২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইবাদতের প্রকৃত স্বাদ

-

সমস্ত ইবাদতের মধ্যে নামাজ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। যা বান্দাকে স্রষ্টার অতি নিকটবর্তী করে তোলে। আর এই নামাজের মাধ্যমেই বান্দা এক অনন্য মানুষে পরিণত হতে পারে। মনের যাবতীয় পাপ-পঙ্কিলতা দূর করে তাকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে তৈরি করে। যে মানুষ মহান আল্লাহ পাকের পরম যতেœর। অতি মহব্বতের। যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মহানবী সা:-এর সাহাবায়ে আজমাইন রা:। সমাজে অনেক মানুষ নামাজ পড়ছে। কিন্তু সমাজে পাপ-অনাচার ঠিকই বিরাজ করছে। কুরআন যে নামাজির কথা বলছে সে ধরনের নামাজির সংখ্যা তেমন একটা লক্ষ করা যাচ্ছে না। তাদের নামাজ কুরআনের শেখানো নামাজের অনুরূপ হচ্ছে না। আর এই নামাজ তাদের মধ্যে যে ধরনের পরিবর্তন আনবে তা-ও আসছে না।
মানুষ যখন কোনো কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করে, সে দৃঢ় প্রত্যয় ও আন্তরিক প্রচেষ্টার সাথে কাজটি করতে থাকে, একসময় সাফল্য তার হাতের নাগালে চলে আসবে। এ জন্য তাকে কিছু সময় ব্যয় করতে হবে। অনুরূপভাবে যখন কোনো বান্দা নামাজে দাঁড়াবে তাকে একনিষ্ঠভাবেই নামাজে দাঁড়াতে হবে। তাকে মনে করতে হবে এই নামাজ তার জীবনের শেষ নামাজ। দ্বিতীয়বার আমার মাবুদের সামনে দাঁড়ানোর সৌভাগ্য না-ও হতে পারে। সে নামাজে দাঁড়িয়েছে এমন এক মহাপরাক্রমশালী ও অসীম ক্ষমতাধর স্র্রষ্টার সামনে যিনি গোটা বিশ^ জাহানের একচ্ছত্র অধিপতি। তাঁর হুকুম ছাড়া মানুষ তো দূরের কথা একটি গাছের পাতাও নড়তে পারে না। সমস্ত মাখলুকাত তাঁরই অনুগ্রহে বেঁচে আছে। আমিও সেই সৌভাগ্যবান মাখলুকের একজন যাকে তিনি তাঁর অসীম কৃপায় এখনো জীবিত রেখেছেন। তাঁর ইবাদত করার শক্তি ও সামর্থ্য দান করেছেন। অবাধ্য বান্দাদের কাতারে আমাকে শামিল করেননি। বরং তিনি আমার ওপর রহম করেছেন। এক মহাক্ষতির হাত থেকে আমাকে বাঁচিয়েছেন।
সুতরাং একজন কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে আমি সেই মাওলার সামনেই দাঁড়িয়েছি তা হুকুম পালন করার জন্য। তাই আমার অন্তর, আমার চিন্তা, আমার একাগ্রতা সবই তাঁকে ঘিরে। আমি তাকে না দেখলেও তিনি আমাকে দেখছেন। তার সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে একজন অনুগত বান্দার পরিচয় দিতে হবে। যাতে তিনি আমার আচরণে সন্তুষ্ট হন।
নামাজে আন্তরিক হওয়ার একটি সহজ চিন্তা
দুনিয়ার কোনো রাজা-বাদশাহ বা নেতৃস্থানীয় মানুষের কাছে যখন আমরা কোনো কিছু প্রাপ্তির জন্য আর্জি পেশ করি তখন কত বিনয়ের সাথে সে কাজটি করতে হয়। যাতে তিনি আমার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে আমার প্রয়োজন পূরণ করে দেন। আর যিনি আহকামুল হাকিমিন, মালিকেরও মালিক তার শানে যদি আমার উপস্থিতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শের মাধ্যমে না হয় তাহলে তা কি বেয়াদবি নয়? এ ধরনের চাওয়া কখনো কি পূর্ণ হতে পারে?
কিভাবে গোলাম হয়ে মুনিবের সাথে এ ধরনের ধৃষ্টতা প্রদর্শন করতে পারি। অবশ্যই তা কোনো বিবেকবান মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এমনি একটি অনুভূতি নিয়ে যখন মানুষ নামাজে দাঁড়ায় তার নামাজ অবশ্যই পরিপূর্ণ নামাজ হবে। এই নামাজ ব্যক্তির মধ্যে পরিবর্তন আনবে। তার মধ্যে থাকবে না কোনো খারাপি। সে কোনো অবস্থাতেই খোদার নাফরমানি করতে পারবে না। জীবন চলে যাবে, তবুও তার ইমান অটুট থাকবে। এমন বান্দা যখন আল্লাহর হয়ে যায়, আল্লøাহও ওই বান্দার হয়ে যান।
