১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রাজবাড়ী পৌর শিশু হাসপাতাল ৭ বছর ধরে বন্ধ, ভোগান্তি চরমে

- ছবি - নয়া দিগন্ত

প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা ধরনের সঙ্কটে দীর্ঘ ২২ বছর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চললেও গত সাত বছর ধরে রাজবাড়ী জেলার একমাত্র পৌর শিশু হাসপাতালটি বন্ধ রয়েছে। এতে জেলায় একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতালের অভাবে নবজাতকসহ শিশুদের চিকিৎসায় ও মুমূর্ষু শিশুদের নিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে স্বজনেরা।

বিষয়টি নজরে নিয়ে শিগগিরই জেলার একমাত্র পৌর শিশু হাসপাতালটি চালুর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন পৌর মেয়র।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চার রুমের একটি একতলা ভবন। রাজবাড়ীর একমাত্র পৌর শিশু হাসপাতালে ঢোকার পথে দু’পাশে ব্যবসায়ীদের কাঠখড়ির স্তুপ। ভবনের মূল ফটকের সামনে কেউ ফেলছে ময়লা-আবর্জনা, রাতের আঁধারে চলছে অসামাজিক কাজ ও মলমূত্র ত্যাগ। চারপাশে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়, জন্মেছে আগাছা। ভবনের কলাপসিবল গেটটিও ভাঙা। কক্ষগুলো তালাবদ্ধ, দরজা-জানালা ভেঙে গেছে। দুর্গন্ধে পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়াই কষ্টকর। দেখে মনে হয়, রাজবাড়ী পৌর শিশু হাসপাতালটি যেন নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বাহির থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই, এটা হাসপাতাল। সন্ধ্যা হলেই বসে মাদকসেবীদের আড্ডাখানা।

রাজবাড়ী পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী পৌরসভার রাজবাড়ী-বালিয়াকান্দি সড়কের শহরের নতুন বাজার এলাকায় ১৯৯৫ সালে স্থাপিত হয় রাজবাড়ী জেলার একমাত্র পৌর শিশু হাসপাতালটি। শুরু থেকে পৌরসভার অর্থায়নে একজন শিশু চিকিৎসক ও দু’জন সহকারী দিয়ে হাসপাতালটি পরিচালিত হতো। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া স্বল্পমূল্যে হাসপাতালটিতে শিশুদের দেখে ব্যবস্থাপত্র দেয়া হতো। এভাবেই হাসপাতালটি চলেছে ২২ বছর।

সর্বশেষ হাসপাতালের চিকিৎসক ছিলেন ডা. আব্দুর রশিদ। তিনি ২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেয়ার পর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এর কার্যক্রম। তখন পৌরসভা আর্থিক সঙ্কট দেখিয়ে নতুন কোনো চিকিৎসক নিয়োগ দেয়নি।

স্থানীয়রা বলেন, গত প্রায় সাত বছর ধরে এখানে কোনো চিকিৎসক আসেন না। শুধু সপ্তাহে এক দিন পৌরসভা থেকে টিকা দিতে আসেন। দুর্গন্ধের কারণে টিকা প্রদানকারীরা বাইরের দোকানে বসে স্বল্প সময়ে টিকা দিয়ে চলে যান।

জেলায় একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল না থাকায় প্রতিনিয়তই সাধারণ মানুষকে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। শিশুদের ভালো চিকিৎসার জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গেলে বেশিরভাগ সময়ই পাশের জেলা ফরিদপুরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভালো কোনো শিশু চিকিৎসক নেই। এসব ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবার সহজে অন্য জেলায় যেতে পারলেও বিপাকে পড়ে দরিদ্ররা। এ কারণে শহরবাসীর দাবি, বন্ধ থাকা হাসপাতালটি একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল হিসেবে চালু করা হোক। পাঁচটি উপজেলা মিলে ১২ লাখের মানুষের বসবাস এই জেলায় কোনো শিশু হাসপাতাল নেই। হাসপাতালটি চালু করে শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দাবি জানান স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পৌরসভার সাবেক কমশিনার মো: মিজানুর রহমান বলেন, এটি দেখে হাসপাতাল মনেই হয় না, মনে হয় একটি ভূতের বাড়ি। রাজবাড়ী পৌর শিশু হাসপাতাল শুধু লেখায় রয়েছে, তাছাড়া এখানে কোনো কিছুই করা হয় না।

এ ব্যাপারে রাজবাড়ী পৌর মেয়র আলমগীর শেখ তিতু বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেয়ার অনেক আগেই হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে রয়েছে। আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি চেষ্টায় আছি এই হাসপাতাল পুনরায় চালু করতে।’


আরো সংবাদ



premium cement