১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
গাজীপুর-বিমানবন্দর বিআরটি প্রকল্প নিয়ে গণশুনানি

দুর্ভোগের অবসান হবে, মাত্র ৪৪ মিনিটে যাওয়া যাবে বিমানবন্দর

দুর্ভোগের অবসান হবে, মাত্র ৪৪ মিনিটে যাওয়া যাবে বিমানবন্দর - ছবি : নয়া দিগন্ত

দীর্ঘ ১২ বছর ধরে চলমান বহুল প্রতিক্ষিত গ্রেটার সাসটেইনেবল আরবান ট্রানজিট প্রজেক্ট (বিআরটি, গাজীপুর-এয়ারপোর্ট) প্রকল্পের কাজ ৯০ শতাংশ সমাপ্ত হয়েছে।

আগামি জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে গাজীপুরসহ দেশের উত্তরাঞ্চল এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহগামী যানবাহন ও যাত্রীদের গত বারো বছরের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের অবসান হবে বলে জানিয়েছেন বিআরটি প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেলে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের ভাওয়াল সম্মেলন কক্ষে এক গণশুনানিকালে ওই প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ এ তথ্য জানান।

এদিকে গণশুনানী চলাকালে অংশীজনরা প্রকল্পের নানা অসঙ্গতি নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টির সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। প্রকল্পে না অসঙ্গতি ও ভুল করায় একদিকে যেমন অর্থের অপচয় হচ্ছে তেমনি সময় মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। তাই এরসাথে জড়িত ডিজাইনার ও প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানিয়েছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।

গণশুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) এ কে এম শামীম আক্তার।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো: মনিরুজ্জামান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, বিআরটি’র প্রকল্প পরিচালক মো: ইলিয়াস আহমদ, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মো: আলমগীর হোসেন।

গণশুনানিতে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন গাজীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ মুকুল কুমার মল্লিক, মো: মুজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শাহ সামসুল হক রিপন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল আহমদ সরকার, মো: আমিনুল ইসলাম, শরীফ আহমদ শামীম ও আসাদুর রহমান আসাদ প্রমুখ।

গণশুনানিতে জানানো হয় গাজীপুর শহরের শিববাড়ি থেকে ঢাকা বিমান বন্দর পর্যন্ত ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ বাসে যেতে সময় লাগবে ৪৪ মিনিট। কোম্পানির নিজস্ব ১৩৭টি নতুন ডিজেল চালিত এসি বাস চলাচল করবে। প্রকল্পের শিববাড়ি ও বিমানবন্দরে দুটি বাস টার্মিনাল, আটটি ফ্লাইওভার, ২৫টি বাস স্টপেজ, ১৫টি ফুট ওভারব্রিজ, ফুটপাত ৩২ কিলোমিটার, উভয় পাশের ড্রেন ৫৫ কিলোমিটার এবং মাটি থেকে নিয়ম অনুযায়ী উচ্চতা থাকবে ৮ দশমিক ৫ মিটার।

বাস চলাচলের সময় কোথাও জ্যাম থাকবে না এবং যথারীতি ৪৪ মিনিটে গন্তব্যে পৌছার নিশ্চয়তা থাকবে। গণশুনানিতে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমসহ কয়েকজন সাংবাদিক প্রকল্পের ধীরগতি ও দীর্ঘসূত্রিতা এবং প্রকল্পের কয়েকবার ব্যয়-বৃদ্ধি ও ত্রুটি-বিচ্যুতির সমালোচনা করে জনদুর্ভোগের বিষয়টি তুলে ধরেন। পাশাপাশি প্রকল্প-সমাপ্তির শেষ পর্যায়ে এসে গণশুনানি না করে প্রারম্ভিককালে গণশুনানি করলে যেসব ত্রুটি ধরা হয়েছে সেগুলো এড়ানো সম্ভব হতো বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

