১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা : সাময়িক বরখাস্ত ৩, ঘটনা তদন্তে ৩ কমিটি

দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেন - ছবি : নয়া দিগন্ত

গাজীপুরে যাত্রীবাহী টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের সাথে তেলের কন্টেইনারবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় ট্রেনের ১০টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে ইঞ্জিনসহ মোট ১২টি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এঘটনায় উভয় ট্রেনের চালক (লোকো মাস্টার)সহ চারজন আহত হয়েছে।

এদিকে, শুক্রবার সকালের এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আর ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয়েছে তিনটি তদন্ত কমিটি।

সাময়িক বরখাস্ত ৩
শুক্রবার সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলরুটের জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশনের পার্শ্ববর্তী ছোটদেওড়া কাজীবাড়ী এলাকায় সংঘটিত এ দুর্ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার পর একজন স্টেশন মাস্টারসহ তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকৃতরা হলেন- আপগুন্টি স্টেশন মাস্টার মো: আবুল হাসেম, পয়েন্টস ম্যান সাদ্দাম হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান।

ঘটনা তদন্তে তিন কমিটি
এ ঘটনা তদন্তে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি এবং রেলওয়ের দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: মতিউর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মো: সফিকুল ইসলাম।

দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক বলেন, এ দুর্ঘটনায় কারো অবহেলা বা গাফিলতি আছে কিনা তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্ত কমিটিকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে রেলওয়ের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এরমধ্যে সিওপিএস মো: শহীদুল ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের আঞ্চলিক কমিটি করা হয়েছে।

আর রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী (সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন) সৌমিক শাওন কবিরকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, দুটি কমিটিকেই তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

দুর্ঘটনার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হিউম্যান ফেইলিওর অথবা টেকনিক্যাল প্রবলেমের কারণে ঘটে থাকতে পারে। তবে তদন্তের পর সঠিক কারণ জানা যাবে।’

স্থানীয় বাসিন্দা লতিবুর রহমান ও রেজাউল করিম বলেন, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা তেলবাহী ট্রেনটি আউটার সিগন্যালের দক্ষিণে আপলাইনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর চলতে শুরু করে। এসময় বিপরীত দিক আসা টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনটি একই লাইনে ঢুকে পড়লে সংঘর্ষ হয়। এতে বিকট শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। খবর পেয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং রেলওয়ের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে হাজির হন। উদ্ধার কাজ চলছে। তবে উদ্ধার কাজে কতক্ষণ সময় লাগতে পারে সে বিষয়ে তারা কিছুই বলতে পারেননি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন বলে টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনটি অনেকটা খালি অবস্থায় ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। এ কারণে হতাহতের ঘটনা কম হয়েছে। দু’টি ট্রেন বিকট শব্দে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে তেলের কন্টেইনারের ঢাকনা খুলে তেল ছিটকে পড়ে। সংঘর্ষে তেলের একটি বগি লিকেজ হয়ে তেল ঝড়ে পড়তে থাকে।

দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক বলেন, ভুল সিগন্যালের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তেলবাহী ট্রেনটি যাচ্ছিল রংপুরে এবং শুক্রবার থাকায় টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনে যাত্রীর সংখ্যা কম ছিল। এ ট্রেনটি ঢাকায় ফিরছিল। যাত্রীবাহী ট্রেনটি তেলবাহী ট্রেনের লাইনে প্রবেশ করলে সংঘর্ষে দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুত উদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু করতে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement