১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


অল্পে তুষ্টির প্রশান্তি

-

অল্পে তুষ্ট থাকা একটি মহৎ গুণ। এতে অনেক কল্যাণ নিহিত। মানুষ যখন এই গুণটি অর্জন করে, যাবতীয় কষ্ট ও বালামুসিবতে সে অপরের সান-সওগাত দেখে আক্ষেপ করে না। এমনকি নিজের জন্য দুঃখও হয় না। দিশেহারা না হয়ে সে আল্লাহর দেয়া সামান্য রিজিক নিয়েও খুশি থাকতে পারে। মানুষের ভোগ-বিলাস ও আরাম-আয়েশ যখন বেড়ে যায় তখন অন্তর থেকে আল্লাহর মহব্বত দূর হতে থাকে। মানুষ দুনিয়াবি স্বার্থের জন্য অধিক পরিমাণে মনোযোগী হয়। অনেক ক্ষেত্রে ইবাদতের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কিন্তু যেসব মানুষ মজবুত ইমানের অধিকারী হয়- দুনিয়ার সম্পদ, অর্থবিত্ত তাদের পরাস্ত করতে পারে না। বরং এই সময়ে তারা আরো বেশি সতর্ক থাকে। দীনের জন্য সম্পদ বিলিয়ে এটাকে সওয়াব অর্জনের একটি উপায় বানিয়ে নেয়। প্রয়োজনে সম্পদের লোভ ত্যাগ করে, কিন্তু আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে কখনো দূরে সরে যায় না।
নিজের যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা মুমিনের জন্য অনেক বড় আনন্দের। তার ইচ্ছাই থাকে জান্নাতের সুখ। তাই দুনিয়ার সম্পদ ও সৌন্দর্যকে সে কখনো প্রাধান্য দিতে চায় না। এই লোভ সংবরণ করাকে সে ধৈর্য ও ঈমানের পরীক্ষা বলে মনে করে। সম্পদ ও নেতৃত্ব কখনো মানুষকে আল্লাহর প্রিয় মানুষ বানিয়ে দেয়। কাউকে আবার নিয়ে যায় জাহান্নামের দ্বারপ্রান্তে।
মানুষের লোভ কখনো শেষ হওয়ার নয়। ইচ্ছাও থাকে অবারিত। একটার পর একটা আসতেই থাকবে। এ কারণে মহানবী সা: বলেছেন, ‘একমাত্র মাটি ছাড়া মানুষের পেট আর কিছ্ইু ভরাতে সক্ষম হবে না।’ দুনিয়ার সমুদয় সম্পদ মানুষের হস্তগত হলেও তার প্রয়োজন তাতেও শেষ হবে না। মানুষের অভাব পূরণ করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই আছে। খুব কম সংখ্যক মানুষই আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে জানে। সুখে-দুখে সবসময় তাঁকেই স্মরণ করে।
তাই মানুষের উচিত হারাম বর্জন করে হালাল নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা। একজন প্রকৃত ঈমানদারই পারে তাকদিরকে মেনে নিয়ে অল্পতে তুষ্ট থাকতে। বৃথা হা-হুতাশ সে কখনোই করে না। একমাত্র মুমিনের পক্ষে এই কাজটি সহজতর। দুর্বল ঈমানের অধিকারী ব্যক্তি এটি কখনো সহজে পারবে না। কারণ শয়তান দুনিয়ার মোহজালে তাদের এতটাই আবদ্ধ করে রেখেছে যে, তাদের চিন্তা কেবল দুনিয়ামুখী। শয়তান দুনিয়া হাসিলের জন্য তাদের অন্তরে দুনিয়ার মহব্বত পয়দা করে দিয়েছে।
লোভ সেই জিনিস যা মানুষকে আমৃত্যু তাড়িয়ে বেড়ায়। একজন মুমিন কখনো এই লোভের কাছে হেরে যায় না। বরং সে অল্পে তুষ্ট থেকে সুখী জীবন গড়তে চায়। ইসলামও মানুষকে এই জীবনের অনুপ্রেরণা জোগায়। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা মহানবী সা:কে লক্ষ করে বলেন, ‘আমি এদের কিছু লোককে ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দান করেছি তার প্রতি তুমি কখনো দু’চোখ তুলে তাকাবে না। তাদের অবস্থা নিয়ে তুমি কোনো প্রকারের দুশ্চিন্তা করবে না। তুমি সবসময় ঈমানদারদের দিকেই বাহুকে অবনত রাখো’ ( সূরা আল হেজর, আয়াত- ৮৮)। তাই বলে ইসলাম মানুষকে কখনোই হালাল ও সঠিক উপায়ে বড় হওয়ার রাস্তাটি আটকিয়ে দেয়নি। অবশ্যই মুসলমানকে ঈমান ও আমলের সাথে কুরআন-হাদিসের পূর্ণ অনুকরণ ও অনুসরণে সুন্দর আগামীর পানে এগিয়ে যেতে হবে। তাঁকে (মুসলমানদের) পৌঁছে যেতে হবে উন্নতির উচ্চ শিখরে। তবেই সর্বত্র আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষিত হবে। নতুবা বাতিল শক্তির কাছে মাথা নত করে থাকতে হবে মুসলমানদের। সয়ে যেতে হবে নানা অত্যাচার।
রাসূল সা: অল্পে তুষ্ট ছিলেন। ধনসম্পদের প্রতি তার কোনো লোভ ছিল না। দুনিয়ার চাকচিক্য দেখে তিনি মোটেই বিচলিত হতেন না। কিন্তু তাঁর উদারতা ছিল আসমানসম। দানশীলতায় তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। জীবন কী? কোথায় এর সার্থকতা? তিনি উম্মতকে দেখিয়ে দিয়েছেন। সেই রাসূল সা:-এর উম্মত আমরা। তাঁর আদর্শ অবশ্যই জীবনে প্রতিফলিত হতে হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাঁর রাসূলের মাধ্যমে আমাদের বলেছেন, ‘হে আমাদের রব, তুমি আমাদের ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ দাও। আর আমাদেরকে জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচাও’ (সূরা আল বাকারা, আয়াত- ২০১)। এই কল্যাণ লাভ করা তখনি সম্ভব হবে যখন ঈমান হবে বলীয়ান। অল্পে তুষ্ট হতে শিখবো। উন্নতির শীর্ষে পৌঁছে যাবো ঠিকই, কিন্তু আমাদের ভাবনা থাকবে মানুষের কল্যাণ ও ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা। আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করা।
সুখের সংজ্ঞা বড়ই বিচিত্র। তার চেয়ে আরো বিচিত্র মানুষের মন। একেকজনের কাছে সুখের মানে একেক রকম। এটাই বা কম কীসে! যে ব্যক্তি পরিবার-পরিজনসহ একটি রাত কাটিয়ে ভোরের আলো দেখে। সবাই সুস্থ শরীরে ভালোয় ভালোয় দিনটা কাটিয়ে দেয় আর পুরো দিনের রিজিকও তার কাছে থাকে। ওই ব্যক্তি মাওলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। তার কোনো পেরেশানি নেই। কারণ সে আল্লাহর ওপর খুশি। আর আল্লাহও তার প্রতি খুশি।
সাহাবায়ে আজমাইন রা: এভাবেই নিজের জীবনকে গড়ে তুলেছেন। আর তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এই শিক্ষাই দিয়ে গেছেন। হজরত সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ রা: একজন জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত সাহাবী। তিনি ছেলেকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, ‘ওহে পুত্র, তুমি যদি প্রাচুর্য তালাশ করো, তবে তা অল্পে তুষ্ট থাকার মাধ্যমে অন্বেষণ করো। কারণ এটি এমন এক সম্পদ, যা কখনো শেষ হয় না। আর লোভ-লালসা থেকে নিবৃত থাকো। কেননা লোভ চাক্ষুষ নিঃস্বতা। অপরের সম্পদের লোভ-লালসা থেকে নিজেকে ফিরিয়ে রাখো। যখনই তুমি কোনো কিছু থেকে নিজেকে বিমুখ রাখবে আল্লাহ তোমাকে এর থেকে মুখাপেক্ষীহীন করে দেবেন।
মানুষের লোভ-লালসার শেষ নেই। বাঁচার জন কিছু চাহিদা থাকবে। কিন্তু তাকে কখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দেয়া ঠিক না। তাতে মানসিক অসুখ আরো বাড়তে থাকে। হারিয়ে যায় রাতের ঘুম। আকাশচুম্বী স্বপ্ন তার পেরেশানির কারণ হয়। একসময় চাইলেও সে এখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। প্রকৃত দরিদ্র তো ওই ব্যক্তি যে দুনিয়ায় আরাম-আয়েশে দিন কাটালো অথচ পরকালের সামান সংগ্রহ করে নিতে পারল না। অথচ আরেকজনের দিন কাটল শ্রম দিয়ে। অল্পে তুষ্ট হলো। আল্লাহর কৃতজ্ঞতাও আদায় করল। যা খেলো তা হালাল। যা পরল তা-ও হালাল। অল্পে তুষ্ট থেকে সে পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করে নিলো। সে-ই হলো কামিয়াবী।
এ জন্য ভাবতে হবে, কতটুকু সম্পদ আমার জন্য যথেষ্ট। ততটুকু নিয়ে পরিতৃপ্ত থাকবো। তা পরিমাণে যা-ই হোক না কেন। যখন দুনিয়ার চাকচিক্য দেখে আমার চোখ ঝলসে যাবে তখন তার প্রতি নফসের আকর্ষণ বৃদ্ধি পারে। তাই এই মন্দ প্রভাব থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। নফসের কাছে নিজেকে বিকিয়ে দেয়া, তার অন্ধ অনুসরণ করা একজন মুমিনের পরিচয় নয়।
সাহিত্যিক ও গবেষক


আরো সংবাদ



premium cement
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ভিক্ষুক, মোট সম্পত্তি ৭.৫ কোটি ভারতের কোভ্যাক্সিনেও রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইসরাইল সরকারে ভয়াবহ দ্বন্দ্ব : নেতানিয়াহুকে গাঞ্জের পদত্যাগের আলটিমেটাম রাফায় ইসরাইলি হামলা, সরে যেতে বাধ্য হয়েছে ৮ লাখ ফিলিস্তিনি চেন্নাইকে বিদায় করে বেঙ্গালুরুর ‘অবিশ্বাস্য’ প্লে অফ মনের মিনার ভেঙে পড়েনি মার্কিন প্রশাসনের ‘বাকস্বাধীনতা’র মুখোশ শিগগিরই মাগুরায় রেললাইন চালু হবে : রেলমন্ত্রী সংসদ ভবনের সামনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষে ছাত্রলীগকর্মী নিহত জুজুৎসুর সম্পাদকের যৌন নিপীড়নের তথ্য দিলো র্যা ব পানচাষীদের পরিশ্রমের ফসল জিআই স্বীকৃতি : প্রতিমন্ত্রী

সকল