১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ সা:

-

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানবজাতির হেদায়াতের জন্য যুগে যুগে নবী-রাসূল প্রেরণ করেন। হজরত আদম আ: থেকে শুরু করে হজরত মুহাম্মদ সা: পর্যন্ত পৃথিবীতে অনেক নবী-রাসূল আগমন করেছেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের হেদায়াতের উদ্দেশ্যে নবীদের মাধ্যমে বহু আসমানি কিতাবও অবতীর্ণ করেছেন। এমন কোনো ভূখণ্ড নেই, এমন কোনো জাতি নেই, যেখানে আল্লাহর বার্তাবাহক আবির্ভূত হননি। পবিত্র কুরআন এ মর্মে ঘোষণা করেছে- ‘এমন কোনো সম্প্রদায় নেই, যাদের কাছে কোনো সতর্কবাণী আগমন করেনি’, সব নবী-রাসূলের উদ্দেশ্য, মূলধর্ম ও শিক্ষা ছিল এক ও অভিন্ন। প্রত্যেকেই ছিলেন একে অন্যের সমর্থক। তাঁরা ছিলেন মানবসমাজের দরদি, হিতাকাক্সক্ষী ও পরম বন্ধু। নবীদের বরকতময় কাফেলার সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হলেন হজরত মুহাম্মদ সা:। তাঁর আগে যত নবী-রাসূলের আবির্ভাব হয়েছে তাঁদের কেউই সমগ্র জগতের পথপ্রদর্শকরূপে প্রেরিত হননি। তাঁদের প্রত্যেকেই প্রেরিত হয়েছিলেন নির্দিষ্ট কোনো দেশ বা জাতির হিদায়াতের জন্য। এ কারণে একই সময়ে একাধিক নবীও আবির্ভূত হয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘আমার আগে রাসূলরা নিজ সম্প্রদায়ের হিদায়াতের জন্যই প্রেরিত হয়েছেন, আর আমি প্রেরিত হয়েছি সমগ্র জগতের জন্য।’
তাঁদের ধর্মগ্রন্থ এবং ধর্মবিধান ছিল নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। সময় অতীত হয়ে গেলে বিধানও রহিত হয়ে যেত। আবার নতুন রাসূলের আবির্ভাব হতো এবং নতুন কিতাব অবতীর্ণ হতো।
সর্বশেষে আল্লাহ তায়ালা প্রেরণ করেন সৃষ্টির সেরা মহামানব, নিখিল বিশ্বের অনন্ত কল্যাণ, মানবকুলের পরম ও চরম আদর্শ, নবী-রাসূলদের শিরোমণি হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা সা:-কে। তিনি সবশেষ নবী ও রাসূল। তাঁরপর আর কোনো নবীর আবির্ভাব হবে না। তাই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারিমের সূরা আল-মায়িদার তিন নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন- ‘আমি আপনার ধর্ম পরিপূর্ণ করে দিলাম। আমার নিয়ামত আপনার প্রতি সমাপ্ত করলাম এবং ধর্ম হিসেবে ইসলামকে আপনার জন্য মনোনীত করলাম।’ এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছিল দশম হিজরি সনের ৯ জিলহজ। এর আগে পঞ্চম হিজরিতে এ সুসংবাদ আরো একবার ঘোষিত হয়েছে। কুরআন মাজিদের সূরা আল-আহজাবের ৪০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- ‘মুহাম্মাদ সা: তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী।’
সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘আনা খাতামুন নাবিয়্যিনা লা নাবিয়্যা বা’দি’ অর্থাৎ- ‘আমিই শেষ নবী, আমার পরে আর কোনো নবী আসবে না।’ (তিরমিজি-২/৪৫)
অন্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: একটি দৃষ্টান্ত দিয়েছেন, তাঁর শেষনবী হওয়ার বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার এবং অন্যান্য রাসূলের উদাহরণ হলো এরূপ, যেমন কোনো একটি সুরম্য অট্টালিকা নির্মিত হলো। বহু লোক সমবেত হয়ে এর মনোরম দৃশ্য অবলোকন করতে লাগল। তারা সবাই বাহবা বলে খুব প্রশংসা করতে লাগল; কিন্তু এই সুরম্য অট্টালিকার এক কোণে একটি ইটের স্থান খালি দেখে তারা বলতে লাগল আহা! যদি এই শূন্য স্থানটি পূর্ণ হতো, তাহলে কতই না সুন্দর হতো! তারপর রাসূল সা: বলেন, ‘ফা আনাল্লাবনাতু ওয়া আনা খাতামুন নাবিয়্যিন’ অর্থাৎ- ‘আমিই সেই শূন্য স্থান পূর্ণকারী ইট; আর আমিই সর্বশেষ নবী।’
‘ইন্নার রাসালাতা ওয়ান্নাবুয়্যাতা ক্বাদ ইন ক্বাতাআত ফালা রাসূলা বা’দি অলা নাবিয়্যা’
অর্থাৎ, নিশ্চয় রিসালাত ও নবুয়াতের ধারা বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং আমার পর আর কোনো রাসূলও হবে না। কোনো নবীও হবে না।
রাসূলুল্লাহ সা: হজরত ওমর রা:-এর প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন, ‘ওয়ালাও কানা নাবিয়্যু বা’দি লাকানা ওমারুবনুল খাত্তাবি’।
অর্থাৎ- আমার পরে কারো নবী হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে, খাত্তাবের পুত্র ওমর হতেন।
কুরআন ও হাদিসের দ্ব্যর্থহীন ভাষ্য মতে সুস্পষ্ট যে, হজরত মুহাম্মদ সা: হলেন সর্বশেষ নবী, তারপর আর কোনো নবী হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত এবং মুসলমানদের আকিদা ও বিশ্বাস হলো, নবীদের বরকতময় কাফেলার সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হলেন হজরত মুহাম্মদ সা:।
লেখক : ইসলামী কলামিস্ট, মজলিশপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া


আরো সংবাদ



premium cement