২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অশেষ কুদরতে রিজিক প্রদান

-

মহান প্রভু রূহ সৃষ্টির সিদ্ধান্তের সাথে সাথেই সেই রূহের রিজিকের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। আল্লাহ এমন অলৌকিকভাবে রিজিকের সন্ধান মিলিয়ে দেন, যা চিন্তাবহির্ভূত হয়ে থাকে। তিনি কুরআনে বলেছেন, সবার জন্য তাঁর নেয়ামত ভাণ্ডার অফুরন্ত। হোক সে অকৃতজ্ঞ বা অপরাধী। কুরআনের ভাষায় : ‘তিনি স্থাপন করেছেন অটল পর্বতমালা ভূপৃষ্ঠে এবং তাতে রেখেছেন কল্যাণ এবং চার দিনে ব্যবস্থা করেছেন খাদ্যেরÑ সমভাবে, যাচ্ঞাকারীদের জন্য’ (সূরা হামীমুস সাজদা : ১০)।
আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রথমে পৃথিবীর উপকরণ সৃজিত হয়েছে। এরপর আকাশের উপকরণ এবং পৃথিবীকে এ অবস্থায় আনা হয়েছে। পৃথিবীতে পর্বতমালা, বৃক্ষ ইত্যাদি সৃষ্টি করা হয়েছে।
রিজিক নির্ধারিত হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে। অথচ, নির্বোধেরা ধারণা করে তাদের রিজিকদাতা অন্য কেউ। তাই আল্লাহ্ সাবধান করে বলেছেন, অন্য কাউকে রিজিকদাতা ভাবার ফল কঠিন হবে।
‘তোমরা তো আল্লাহ্ ছাড়া শুধু মূর্তিপূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া যাদের ইবাদত করো তারা তো তোমাদের রিজিকের মালিক নয়। কাজেই তোমরা আল্লাহর কাছেই রিজিক চাও এবং তাঁর ইবাদত করো। আর তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। তোমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে’ (সূরা আল আনকাবূত : ১৭)।
এ বাক্যের মাধ্যমে ইব্রাহিম আ: মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে সব যুক্তি একত্র করেছেন। বললেন, যে মূর্তিগুলো তোমাদের কোনো প্রকারের কোনো রিজিক দান করতে পারে না, তারা সামান্য-সামান্যতমও কোনো প্রকার ইবাদতের মালিক হতে পারে না। তোমাদের তো আল্লাহর দিকে ফিরে যেতেই হবে। সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদত করো।
নিয়ামতের মালিক আল্লাহ্ তাই তাঁর ওপর নির্ভর থেকেই সন্তান লালন-পালন করতে হবে। সন্তানের ভরণপোষণের ভয়ে অবহেলা করা যাবে না। জাহেলি যুগে সন্তানদের রিজিকের ভয়ে হত্যা করা হতো। তাই আল্লাহ্ নির্দেশ দিয়ে বলেছেন : ‘বলুন, এসো, তোমাদের রব তোমাদের ওপর যা হারাম করেছেন তোমাদেরকে তা তিলাওয়াত করি, তা হচ্ছে, তোমরা তাঁর সাথে কোনো শরিক করবে না, পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে, দারিদ্র্যের ভয়ে তোমারা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, আমরাই তোমাদের ও তাদের রিজক দিয়ে থাকি। প্রকাশ্যে হোক কিংবা গোপনে হোক, অশ্লীল কাজের ধারেকাছেও যাবে না। আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তোমরা তাকে হত্যা করবে না। তোমাদেরকে তিনি এ নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা বুঝতে পারো’ (সূরা আনাম : ১৫১)।
জাহেলি যুগে সন্তানকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা কিংবা হত্যা করার ব্যাপারটি ছিল সন্তানের সাথে অসদ্ব্যবহারের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। আয়াতে তা নিষিদ্ধ করে বলা হয়েছে: ‘দারিদ্র্যের কারণে স্বীয় সন্তানদের হত্যা করো না। আমরা তোমাদের এবং তাদের উভয়কেই জীবিকা দান করব।’ জাহেলিয়াত যুগে এ নিকৃষ্টতম নির্দয়-পাষণ্ড প্রথা প্রচলিত ছিল যে, কন্যাসন্তানের জীবিকার ভয়ে হত্যা করত। কুরআনুল কারিম এ কুপ্রথা রহিত করে দিয়েছে। (ইবনে কাসির)
কঠিন পরীক্ষায় উত্তরণের জন্য আল্লাহ্ অনেক সময় রিজিকের সঙ্কীর্ণতার মাধ্যমে কষ্ট দিয়ে থাকেন। অবশ্যই এটা মুমিনদের জন্য নিয়ামত। আর কাফিরদের জন্য আজাব।
‘আর যখন তাকে পরীক্ষা করেন তার রিজক সঙ্কুচিত করে, তখন সে বলে, আমার রব আমাকে হীন করেছেন। কখনো নয়। বরং তোমরা ইয়াতিমকে সম্মান করো না’ (সূরা আলফাজর :১৫-১৬)।
এই আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন যে, দুনিয়াতে জীবনোপকরণের স্বাচ্ছন্দ্য সৎ ও আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়ার আলামত নয়। তেমনি অভাব-অনটন ও দারিদ্র্য প্রত্যাখ্যাত ও লাঞ্ছিত হওয়ার দলিল নয়। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যাপার সম্পূর্ণ উল্টো হয়ে থাকে। কোনো কোনো নবী-রাসূল কঠিন কষ্ট ভোগ করেছেন আবার কোনো কোনো আল্লাহদ্রোহী আরাম আয়েশে জীবন অতিবাহিত করে দিয়েছেন।
আল্লাহর অসন্তোষের কারণে কখনো কখনো কোনো কোনো জাতির ওপর রিজিকের নিয়ামত উঠিয়ে নেয়া হয়। কখনো মুশরিকদের ওপর শাস্তি হিসেবে আবার কখনো মুসলিমদের গাফিলতির শাস্তি হিসেবে। আল্লাহ বলেন : ‘আর যদি সেসব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তবে অবশ্যই আমরা তাদের জন্য আসমান ও জমিনের বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম, কিন্তু তারা মিথ্যারোপ করেছিল; কাজেই আমরা তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের পাকড়াও করেছি’ (সূরা আল আরাফ : ৯৬)।
যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা না হয়, তবে তিনি তার রিজিক সঙ্কুচিত করবেন। তার জীবন-যাপন ব্যবস্থা কঠিন করে দিবেন। আর সর্বশেষ তাকে হাশরের ময়দানে অন্ধ করে তুলবেন।
আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যমেই আমরা উত্তম রিজিকের সন্ধান পেয়ে যাই। আর তাঁর অবাধ্যতাই আমাদের জীবনের কঠিন মুহূর্তে সম্মুখীন হতে হয়। অবশ্যই মুমিনরা ধৈর্যের মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়।
লেখিকা : ইসলামী গবেষক


আরো সংবাদ



premium cement
৪৬তম বিএসএস প্রিলি পরীক্ষা : শুরুতেই স্বপ্ন ভঙ্গ ৮১ শিক্ষার্থীর মরুর উষ্ণতায় ক্ষতির মুখে কৃষি ছেলেদের কারণে বিপাকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের

সকল