প্রকল্পের এই সড়কটি চাহিদা অনুযায়ি প্রশস্ত নয়, ফুটপাতের স্বল্পতা, ইউ-টার্নগুলি অনেক দুরবর্তী স্থানে, ড্রেনেজ ব্যবস্থপনায় দূর্বলতা, ফুটওভার ব্রিজ পর্যাপ্ত নয়। এসব ত্রুটিগুলো ধরে এগুলোর নিরসনে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করা হয়।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম গণশুনানীতে অংশ নিয়ে বিআরটি প্রকল্পের ডিজাইনে যারা জড়িত ছিলেন তাদের উদ্দেশে বলেন, এ প্রকল্পে নানা অসঙ্গতি ও ত্রুটি রেখে দেশের অর্থের ও সময়ের অপচয়ের দায়ে বিআরটি প্রকল্পের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট ডিজাইনার ও প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে বিভাগীর মামলা ও গ্রেফতারের ব্যবস্থা করার দাবি করছি।

তিনি আরো বলেন, যদি পাঁচ হাজার টাকা চুরি করে তার জন্য যদি কোর্টে হাজিরা দিতে হয় তবে যারা হাজার হাজার কোটি টাকা নষ্ট করল, লাখ লাখ মানুষের ক্ষতি ও ভোগান্তি করল তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না। যানজট নিরসনে গাজীপুর সিটির টঙ্গী থেকে গাজীপুর শহর পর্যন্ত ১১৩টি সাবরোড করার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি, হয়েছে মাত্র ৫৬টি সাবরোড। গাজীপুরে সাড়ে চার লাখের মতো গার্মেন্ট শ্রমিক আছে, রাস্তার দুপাশে কয়েক হাজার বাড়ি আছে এবং প্রায় ৭০০ মতো ইন্ডাস্ট্রি আছে। এখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থায় ত্রুটি নিয়ে ২০১৮ সালে জানানো হয়েছিল কিন্ত তার ত্রুটি মুক্ত করা হয়নি। বলা হয়েছিল রাস্তা ফুটপাতের ওপর দখল করে যেসব হকার বসে তাদের জন্য ১০টি হকার মার্কেট করে দেয়ার জন্য কিন্তু তা-ও করা হয়নি। আজকে ভিডিও প্রেজেন্টেশনে বিআরটি প্রকল্পের যে ডিজাইনটি দেখানো হয়েছে তার সাথে বাস্তবের মিল নেই। উত্তরবঙ্গ থেকে যে সকল যানবাহন চলাচল করবে তাদের জন্য ব্রিজের নিচে অপ্রশস্ত রাস্তা ব্যবহার করতে গিয়ে যানজট লেগেই থাকবে। রাস্তার আশে পাশে পাঁচটি খাল রয়েছে। এ খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এ খালগুলো খনন না করায় বর্ষার সময় বৃষ্টির পানি, বন্যার পানি কিভাবে গড়াবে তার কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। এতে রাস্তায় পানিবদ্ধতা দেখা দেবে। বিআরটি প্রকল্পে স্থাপনকরা স্টেশনগুলোর খাড়া সুউচ্চ ব্রিজে বয়ষ্ক মানুষের জন্য উঠতে-নামতেও সমস্যা হবে। তাই তিনি এ ছাড়া ব্রিজের পাশে অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ পথচারীদের চলাচলের ফুটপাথের ওপরে ব্রিজের খুটি স্থাপন করা হয়েছে। ফলে মানুষকে ফুটপথ ছেড়ে সড়কে নামতে হচ্ছে। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ও যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। তাই এসব ডিজাইন করার সময় সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মকর্তাদের বিবেক খাঁটিয়ে করা উচিত ছিল। এছাড়া গাজীপুরে সড়ক ও মহাসড়কে নন বিআরটি অংশের রাস্তা অপ্রশস্থ হওয়ায় একটি গাড়ি চলতে গিয়েই সমস্যা হয়। এর পাশে ফুটপথ না রাখায় পথচারীরাও ননবিআরটি অংশ দিয়ে পথ চলতে হচ্ছে। তাই যানজট কমার চেয়ে আরো তীব্র হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। গাজীপুরে এলাবাসী ও পোশাক শ্রমিকদের রাস্তা পরাপারে জন্যও যথেষ্ট কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। যে অর্থে এখানে বিআরটি প্রকল্প করা হচ্ছে তার ডিজাইনে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থাকায় তার ফলাফল থেকে বঞ্চিত হবে দেশের মানুষ। তাই তিনি গাজীপুরে যানজট নিরসনে বিআরটি প্রকল্পে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ, প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করে নন-বিআরটি অংশের রাস্তা প্রশস্তকরণসহ ও ফুটপথ নির্মাণকাজ যুক্ত করার পরামর্শ দেন। এছাড়া আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর শহর পর্যন্ত একটি এবং আশুলিয়া থেকে কড্ডা পর্যন্ত আরো একটি বিকল্প রোড নির্মানেরও অনুরোধ জানান জাহাঙ্গীর আলম।


