১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

তাপপ্রবাহে মুরগির খামার ও চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি

তাপপ্রবাহে মুরগির খামার ও চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি - ছবি : নয়া দিগন্ত

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দসহ দেশব্যাপী বৈরী আবহাওয়ায় তীব্র তাপদাহে কঠিন সময় পার করছে প্রাণীজগত। অত্যাধিক তাপপ্রবাহে হাঁসফাঁস করছে প্রাণিকুল। প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে লোডশেডিং। এতে বিপাকে পড়েছেন মৎস্য চাষি ও পোল্ট্রি মুরগী খামারিরা। গরমে মারা যাচ্ছে মাছ ও মুরগি। কমেছে মাছ, গোশত ও ডিম উৎপাদন। খামারে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার ও জেনারেটরের পেছনে অধিক পরিমান অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। অধিকাংশ পুকুর-ডোবা নালা শুকিয়ে যাওয়ায় হ্যাচারিগুলোতে মাছের পোনা উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার পুকুরে মাছ ও পোনা মারা যাচ্ছে। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ভর্তুকির দাবি করছেন অনেক খামারি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার উজানচর ছোটভাকলা, দেবগ্রাম, দৌলতদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট খামার ইতিধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন খামারে প্রতিদিন শত শত মুরগী মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। পুকুর ও ডোবা নালা শুকিয়ে পানি গরম হয়ে মাছ মারা যাচ্ছ। এতে তারা লাখ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

গোয়ালন্দ উপজেলার খামারী নজরুল ইসলাম, সেলিম মিয়া, লিখন খাঁন, হাবিব মিয়া, শফিককুল ইসলামসহ বিভিন্ন খামার মারা যাওয়া মুরগী দেখা যায়। প্রতিদিন খামারে ৩-৪ কেজি ওজনের ৮-১০টি করে মুরগি মারা যাচ্ছে। পাশাপাশি ডিম উৎপাদনও কমে গেছে। খামারে বৈদ্যুতিক পাখা সংযুক্ত করলেও অতিরিক্ত তাপে ও লোডশেডিংয়ে তা কাজে আসছে না। এতে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন খামারিরা।

জানা যায়, তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রির বেশি হলেই তা পোলট্রি শিল্পের জন্য হুমকি। এর অধিক তাপমাত্রা হলে ছোট খামারিরা মুরগি বাঁচাতে পারে না। বর্তমান এ অঞ্চলের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ওপরে। এ অবস্থা চলতে থাকলে হয়ত ছোট খামারগুলো টিকবে না। শুধু ছোট খামারিই নয়, খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে আছে বড় খামারি ও বাচ্চা উৎপাদনকারী হ্যাচারী মালিকরা। অধিকাংশ মুরগী খামারে দেখা যায় টিনের চালা। প্রচণ্ড রোদে ওপরে টিনের চালা হিট হয়ে তাপমাত্রা আরো বেড়ে যায়। মুরগী হিটস্ট্রোকে মারা যায়।

খামারী নজরুল ইসলাম কয়েকটি মরা মুরগী দেখিয়ে বলেন, বিদ্যুৎ বা জেনারেটর চালিত মেশিন দিয়ে টিনের চালার ওপরে পানির ফোঁয়ারা বা ঝর্ণা সিষ্টেম করে চালা ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাতে ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু তাতেও মুরগী মরা ঠেকানো যাচ্ছে না। এ সময় উজানচর নতুন পাড়া মাল্লাপট্টি ব্রিজ এলাকার ক্ষুদ্র ফার্মের মালিক সেলিম ও হাবিবুরের গত তিন দিনে সহস্রাধিক মুরগী মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।

অপরদিকে এ অঞ্চলের অধিকাংশ পুকুর, খালবিল, ডোবা, নালা শুকিয়ে গেছে। ফলে এ অঞ্চলে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কিছু কিছু পুকুরে কিছু পানি থাকলেও তা অধিক তাপমাত্রার কারণে গরম হয়ে মাছ মারা যাচ্ছে।

মৎস্য দফতর সূত্রে জানা যায়, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি বা তার কাছাকাছি থাকলে ৮০ শতাংশ মৎস্য রেণু নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত রেণু ও পোনা উৎপাদনের ভরা মৌসুম। তাছাড়া এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত মাছ সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়। এই সময়টায় মাছের চাষ স্বাভাবিক না থাকলে মোটা দাগে মাছ উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ সময় কোনো কোনো পুকুরে মরা মাছ ভাসতে দেখা যায়।

গোয়ালন্দের অনেক মৎস্য চাষি এ সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার মৎস্য হ্যাচারী থেকে মাছের ডিম কিনে এনে রেনু পোনা তৈরি করে ব্যবসা করে থাকেন। বর্তমান পোনা উৎপাদনের ভরা মৌসুম। কিন্তু ইতিমধ্যে অনেকের পুকুরের পানি অত্যাদিক গরম হয়ে ডিম রেনু নষ্ট হয়ে গেছে। অধিকাংশ পুকুরে পানি না থাকায় ডিম ও পোনা ছাড়তে পারছে না। ফলে তাদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে গোয়ালন্দ পৌরসভা ১ নম্বর ওয়ার্ড হাউলি কেউটিল ওলিমদ্দিন পাড়ার শহিদ সরদার বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে যশোর জেলার বিভিন্ন হ্যাচারী থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় ডিম কিনে এনে নিজ পুকুরে ফুটিয়ে রেনু পোনা তৈরি করে ব্যবসা করে আসছি। মৌসুম জুড়ে বিভিন্ন এলাকার পুকুর মালিকদের কাছে পোনা বিক্রি করে থাকি। এ বছর প্রচণ্ড রোদে পানি গরম হয়ে প্রথম চালানে আনা ডিম নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আমি প্রায় ৩ লাখ টাকা মার খেয়েছি। আবার কিভাবে ডিম আনব ভেবে পাচ্ছি না।

গোয়ালন্দ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাশেদুজ্জামান মিয়া বলেন, খামারের মুরগি এমনিতেই খুব দুর্বল। অতিরিক্ত গরম ও ঠান্ডা কোনোটাই সহ্য করতে পারে না। এই তাপদাহ প্রতিরোধে প্রান্তিক পর্যায়ে অনেক খামারির জেনারেটর কেনার সামর্থ্য নেই। তাঁরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ সময় খামারে টিনের চালে ভেজা চটের বস্তা, খড়, গাছের পাতা ও ডালপালা দিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা খামারিদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিতে আমরা সবাই প্রস্তুত রয়েছি।


আরো সংবাদ



premium cement