কিশোরগঞ্জে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা, ভাগ্নে গ্রেফতার
- কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
- ২৪ জুন ২০২৪, ২০:৩৬
কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, তার ভাগ্নে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নাজমুল হোসেনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়েছে। এ মামলায় ভাগ্নে নাজমুল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রোববার দুপুরে ভুক্তভোগী এক কলেজছাত্রী কিশোরগঞ্জের ১ নম্বর আমলি আদালতে ওই মামলা করেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ইন্টারনেটে অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া, ভয় দেখিয়ে আট লাখ টাকা আদায়সহ নানাভাবে ওই তরুণীকে হয়রানি করার অভিযোগে করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন, তার ভাগ্নে সাবেক সহ-সভাপতি নাজমুল হোসেন হীরা, মোল্লা সুমনের বড় ভাই জেলা ছাত্রলীগের সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মোশারফ হোসেন বাবুল।
মামলা ও গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা জানান, রোববার কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশিকুর রহমানের আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলার করেন এক কলেজছাত্রী। এরপর রোববার রাত দেড়টার দিকে ময়মনসিংহ শহরের গাঙিনারপাড় এলাকা থেকে মোল্লা সুমনের ভাগ্নে হীরাকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতের নির্দেশে রোববার রাতে থানায় এজাহার করা হয়। তারপরই আসামিদের ধরতে অভিযান শুরু করা হয়।
ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী শিখা রাণী দাস বলেন, মামলার বাদি স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। শুনানি শেষে বিচারক মামলাটিকে এজহার হিসেবে লিপিবদ্ধ করতে সদর মডেল থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ওই ছাত্রীর সাথে নাজমুল হোসেন হীরার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণ করে হিরা। এবং এগুলো ভিডিও করে রাখে। একপর্যায়ে ওই মেয়েকে ২০২৩ সালের জুনে গোপনে কাজী ডেকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ছাত্রী জানতে পারেন হীরার স্ত্রী আছে। এরপর ওই মেয়ে মৌখিকভাবে হিরাকে তালাক দিয়ে চলে আসেন। কিন্তু হীরা দ ‘জনের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে প্রথমে পাঁচ লাখ টাকা আদায় করেন এবং সম্পর্ক চালিয়ে যেতে বাধ্য করেন।
বিষয়টি ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর মামা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন এবং তার বড় ভাই মোশারফ হোসেন বাবুলকে জানান। কিন্তু তারাও তাকে হুমকি দেন এবং ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেন।
মোল্লা সুমন ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ওই ছাত্রীর কাছ থেকে দুটি দামি মোবাইলফোন নেন। তার বড় ভাই মোশারফ হোসেন মোল্লা বাবুল ওই মেয়ের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা আদায় করেন। একপর্যায়ে মোল্লা সুমন ওই ছাত্রীকে কিশোরগঞ্জ ছেড়ে চলে যেতে হুমকি দেন। না হয় তাকে মেরে ফেলা হবে বলে জানান। পরে ওই ছাত্রীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও হীরা এবং তার দুই মামা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেন।
ওই ছাত্রী হীরা এবং তার দুই মামাকে আট লাখের বেশি টাকা দিয়ে তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন বলে মামলায় উল্লেখ করেন। কিন্তু তারপরও আসামিরা একাধিক ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এতে বাধ্য হয়েই মামলা করেছেন বলে এজাহারে বলেন ওই ছাত্রী।
২০২২ সালে প্রবাসী এক যুবকের সাথে বিয়ে হলেও এক মাসের মাথায় তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় বলে জানান ছাত্রী।
তার অভিযোগ,‘নাজমুল হীরার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন এবং যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ার কারণেই হীরা এবং তার দুই মামা এমনটা করেছে।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ঘটনাটিকে ‘ষড়যন্ত্র' উল্লেখ করে বলেন,‘আমার ভাগ্নে হীরার সাথে মেয়েটির বিয়ে হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, ছাত্রলীগ সভাপতি মোল্লা সুমন এবং তার ভাইকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।