যেসব কারণে কবরে আজাব হয়
- মো: আবদুর রহমান
- ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০৫, আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪০
আল্লাহর আদেশ-নিষেধ অমান্য করা এবং গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া কবর আজাবের অন্যতম কারণ। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বিভিন্ন কারণে কবরে আজাব হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো।
শিরক করা
‘শিরক’ এর অর্থ হলে আল্লাহর সঙ্গে সত্তা, গুণ ও ইবাদতে অন্য কাউকে শরিক বা অংশীদার করা। শিরক মারাত্মক কবিরা গুনাহ। এ কারণে কবরে শাস্তি হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আর অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা আল মায়িদাহ : ৭২) মূলত যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করে এবং সে অবস্থায় যদি তার মৃত্যু হয় তাহলে সে অবশ্যই জাহান্নামে যাবে।
মুনাফেকি স্বভাব
মুনাফিক একটি কুরআনিক পরিভাষা। যার অর্থ একজন প্রতারক বা ‘ভন্ড ধার্মিক’ ব্যক্তি। যে মুখে ইসলাম প্রকাশ করে; কিন্তু অন্তরে কুফরি বা ইসলামের প্রতি অবিশ্বাস লালন করে। আর এ ধরনের প্রতারণাকে বলা হয় নিফাক।
মুনাফিকরা ভণ্ড, কপট ও ধোঁকাবাজ স্বভাবের হয়। মুনাফিকি আচরণ ঈমানের আলোকে নির্বাপিত করে দেয়। মুনাফেকি স্বভাবের ব্যক্তিরা কবরে শাস্তি পাবে। মুনাফিকরা অভিশপ্ত, অবাধ্য, ফাসিক ও নিশ্চিত জাহান্নামি। কুরআনের একাধিক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মুনাফিক নারী ও পুরুষদের নিশ্চিত জাহান্নামি ঘোষণা করেছেন। সেখানে তাদের চিরকাল থাকতে হবে তা-ও নিশ্চিত করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী ও কাফেরদের জন্য জাহান্নামের আগুনের প্রতিশ্রুতি। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটিই তাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাদের অভিশাপ করেছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী শাস্তি।’ (সুরা তাওবা: ৬৮)
মুনাফিকদের পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘মুনাফিকরা অবশ্যই জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে এবং তাদের জন্য তুমি কখনো কোনো সাহায্যকারীও পাবে না।’ (সুরা নিসা: ১৪৫)।
নামাজ আদায় না করা
নামাজ সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ও জ্ঞানসম্পন্ন মুসলমানের জন্য দিনে রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য। নামাজ আদায় না করার কারণে কবরে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। কবরে বেনামাজির শাস্তি সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘কবরে একজন ফেরেশতা মোতায়েন করা হবে। যদি কোনো ব্যক্তি দুনিয়াতে জোহরের নামাজ কাজা করে থাকে, তাহলে সে তাকে লৌহদন্ড দিয়ে আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত মারতে থাকবে। যদি আসরের নামাজ কাজা করে থাকে, তাহলে সেই ফেরেশতা তাকে মাগরিব পর্যন্ত প্রহার করতে থাকবে। এভাবে মাগরিবের নামাজ কাজা হলে এশা পর্যন্ত, এশার নামাজ কাজা করলে ফজর পর্যন্ত, আর ফজরের নামাজ কাজা হলে জোহরের ওয়াক্ত পর্যন্ত ফেরেশতা তাকে লৌহদন্ড দিয়ে পেটাতে থাকবে। সেই ফেরেশতা যখন তাকে লৌহদন্ড দিয়ে আঘাত করবে, তখন ওই ব্যক্তি আঘাতের তীব্রতায় কবরের ভেতর সত্তর হাত পর্যন্ত মাটির নিচে ঢুকে যাবে। এরপর আবার বেরিয়ে আসবে, ফেরেশতা পুনরায় তাকে আঘাত করবে। এভাবে সে পেটাতে থাকবে।
গিবত বা পরনিন্দা করা
কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ-ত্রুটি অন্যের কাছে প্রকাশ করাকে গিবত বা পরনিন্দা বলে। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে গিবত খুবই জঘন্য ও নিন্দনীয় কাজ এবং কবিরা গুনাহ। গিবতের কারণে গিবতকারীকে কবরে শাস্তি দেওয়া হবে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসুল (সা:) দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি থমকে দাঁড়ালেন এবং বললেন ‘এই দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে তাদেরকে তেমন কোনো বড় গুনাহের কারণে এ শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। এদের একজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে গিবত করার কারণে এবং অন্যজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে প্র¯্রাব করার পর উত্তমরূপে পবিত্র না হওয়ার কারণে।’ এরপর রাসুল (সা:) খেজুর গাছের একটি তাজা ডালকে দু’ভাগ করে প্রত্যেক কবরের ওপর একটি করে গেড়ে দিলেন। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এমন করলেন কেন? রাসুল (সা:) বললেন, ‘ডাল দু’টি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত হয়তো তাদের শাস্তি লাঘব হবে।’ (বুখারি: ২১৮; মুসলিম: ২৯২)
প্রস্রাবের পর পবিত্রতা অর্জনে অবহেলা
প্রাকৃতিক প্রয়োজনে প্রতিদিন একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে ৬-৮ বার প্রস্রাব করতে হয়। আর প্রস্রাব করার পর তা থেকে উত্তমরূপে পবিত্র হওয়ার জন্য পানি দিয়ে এর মলিনতা ধুয়ে ফেলতে হবে। অথচ এক্ষেত্রে অনেকে অবহেলা হয়ে থাকে। প্রস্রাব থেকে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন না করার কারণে কবরে শাস্তি পেতে হয়।
ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা:) বলেছেন, ‘প্রস্রাবের কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কবরের আজাব হয়ে থাকে। অতএব তোমরা যথাযথভাবে পবিত্রতা অর্জন করো।’ (তাবারানি : ১১১০৪)।
আবু হুরায়রা (রা:) হতে আরেক হাদিসে বর্ণিত, রাসুল (সা:) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা প্রস্রাব থেকে সতর্ক থাক। কারণ কবরের অধিকাংশ শাস্তি তা থেকে হয়ে থাকে।’ (মুসনাদে আহমাদ : ২৫২)।
এছাড়া সুদ ও ঘুষ খাওয়া, ঋণ পরিশোধ না করা, জিনা বা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া, মিথ্যা কথা বলা, হারাম গান-বাজনা করা এবং তা শ্রবণ করা, বিক্রি করার সময় ওজনে কম দেয়া এবং ক্রয় করার সময় বেশি নেয়া, উপার্জনের ক্ষেত্রে হালাল-হারামের পার্থক্য না করা, পশু-পাখি তথা প্রাণিকুলের ওপর দয়া প্রদর্শন না করা এসব কারণে কবরে আজাব হবে।
হাদিসে এসেছে, জায়েদ বিন সাবিত (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা:) বলেছেন, ‘এ উম্মত কবরে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তোমরা ভয়ে মৃত ব্যক্তিদের দাফন করা ছেড়ে না দিলে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম যেন তিনি তোমাদেরও কবরের আজাব শুনিয়ে দেন যেভাবে আমি শুনতে পাই।’ এরপর তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন, ‘আল্লাহর কাছে তোমরা জাহান্নামের শাস্তি থেকে আশ্রয় চাও।’ (মুসলিম: ২৮৬৭)
লেখক : সম্পাদক মাসিক সারস পূর্ব রূপসা, খুলনা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা