১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

মুন্সীগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলা

মুন্সীগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলা - ছবি : নয়া দিগন্ত

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়িতে প্রকাশ্যে পুলিশের সামনে ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনায় সাতজনকে আসামি করে টঙ্গীবাড়ি থানায় মামলা করা হয়েছে।

সোমবার (৮ জুলাই) নিহতের ছোট ভাই এইচ এম ইমন হাওলাদার এই মামলা করেন।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টঙ্গীবাড়ী থানার ওসি মোল্লা সোহেব আলী।

তিনি বলেন, নিহতের ভাই ইমন হালদার সাতজনকে আসামি করে টঙ্গীবাড়ী থানায় একটি এজাহার করেছে। মামলাটি ইতোমধ্যে রেকর্ড করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের মূল আপরাধীদের সহযোগীদের ধরা হয়েছে। মূল অপরাধী নুর মোহাম্মদ গুলি ছুড়তে ছুড়তেু পালিয়েছে।’

এই সময় পুলিশের অস্ত্র কোথায় ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। এর আগে আজ দুপুরে জোহর নামাজের পরে নিহত ইউপি চেয়ারম্যান সুমন হালদাদের জানাজা শেষে তাকে বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার গণাইসার কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

নিহতের জানাজায় টঙ্গীবাড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম হালদার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আসলাম হোসাইন, টঙ্গীবাড়ি উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ প্রায় ১৫ শ’ লোক অংশগ্রহণ করে।

এদিকে টঙ্গীবাড়ি উপজেলায় পর পর পুলিশের সামনে দুটি প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ যেখানে আশ্রয়স্থ সেই পুলিশের সামনেই প্রকাশ্যে ঘটে গেলো পরপর দুটি হত্যাকাণড। আর এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন প্রভাবশালী দুই ব্যক্তি। একজন নির্বাচিত জন-প্রতিনিধি চেয়ারম্যান অপরজন দিঘিরপার ইউনিয়নের আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও দিঘিরপার ইউনিয়ন বাজার কমিটির সহ-সভাপতি সোহরাব হাওলাদার। দুই প্রভাবশালী ব্যক্তিকে হত্যার পর হত্যাকারীরা পুলিশের সামনে দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে জনমনে।

রবিবার (৭ জুলাই) দুপুরে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পাঁচগাও গ্রামে পাঁচগাঁও ওয়াহেদ আলী দেওয়ান উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি পদে নির্বাচন নিয়ে কয়েক দিন ধরে ছিল ওই এলাকায় উত্তেজনা। তাই কতর্পক্ষ নির্বাচনে পুলিশের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। পুলিশ মোতায়েনও করা হয়। কিন্তু কেন্দ্রে পুলিশ থাকা অবস্থায়ও নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে গুলি করে মূল হত্যাকারীরা পালিয়ে যায়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ওই হত্যাকারীদের তিনজন সহযোগীকে আটক করা হলেও মূল দুই হত্যাকারী এখনো পলাতক। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলও উদ্ধার হয়নি। এর আগে গত ৮ এপ্রিল দিঘিরপাড় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সামনে ওই ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি সোহরাব খানকে প্রকাশ্যে পুলিশের উপস্থিতিতে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার পর তদন্ত কেন্দ্রের সামনে উত্তেজিত জনতা অবস্থান নেন। সেসময় তারা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মো: শাহ আলমকে হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তি আখ্যা দিয়ে তদন্ত কেন্দ্রে আক্রমণ করে স্থানীয়রা। পরে পাশের একটি ভবনে পালিয়ে থাকা এই পুলিশ কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে স্থানীয়রা। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ এনে তাকে বুলেট জ্যাকেট ও হেলম্যাড পরিয়ে পুলিশের পিকাপে করে উদ্ধার করা হয়। নিহতের মেয়ে এবং ভাইদের বক্তব্যসহ এসব ভিডিও ও সংবাদ সেসময় ছড়িয়ে পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেই হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি স্থানীয় ভোলা হওলাদারের ছেলে রিহান ও রিজভী কুপিয়ে জখম করে সোহরাব খান ও তার ছেলে জনি খানকে এবং সে সময় পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় তারা। এখনো পলাতক ওই দুই আসামি।

স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল মোল্লা বলেন, নুর মোহাম্মদ ও তার ভাই ভোলা চেয়ারম্যান সুমন হালদারকে গুলি করে। গুলি ছুড়তে ছুড়তে আতঙ্ক সৃষ্টি করে পালিয়ে যায়। এই নুর মোহাম্মদ কয়েক মাস আগেও প্রকাশ্যে আমাকে লক্ষ করে তিন রাউন্ড গুলি ছুড়ে। সে সময় পুলিশ ওই ঘটনার যদি সুস্থ তদন্ত করে ওই অস্ত্র উদ্ধার করতো তাহলে নতুন করে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতো না।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মিজানুর রহমান মোল্লা বলেন, হঠাৎ করে পুলিশের সামনে গুলি করে পালিয়ে যায় দুই খুণি নুর মোহাম্মদ ও ভোলা। তারা এর আগেও পাঁচগাও এলাকায় অস্ত্র নিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি ও গুলি করে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। এর আগে পুলিশ যদি ওই সমস্ত ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করতো এবং অস্ত্র উদ্ধারে সেই সময় তৎপর হতো তাহলে প্রকাশ্যে এ ধরণের খুণের ঘটনা হয়তো ঘটতো না।

টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আউটশাহী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেকান্দর বেপারী বলেন, প্রকাশ্যে একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা করা হলো। যেখানে আমাদের জনপ্রতিনিধিদের নিরাপত্তা নাই সেখানে আমরা সাধারণ মানুষকে কিভাবে নিরাপত্ত দিব।


আরো সংবাদ



premium cement