আগ্রহ অনুভব করার উপায়
আমরা যখন কোনো বিষয় নিয়ে গবেষণা বা আলোচনা-পর্যালোচনা করি, বিষয়টি যদি আমাদের বোধগম্য হয় তখন ওই কাজের প্রতি আগ্রহটা অনেক বেড়ে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করলেও কোনো ক্লান্তি আসে না। ক্লান্তি আসছে না কারণ, মন-প্রাণ দিয়ে আমি কাজটিকে গ্রহণ করেছি। আমি কাজটির গুরুত্ব বা প্রকৃত স্বাদ উপভোগ করছি। এখন এই কাজটি করার জন্য আর জোরাজুরি বা চাপ প্রয়োগ করতে হবে না। এমনিতেই কাজটি এগিয়ে যাবে। যা হবে সবই মনের আনন্দে। নিজ আগ্রহে। ত্রুটি থাকলেও তা কাটিয়ে কাজটিকে সুন্দর ও সাবলীলভাবে করার চেষ্টা করা হবে। একপর্যায়ে কাজটি হবে নির্ভুল।
নামাজেও এক ধরনের আনন্দ আছে। যারা এই আনন্দ পেতে সক্ষম হয়েছে, তারা পৃথিবীর সব কাজের আনন্দ থেকেও নামাজের আনন্দকে অতি উত্তম মনে করে। শীতের মওসুমে ঠাণ্ডা পানি লাগিয়ে অজু করে তাহাজ্জুদের নামাজে দাঁড়ানো সামান্য কোনো ব্যাপার নয়। কিন্তু নামাজের স্বাদ যে পেয়ে গেছে তার কাছে গ্রীষ্ম-বর্ষা ও হিমেল হাওয়া সবই তুচ্ছ। এ জন্য সে প্রয়োজনবোধে রাতের ঘুমকেও পরিত্যাগ করে মাওলার শানে দাঁড়াতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করবে না।
ভাবের জগতে প্রবেশ
নামাজের মধ্যে যে সূরাগুলো তিলাওয়াত করা হয় তার অর্থ বুঝে যদি পড়া যায় নামাজ আদায়কারী এক ভাবের জগতে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে। ফলে এই নামাজে যে একাগ্রতা তৈরি হয় আর যে ব্যক্তি কিছু না বুঝেই কুরআন তিলাওয়াত করছে তার একাগ্রতা কখনোই এক হবে না। ইমামে আজম আবু হানিফা রহ. মাত্র দুই রাকাত নামাজে পবিত্র কুরআন শরিফ খতম করে ফেলতেন। এটি কোনো মামুলি ব্যাপার নয়। এটা সম্ভব হয় তখনই যখন মন থেকে বিষয়টি ভালো লেগে যায়। একটি জিনিস সহজেই উপলব্ধি করা যায়, আপনি কুরআন পড়ছেন, অর্থ বুঝতে পারছেন, আপনার একাগ্রতা চলে আসবে। তখন আর শেষ করতে মন চাইবে না। কুরআনের সুরে আপনার হৃদয় আকুল হয়ে উঠবে।
নামাজির জন্য লক্ষণীয়
নামাজ কেবল পড়লেই হবে না। নামাজের হক আদায় করে নামাজ পড়তে হবে। তাড়াহুড়ো না করে রুকু সিজদাহসহ যাবতীয় কাজগুলো সঠিক ও যথাযথ নিয়মে আদায় করতে হবে। যেন নামাজখানা আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হয়। ইবাদত কবুলের ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটিই হলোÑ হালাল রুজি ভক্ষণ। তাই আয়-উপার্জন ও এর মাধ্যমের ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। হারাম উপায়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে শরীরকে হৃষ্টপুষ্ট করে ইবাদত করবেন আর ইবাদতের স্বাদ পেতে চাইবেন তা কখনো হয় না। কারণ আল্লাহ নিজেই পবিত্র। তিনি অপবিত্রতাকে পছন্দ করেন না। সুতরাং আপনার ইবাদতে একাগ্রতা আসবে কী করে। আর যদি একাগ্রতাই না আসে তাহলে আপনি কী করে বুঝতেন ইবাদতে স্বাদ।
লেখক : সাহিত্যিক ও গবেষক


আরো সংবাদ



premium cement
দোয়ারাবাজারে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা : স্বামীর আমৃত্যু কারাদণ্ড গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার ভারতে দ্বিতীয় পর্বে ৮৮ আসনে ভোট খালেদা জিয়ার সাথে মির্জা ফখরুলের ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা আটক জীবন্ত মানুষকে গণকবর আগ্রাসন ও যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃষ্টির জন্য সারা দেশে ইসতিস্কার নামাজ আদায় আরো ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট তাপপ্রবাহ মে পর্যন্ত গড়াবে

সকল