আল্লাহর বাণী ‘যখন শিঙ্গায় (দ্বিতীয়) ফুঁক দেয়া হবে তখনই তারা কবর থেকে তাদের পালনকর্তার দিকে ছুটে আসবে। তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! আমাদেরকে আমাদের ঘুমের জায়গা থেকে কে উঠাল? (তাদেরকে জবাব দেয়া হবে) এটা হলো তাই, যার ওয়াদা দয়াময় আল্লাহ দিয়েছিলেন, আর রাসূলরাও সত্য কথাই বলেছিলেন। এটা ছিল শুধুই একটি বিকট আওয়াজ; ফলে তৎক্ষণাৎ তাদের সবাইকে আমার সামনে উপস্থিত করা হবে।’ সূরা ইয়াসিন, আয়াত : ৫১-৫৩।

আলোচ্য আয়াতত্রয় থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়, সব মানুষ জীবিত হয়ে হাশরের মাঠে আল্লাহর সামনে সমবেত হবে। তাহলে চূড়ান্তভাবে কি প্রমাণিত হলো না, পচে গলে যাওয়া হাড়গুলো রক্ত-মাংসে আবৃত হয়ে প্রাণ ধারণ করত পুনরায় জীবিত হয়ে উঠবে? উত্তর : নিশ্চয়ই প্রমাণিত হলো সব মানুষের পুনরায় জীবিত হওয়ার সত্যতা। এ ক্ষেত্রে উপরোক্ত প্রশ্নকারীর সে উত্তরটি (‘কে জীবিত করবে এ হাড়কে, যখন তা পচে গলে যাবে?’) পাওয়া গেল।
এসব প্রশ্ন ধর্মজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞতাপ্রসূত নয় কি? নিশ্চয়ই তাই। আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখা বাঞ্ছনীয়, ধর্মীয় জ্ঞানই মানবজাতির সর্বোচ্চ সম্পদ, অর্থবৃত্ত নয়।
হে আল্লাহ! দয়া করে আমাদেরকে পরিপূর্ণ মুত্তাকি, মুমিন এবং মুসলিম হওয়ার তাওফিক দান করুন, যাতে করে আমরা কুরআনের প্রত্যেকটি বাণী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে পারি দ্বিধা-দ্বন্দ্ব মুক্ত হয়ে আমাদের উভয় জগতের কল্যাণের জন্য।
বি: দ্র: ইনশা আল্লাহ দ্বিতীয় অংশে থাকবে সূরা আল-বাকারার ২৪৩ নং আয়াত অবলম্বনে নাতিদীর্ঘ অবিশ্বাস্য অত্যাশ্চার্য সত্য ঘটনা অর্থাৎ মৃত্যু থেকে পলায়নরত হাজার হাজার মানুষের একই সাথে মৃত্যু এবং পচে-গলে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পর তাদের পুনরুজ্জীবন লাভের ঘটনার বিবরণ।
লেখক : সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ

 

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement