১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কালেমার ঘোষণা

-

‘তাওহিদের কালেমা’-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এমন একটি কালেমা যা আমাদেরকে ‘তাওহিদ’ তথা একমাত্র মহান রব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ইবাদত বা দাসত্বের স্বীকৃতি দেয়। আর আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টিই করেছেন এই দাসত্বের জন্য। তাই, এই কালেমার ঘোষণাকারীকে মুসলিম তথা রবের প্রতি আত্মসমর্পণকারী বলা হয়।

অতএব, তাওহিদের কালেমার ঘোষণার মাধ্যমে রবের প্রতি আত্মসমর্পণ ব্যতীত কেউ জান্নাত লাভ করবে না। তবে তাওহিদের কালেমার একনিষ্ঠ অনুসারী মুমিনরা মৃত্যুর সাথে সাথেই জান্নাতের নিয়ামত লাভ করবে। আর অপরাধী মুমিনরা শাস্তি ভোগ বা আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার পরই জান্নাতের নিয়ামত পাবে। কিন্তু এই কালেমা অস্বীকারকারী তথা কাফির চিরস্থায়ী জাহান্নামি হবে। তাই তাওহিদের কালেমার ঘোষণাকারী মূলত সেই ব্যক্তি যে কুরআনের ভাষ্যমতে- অর্থ : ‘আর তারা বলে আমরা শুনেছি মেনে নিয়েছি’। (সূরা বাকারা, আয়াত-২৮৫) এভাবেই মুমিনের জীবনের প্রতিটি কর্মকাণ্ড তথা শরয়ি আদেশ-নিষেধের মধ্যে তাওহিদের কালেমার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এখানে আমরা দু’-একটি উদাহরণের আলোকে তাওহিদের কালেমার অর্থ বোঝার চেষ্টা করব। যেমন-‘আমর বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার ও তাওহিদের কালেমার ঘোষণা দেয়।
নাহি আনিল মুনকার-এর মধ্যে নিহিত আছে ‘লা ইলাহা’ অর্থাৎ, আল্লাহর নিষেধ বা শরিয়ত বিবর্জিত সব কিছুই পরিত্যাজ্য হবে এবং এগুলোকে বাধা দিতে হবে।

আর ‘আমর বিল মারুফ’-এর মধ্যে লুকিয়ে আছে ‘ইল্লাল্লাহ’ অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহর আদেশ বা বিধানাবলি তথা শরিয়তসমর্থিত সব কিছুই অনুমোদনযোগ্য, তাই আল্লাহর আইন সমর্থিত কাজের আঞ্জাম দিতে হবে।
ঠিক এভাবেই জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মুসলিমের সব কর্মকাণ্ড তথা ইসলামের বিধিনিষেধ তাওহিদের কালেমার ঘোষণা দেয়। এমনকি মৃত্যু পরবর্তী কবরের তিন প্রশ্নেও তাওহিদের কালেমার প্রভাব রয়েছে।
অর্থাৎ যে মুসলিম আমৃত্যু তাওহিদের উপর অটল থেকেছে সেই মুসলিমই তিন প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবে। আর যে তার জীবনে তাওহিদ বিবর্জিত কাজকে গুরুত্বপূর্ণ ভেবেছে ও তাতেই নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে, সে তিন প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হবে।
কবরের তিন পশ্নে তাওহিদের কালেমার প্রভাব
তোমার রব কে?

