১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
আবর্জনায় পানি নিষ্কাশনের খাল বন্ধ

জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে এলাকাবাসী, হুমকিতে শিল্পকারখানা

আবর্জনায় পানি নিষ্কাশনের খাল বন্ধ - ছবি : সংগৃহীত

গাজীপুরের ভাওয়াল গড় ইউনিয়নের বানিয়ারচালা-ভবানীপুর গ্রামে পানি নিষ্কাশনের একমাত্র সিংদিঘী খালটি দখল, দূষণ আর অব্যবস্থাপনায় কারণে ভরাট হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যাচ্ছে ওই এলাকার রাস্তা-ঘাট। পানি ঢুকে পড়ছে বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং রফতানিমুখী শিল্পকারখানায়। ফলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং কৃষিসংশ্লিষ্টরা। এমন পরিস্থিতিতে চরম দুর্ভোগের শিকার কয়েকটি কারখানার প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিকসহ দুই গ্রামের কমপক্ষে ৫০ হাজার বাসিন্দা।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, পূর্ব বানিয়ারচালা-ভবানীপুর গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সিংদিঘী (স্থানীয়ভাবে প্রচলিত) খালটি লবণদহ নদীতে পতিত হয়েছে। এটি প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে মাঝের কিছু অংশ বেদখল হয়ে গেছে। কয়েক জায়গায় গণহারে ময়লা ফেলায় ভরাট হয়ে গেছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের পশ্চিম পাশে অবস্থিত আবুল কাশেমের নির্মাণাধীন ফ্যাক্টরির বর্জ্য ও মাটি দ্বারা খালটি প্রায় ভরাট। রোডের আরেক অংশ কালভার্টের পূর্ব পাশে ময়লা ফেলা স্তুপ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও রোডের পশ্চিম পাশে প্যারাগন গ্রুপের সিমটেক্স লিমিটেডের ভেতর দিয়ে অবস্থিত ড্রেন ভরাট করে শুধুমাত্র পাইপের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন করছে। ফলে অল্প বৃষ্টি হলেই পানি আর বের হতে পারে না। বৃষ্টির সময় উজানের পানি নেমে পুরো এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

পানি নিষ্কাশনের একমাত্র বানিয়ারচালা-ভবানীপুর গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সিংদিঘী খাল সংস্কারের জন্য জেলা প্রশাসক, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন এলাকার বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী। গত কয়েক বছর ধরে বারবার আবেদন করা হলেও এখনো কারো সাড়া মেলেনি। ফলে দিন দিন আরো নাজুক হয়ে পড়েছে খালটি। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে এটির খুবই বেহাল দশা। ফলে আসন্ন বর্ষা মৌসুম নিয়ে উদ্বিগ্ন ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতির বিষয়ে গত বছরের ৯ অক্টোবর জয়দেবপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। জিডি করেন বিজি কালেকশন লিমিটেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাসিমুল হাসান কচি।

জানা যায়, গত বছরের ৫ অক্টোবর বৃষ্টিতে এলাকায় ৩ থেকে ৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পায়। ফলে শতভাগ রফতানিমুখী পোশাক কারখানাটির নিচ তলায় পানি প্রবেশ করে। মেশিনারাজীসহ বিপুল পরিমাপ কেমিকেল, সুতা, কাপড়, রফতানিযোগ্য তৈরি পোশাক ও এক্সেসরিজ নষ্ট হয়। এতে বিজি কালেকশন লিমিটেডের প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতি হয়। শুধু বিজি কালেকশন নয়। বিজি কালেকশনের মত আরো কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

পানি নিষ্কাশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য গত দুই বছর ধরে সরকারি বিভিন্ন মহলকে অনুরোধ জানায় বিজি কালেকশন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ২০২২ সালের ২১ জুন গাজীপুর জেলা প্রশাসক, গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ভাওয়াল গড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে জানানো হয়। এছাড়া একই বছর ৪ জুলাই শ্রীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল সহকারী পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত আবেদন করে। কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় পুনরায় চলতি বছর ২০ জানুয়ারি গাজীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ২২ জানুয়রি গাজীপুর জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ফিরোজ বলেন, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখেই বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যে কারণে খালের পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। তারপরও যতটুকু ছিল তাও বর্জ্য ও আবর্জনা ফেলে বন্ধ করে ফেলেছে। ফলে ঘণ্টাখানেক বৃষ্টি হলেই এলাকা তলিয়ে যায়। পানিতে তলিয়ে যায় বাড়ি-ঘর, জমির ফসল নষ্ট হয়, মাছ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জেলা প্রশাসক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে সমাধানের জন্য জানিয়েছি। কিন্তু স্থায়ীভাবে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উদ্যোগ কেউই গ্রহণ করেনি।

বিজি কারখানার অডিট ও একাউন্টস বিভাগের এজিএম মো: ইনামুল হক বলেন, এই এলাকার একমাত্র পানি নিষ্কাশনের খালটির ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কালভার্টের নিচে ময়লা ফেলে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। গত দুই বছরে নিজস্ব অর্থায়নে সিটি করপোরেশন থেকে গাড়ি এনে কয়েকবার খালটি পরিষ্কার করেছি। প্রতিবার ৪-৫ লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু নতুন করে আবারো ময়লা ফেলা হয়। গাজীপুরের ডিসিসহ বিভিন্ন দফতরে চিঠি দিলেও আজও সুরাহা পায়নি।

বানিয়ারচালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন সরকার বলেন, এলাকার লোকজন নিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে দুই বার খালটি পরিষ্কার করেছি। রাতে দিনে পাহারা দেয়ার জন্য পাহারাদার বসানো হয়েছে। কিন্তু ভোর রাতে বিভিন্ন কোম্পানি ট্রাকে করে ময়লা এনে ফেলে চলে যায়। ময়লা ও জলাবদ্ধতার যন্ত্রণায় এলাকার মানুষজন অতিষ্ঠ।

গাজীপুরের সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল হক বলেন, আমি এখনো চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদিও তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে বিজি কারখানার কর্তৃপক্ষ।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতেহ মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের চিঠি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারি খাল হলে পানি নিষ্কাশনে ব্যক্তিগতভাবে প্রতিবন্ধকতা কেউ সৃষ্টি করতে পারবে না। এলাকাবাসীর জনদুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনে প্রজেক্ট নিয়ে সমাধান করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল