১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

‘লাইলাতুল কদর : মহিমান্বিত এক রাতের নাম’

-


রমজানের বেদনার বিদায়ক্ষণে মুমিন-মুসলমানের কাছে এমন এক রাত আসছে, যার সম্পর্কে করুণাময় মহান আল্লাহ বলেছেন- ‘আমি এ (কুরআন) নাজিল করেছি কদরের রাতে। তুমি কি জানো, কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চাইতেও উত্তম। ফেরেশতারা ও রূহ এই রাতে তাদের রবের অনুমতিক্রমে প্রত্যেকটি হুকুম নিয়ে নাজিল হয়। এ রাতটি পুরোপুরি শান্তিময় ফজরের উদয় পর্যন্ত’ (সূরা আল কদর)। মুফাসসিররা সাধারণভাবে এর অর্থ করেছেন, এ রাতের সৎ কাজ হাজার মাসের সৎ কাজের চেয়ে ভালো। কদরের রাত এ গণনার বাইরে থাকবে। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কদরের রাতে ঈমানের সাথে এবং আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিদান লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদতের জন্য দাঁড়াল তার পেছনের সব গোনাহ মাফ করা হয়’ (বুখারি, মুসলিম)। ‘কদরের রাত হাজার মাসের চাইতেও উত্তম।’ এখানে হাজার মাস বলতে এক হাজার তথা গুণে গুণে ৮৩ বছর চার মাস বুঝানো হয়নি। তাফসিরে বলা হয়েছে যে, আরববাসীর কথার ধরন এমন ছিল যে, কোনো জিনিসের আধিক্য বা বিপুল সংখ্যার ধারণা দেয়ার জন্য তারা ‘হাজার’ শব্দটি ব্যবহার করত। আমাদের দেশেও এ ধরনের কথা প্রচলিত আছে। যেমন বলা হয়ে থাকে ‘ওই কাজে আমার হাজার হাজার টাকা ব্যয় হয়ে গেছে।’

এখানে টাকার পরিমাণ এক বা দুই হাজার নয়; বরং বিপুল সংখ্যা ধারণা দেয়ার জন্য ‘হাজার হাজার’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তাই আয়াতের অর্থ হচ্ছে, এই একটি রাতে এতবড় নেকি ও কল্যাণের কাজ হয়েছে যা মানবতার সুদীর্ঘ ইতিহাসে কোনো দীর্ঘতম কালেও হয়নি।
লাইলাতুল কদরের অতীব মর্যাদা ও গুরুত্বের কথা বলা হলেও রাতটিকে সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। অবশ্য এর একটি কারণ রয়েছে যেমন এ প্রসঙ্গে হজরত মুয়াবিয়া রা:, হজরত ইবনে ওমর রা:, হজরত ইবনে আব্বাস রা: এবং অন্যান্য সাহাবি যে রেওয়ায়েত করেন তার ভিত্তিতে পূর্ববতী আলেমদের বিরাট অংশ ২৭ রমজানকেই কদরের রাত বলে মনে করেন। সম্ভবত কদরের রাতের শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ম্য থেকে লাভবান হওয়ার আগ্রহে যাতে লোকেরা অনেক বেশি রাত ইবাদতে কাটাতে পারে এবং কোনো একটি রাতকে যথেষ্ট মনে না করে সে জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে কোনো একটি রাত নির্র্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। এ জন্যই রাসূলুল্লাহ সা: রমজানের শেষের ১০টি দিন মসজিদে অবস্থান করতেন, ইসলামের ইতিহাসে যাকে ইতেকাফ বলা হয়। মুমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা: বর্ণনা করেন- রাসূলুল্লাহ সা: ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত রমজানের শেষ ১০ রাতে ইতেকাফ করেছেন’ (বুখারি, মুসলিম)। রমজানের শেষ দশক শুরু হলে রাসূল সা: রাতগুলোতে জেগে থাকতেন এবং ঘরের লোকদের জাগিয়ে দিতেন।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, তাকে খোঁজ রমজানের শেষ ১০ রাতের মধ্যে যখন মাস শেষ হতে আর ৯ দিন বাকি থাকে অথবা সাত দিন বা পাঁচ দিন বাকি থাকে (বুখারি)। অধিকাংশ আলেম এর অর্থ করেছেন এভাবে যে, রাসূলুল্লাহ সা: এখানে বেজোড় রাতের কথা বলতে চেয়েছেন। অর্থাৎ রমজানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ তারিখ বুঝায়। এ সম্পর্কে হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা: থেকে সরাসরি হাদিস রয়েছে। তিনি বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কদরের রাতকে রমজানের শেষ ১০ রাতের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে তালাশ করো’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি)।
সুতরাং আসুন লাইলাতুল কদর থেকে সঠিক ফায়দা হাসিলের সাথে সাথে আল কুরআনের জ্ঞানে নিজেদের সিক্ত করি এবং কুরআন অনুযায়ী নিজেদের ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করি। কারণ আল কুরআন থেকেই আমরা জানতে পারি যে, এই কুরআন যার ওপর অবতীর্ণ হয়েছে, তিনি শ্রেষ্ঠ নবী হয়েছে, এই কুরআনের বদৌলতে, তাঁর সাথীরা উম্মতের শ্রেষ্ঠ মানব হয়েছেন, এই কুরআন যেই যুগে নাজিল হয়েছে রাসূলুল্লাহ সা: সেই যুগ সম্পর্কে বলেছেন, ‘খাইরুল কুরুনি কারনি’ আমার যুগই হলো শ্রেষ্ঠ যুগ, এই কুরআন যে মাসে অবতীর্ণ হয়েছে সেই মাস বাকি ১১ মাস থেকে শ্রেষ্ঠ মাস এবং এই কুরআন যে রাতে নাজিল হয়েছে সেই রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রাত। যাকে আমরা কদরের রাত বলে এতক্ষণ আলোচনা করলাম।
লেখক : প্রবন্ধকার


আরো সংবাদ



premium cement