যে তার পুরোটা জীবনে আল্লাহকে রব মেনে সব শরিয়ত বিবর্জিত কাজ থেকে বিরত থেকেছে এবং আল্লাহর আইনকেই পার্থিব সব আইন, রীতিনীতি ও প্রথার চেয়ে গুরুত্ব দিয়েছে সে মুসলিমই এ প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে পারবে। এই গুরুত্বকে ছয়টি স্তরে সাজানো যায় :

আল্লাহপ্রদত্ত বিধানকে পার্থিব যুগের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করবে না।
আল্লাহপ্রদত্ত বিধানকে মানুষের বানানো রীতিনীতি ও প্রথার মতো সমমর্যাদা ও সম-গুরুত্বসম্পন্ন মনে করবে না।
মানুষের বানানো আইন, সামাজিক রীতিনীতি ও প্রথার বিপরীতে আল্লাহপ্রদত্ত বিধানকে মর্যাদাহীন ও গুরুত্বহীন মনে করবে না।

আল্লাহর বিধিবিধান বাস্তবায়ন করা আবশ্যকীয় নয়, এমন মনে করবে না।
আল্লাহর দেয়া আইন ও বিধিবিধান পরিবর্তন করা আবশ্যক, এমন মনে করবে না।
প্রচলিত বিধিমালা, আইন, রীতিনীতি ও প্রথার দ্বারা আল্লাহর বিধিবিধান ও আইনকে পরিবর্তন করবে না।
এভাবে যে সত্যিকারের তাওহিদের কালেমা অন্তরে বিশ্বাস করেছে, মুখে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং কাজে পরিণত করেছে সে ওই প্রশ্নের উত্তর দেবে এভাবে : আমার রব মহান আল্লাহ তায়ালা।
তোমার দ্বীন কী?

আল্লাহ তায়ালা বলেন- অর্থ : ‘হে মুমিনগণ তোমরা পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্কসমূহ অনুসরণ করো না, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ সূরা বাকারা, আয়াত-২০৮)

আল্লাহর এই বাণীর আলোকে যে তার জীবনকে পরিপূর্ণ ইসলামের রঙে রাঙিয়েছে সে-ই তো সত্যিকারের তাওহিদের কালেমার ঘোষণা দিয়েছে। তাই সে উত্তর দেবে- আমার দ্বীন হলো ইসলাম।
এই লোকটি কে যিনি তোমাদেরকে পথপ্রদর্শক হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন? যে মুসলিম তার জীবনকে নবী সা:-এর আদর্শ তথা সুন্নাহর আলোকে সাজিয়েছে সেই তো নিফাকবিহীন পরিপূর্ণ তাওহিদের কালেমার ঘোষণা দিয়েছে।
তাই সে উত্তর দেবে- ইনি হলেন আল্লাহর নবী ও রাসূল হজরত মুহাম্মদ সা:।
আর পাপাচারী তার পার্থিব জীবনে তাওহিদকে তুচ্ছ করে নিজের জীবন ধ্বংস করেছে সে উত্তর দেবে- হায়! হায়! আমি তো কিছুই জানি না।

এরপর, মুমিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর পাপাচারী ফাসিক ব্যক্তি শাস্তি ভোগ বা আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার পরে জান্নাত লাভ করবে এবং কাফির ব্যক্তি চিরস্থায়ী জাহান্নামি হবে।
কারণ, নবীজি সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তাওহিদের কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর ঘোষণা দেবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সহিহ আল জামি-৬৩১৮)

লেখক : শিক্ষার্থী, আলফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডি


আরো সংবাদ



premium cement
সিরিয়ার নতুন শাসকদের প্রতি হিজবুল্লাহপ্রধানের আহ্বান ইসরাইলের সাথে সঙ্ঘাতে আগ্রহী নন সিরিয়ার নতুন নেতা সাবেক ফুটবলার কাভেলাশভিলিই জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট ঘড়ির সময় বদলাতে চান না ট্রাম্প ভারতীয় মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে অস্ত্র বাংলাদেশ : ওয়েইসি সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র খেয়ালখুশিমতো খরচ হয়েছে জলবায়ু তহবিলের অর্থ গুমে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন : র‌্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ আরাকানে সাড়ে ৪ শ’সেনা নিহত, জান্তার নিয়ন্ত্রণ শেষ বিপাকে রোহিঙ্গারা ভারতসহ সাত ‘অসহযোগী’ দেশের তালিকা ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের সিরীয়রা স্বাধীনতা উদযাপনের সময় দামেস্কে ইসরাইলের হামলা

সকল