এ সময় বিআরটি প্রকল্পের এয়ারপোর্ট-গাজীপুর অংশ নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন প্রদান করা হয়।

উল্লেখ্য, নগরে ছন্দময় পথচলা এই স্লোগান নিয়ে বাংলাদেশে প্রথম বিআরটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ২০ দশমকি ৫ বিআরটি লেনের কার্যক্রম শুরু হয়। দীর্ঘ মেয়াদী পরিবহণ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সমন্বয় সাধনের জন্য ২০০৫ সালে স্টাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান প্রণয়ন করে তা ২০১৫ সালে রিভাইজ করা হয়। যার আওতায় বিআরটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় পাঁচ একর জমিতে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন বাস ডিপো নির্মাণ করা হয়েছে। এর করিডোরের দুপাশে ৩৪ কিলোমিটার ফিডার রোড নির্মাণ করা হয়েছে। এর দুপাশে ২৪ দশমিক ৪২ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের নয়টি ফ্লাইওভারের মধ্যে ২৪ মার্চ সাতটি খুলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৩২ কিলোমিটার ফুটপথের ৪০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের কাজটি শেষের দিকে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই চালু হবে বাস।

বিআরটি প্রকল্পের সুবিধা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে নিজস্ব বিআরটি লেন, পরিবেশবান্ধব পরিবহন, যানজটমুক্ত পরিবহন ব্যবস্থা, অটোমেটিক টিকেটিং সিস্টেম, ২০ দশমকি ৫ কিলোমিটার রাস্তায় ২৫টি স্টেশন, গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট ৩৫-৪০ মিনিটে পৌঁছে যাবে। এছাড়াও ৩০ সেকেন্ড পরপর স্ট্যান্ডার্ড এসি বাস চলবে, বিআরটি লেনে অন্য কোনো পরিবহন চলবে না, লেনের উভয় পাশে ব্যারিকেট দেয়া থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারে ৫৩ নাগরিকের উদ্বেগ ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে দুর্নীতি কে প্রশয় দেয়া হবে না : জাতীয় নাগরিক কমিটি ফতুল্লা থেকে অপহৃত ২ শিশু বরিশাল থেকে উদ্ধার মহানবী সা:-কে নিয়ে কটূক্তি করা শিক্ষককে চাকরিচ্যুতের দাবি টাইম ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা ব্যক্তি ট্রাম্প আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য দিবসে রিকের র‌্যালি ও মানববন্ধন অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সভাপতি হাসান শরীফ, সাধারণ সম্পাদক সোহেল চুয়েটে র‌্যাগিংয়ের দায়ে ১১ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার ঢাকায় উচ্চমাত্রার হর্ন ব্যবহার না করতে ডিএমপির নির্দেশনা তামিমের ঝড়ে জয় পেল চট্টগ্রাম তথ্য উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়ে ধোঁয়াশা, কর্মকর্তা প্রত্যাহার

সকল