১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সিয়াম হোক নাজাতের উসিলা

-

সিয়াম বা রোজা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। যুগে যুগে প্রত্যেক নবী-রাসূলের উম্মতের উপর সিয়াম পালন বাধ্যতামূলক ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের উপরও সিয়াম পালনকে ফরজ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পারো।’ (সূরাহ আল বাকারা, আয়াত-১৮৩)
রাসূলের হাদিস থেকেও অন্যান্য নবীর উম্মতের উপর সিয়াম আদায় করা যে ফরজ ছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন-
হজরত ইবনে ওমর রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী সা: আশুরার দিন সিয়াম পালন করেছেন এবং এই সিয়ামের জন্য আদেশও করেছেন। পরে যখন রমজানের সিয়াম ফরজ হলো তখন তা ছেড়ে দেয়া হয়। (বুখারি)
আম্মাজান হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত- জাহিলি যুগে কুরাইশরা আশুরার দিন সাওম পালন করত। আল্লাহর রাসূল সা: পরে এই সাওম পালনের নির্দেশ দেন। অবশেষে রমজানের সিয়াম ফরজ হলে আল্লাহ রাসূল সা: বললেন, যার ইচ্ছা আশুরার সিয়াম পালন করবে এবং যার ইচ্ছা সে সাওম পালন করবে না।’ (বুখারি)
আলোচ্য হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, নবী-রাসূলদের উম্মতের উপর সিয়াম বাধ্যতামূলক ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের উপরও সিয়াম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সিয়াম পালনে অনেক ফজিলত রয়েছে। রোজার মাসে আল্লাহ তায়ালা শয়তানকে শিকলবন্দী করেন। জাহান্নামের দরজাও বন্ধ করে দেন এবং খুলে দেন জান্নাতের দরজাগুলো। এ ছাড়াও সৎ বান্দাদেরকে সামনে অগ্রসর হতে উৎসাহিত করা হয় এবং অসৎ লোকদের থেমে যেতে নির্দেশ করা হয়। যেমন- হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, ‘যখন রমজান আসে তখন জান্নাতের দরজাগুলো উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।’ (বুখারি)
আরেকটি হাদিসে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যখন রমজান মাসের প্রথম রাত আসে, তখন শয়তান ও অভিশপ্ত জিনদের শৃঙ্খলিত করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা হয় না, জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, এর একটি দরজাও বন্ধ হয় না এবং একজন ঘোষক ডেকে বলেন, হে সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তি! অগ্রসর হও, হে অসৎকর্মপরায়ণ! থেমে যাও। আল্লাহ (রমজানের) প্রতিটি রাতে অসংখ্য লোককে জাহান্নাম থেকে নাজাত দেন।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসায়ি, সুনানে ইবনে মাজাহ)
আরেকটি হাদিসে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, ‘রমজান এলে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় আর শয়তানকে শিকলবন্দী করে দেয়া হয়।’ (বুখারি, সুনানে আন-নাসায়ি)
রাসূল সা: সিয়ামকে ঢালস্বরূপ উল্লেখ করেছেন। জিহাদের ময়দানে সৈনিকরা যেমন নিজেকে রক্ষার জন্য শত্রুদের মোকাবেলায় ঢাল ব্যবহার করে থাকেন, ঠিক তেমনি নিজেদের ঈমান আমল রক্ষা করে জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য মুমিনদের জীবনে রোজা হচ্ছে ঢালস্বরূপ। যেমন- হজরত উসমান রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা:-কে বলতে শুনেছি, ‘যুদ্ধের মাঠে ঢাল যেমন তোমাদের রক্ষাকারী, সিয়ামও তদ্রƒপ জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার ঢাল।’ (আন নাসায়ি, সুনানে ইবনে মাজাহ)
আরেকটি হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘সিয়াম ঢালস্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দু’বার বলে, আমি সাওম পালন করছি। ওই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহ কাছে মিসকের সুগন্ধির চেয়েও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশগুণ।’ (বুখারি)
রোজার যেহেতু এত মর্যাদা সেহেতু গুরুত্বের সাথে সিয়াম পালনে যতœশীল হতে হবে। যেমন- হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তাঁর পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (বুখারি)

লেখক : চেয়ারম্যান, পলিমাটি কালচারাল একাডেমি, গাইবান্ধা।


আরো সংবাদ



premium cement