০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সোনারগাঁওয়ের গাছে গাছে এখন রসাল লিচু

সোনারগাঁওয়ের গাছে গাছে এখন রসাল লিচু - নয়া দিগন্ত

সোনারগাঁওয়ের বিখ্যাত রসাল লিচু পেকেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই লিচু বাজারে পুরোদমে বিক্রির করবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। এবার খড়া ও ঝড় বৃষ্টি তেমন না থাকায় লিচুর ভালো ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন লিচু ব্যবসায়ীরা। তবে ভালো ফলন হলে কী হবে, এবার করোনার প্রভাবে দুশ্চিন্তায় পড়ছেন সোনারগাঁওয়ের লিচু বাগানি ও ব্যবসায়ীরা। করোনা পরিস্থিতিতে লিচুর উপযুক্ত দাম পাওয়া ও বিক্রি নিয়ে শঙ্কিত তারা। দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের।

সোনারগাঁওয়ের লিচু আগাম বাজারে আসে বলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের লিচুর তুলনায় সোনারগাঁওয়ে লিচুর চাহিদা থাকে একটু বেশি। সুস্বাদু সুমিষ্ট হিসেবে সোনারগাঁওয়ের লিচু সারা দেশে বেশ পরিচিত।

বিভিন্ন লিচু বাগান ঘুরে দেখে যায়, এখন প্রতিটি বাগানের লিচু গাছে থোকায় থোকায় কাঁচা পাকা লিচু ঝুলছে। ঝাকড়া গাছের ডালে ডালে ঝুলন্ত লাল টকটকে রঙের ছোট ফলের গুচ্ছ লিচুর দৃশ্য খুবই মনোরম। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। বাদুর ও কাকের উপদ্রপ থেকে বাঁচতে বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা গাছের চুড়ায় ইলেক্সটিক বাতি, পলিথিন কাগজ, বাস ও টিনের তৈরী বিভিন্ন ধরনের বাজনা (ঠাডা) লাগিয়ে বাগানের ভেতর ঘর বানিয়ে রাতভর পাহারা বসিয়েছেন। এ কাজে ব্যবসায়ীদেরকে তাদের পরিবারের সদস্যরা ও শ্রমিকরা সহযোগিতা করছে। অনেক ব্যবসায়ী লিচু গাছ থেকে লিচু ছিড়ে বাজারে বিক্রি করার জন্য টুকরি, বাঁশ, রসি ও বিভিন্ন সরঞ্জাম সংগ্রহ করছেন।

সোনারগাঁও উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলার সোনারগাঁও পৌরসভার, বৈদ্যেরবাজার, মোগরাপাড়া, বারদী, সনমান্দি ও সাদিপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে লিচু বাগান রয়েছে। তবে পৌরসভার সরদার বাড়ী, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, দুলালপুর, বাড়ী মজলিশ, দীঘিরপাড়, পানাম, অর্জুন্দি, বাগমুছা, দত্তপাড়া, গোবিন্দপুর, হাতকোপা,দরপত,ছাপেরবন্ধ, গোয়ালদী, টিপরদী, হরিষপুর, ইছাপাড়া, চিলারবাগ, কৃষ্ণপুরা, হাঁড়িয়া, পানাম গাবতলী, ষোলপাড়া ও ভট্টপুর এলাকায় উৎকৃষ্টমানের লিচুর চাষ হয়ে থাকে। সোনারগাঁওয়ের লিচু রঙে ও স্বাদে অতুলনীয়।

লিচু চাষিরা জানিয়েছেন, সোনারগাঁওয়ের লিচু বর্তমানে কদমী, মোজাফফরপুরী, চায়না-৩ ও এলাচি, পাতি এ পাঁচ ধরনের লিচুর চাষ হয়ে থাকে। তবে অন্যান্য লিচু থেকে বর্তমানে কদমী লিচু চাষের প্রতি মনোযোগী হয়ে পড়েছেন চাষিরা। প্রতি বছর এক একটি বাগান তিন চার লাখ টাকায় বিক্রি হয়। তাই চাষিরা কোথাও একটু খালি জায়গা পেলেই সেখানেই কদমী লিচুর বাগান তৈরি করছেন। আগে প্রতি বাড়ির আশপাশের সৈখিনতার বসে লিচু গাছ লাগালেও বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য বিভিন্ন নিচু জমি ভরাট করে লিচু বাগান তৈরী করা হচ্ছে।বাড়ির অঙিনায় ও কৃষি জমির পাশেও লিচুর চাষ শুরু করেছেন অনেকে। লিচুর মধ্যে সবার আগে বাদামি (পাতি) লিচু পাকে বলে ক্রেতারা সবার আগে এ লিচু হাতে পান।

সোনারগাঁওয়ে ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় তিন শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে। এ বাগানে বেশির ভাগই কদমি লিচু চাষ হচ্ছে। স্বাদে ও রসে পাতির লিচুর কদর রয়েছে।

লিচু বাগানি ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল জানান, সোনারগাঁওয়ে বিভিন্ন প্রজাতির লিচুর চাষ হলেও কদমি লিচু চাষ করে অধিক মুনাফা পাওয়া যায় বলে এ লিচু চাষের প্রতি সবাই মনোযোগী। তিনি আরো জানান, প্রথমে ছোট পরিসরে এর চাষ শুরু হলেও এখন তা ব্যাপকভাবে হচ্ছে। লিচু ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় প্রতিনিয়ত জমির মালিকরা লিচু গাছ লাগাচ্ছেন। এবার করোনার প্রভাবে বাগানের ভালো দাম পাইনি।

দিঘিরপাড় এলাকার লিচু ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান জানান, আমরা লিচুর ফলন না দেখেই বাগান মালিকের কাছ থেকে ক্রয় করে থাকি। লিচু ব্যবসায়ীরা ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে লিচু ব্যবসা করে। তবে এবারে করোনার জন্য দুশ্চিন্তায় রয়েছি। দাম ভালো পাব কি না শঙ্কায় আছি।

সোনারগাঁও পৌরসভার দরপত এলাকার লিচুর বাগান মালিক লিটন মুছা জানান, আমার ৩২ শতাংশ জমিতে ২৮টি লিচুর গাছ রয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ভালো ফলন হয়েছে।

লিচু ব্যবসায়ী ফারুক মিয়া বলেন, এ বছর ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে আমরা বিক্রি করতে পারবো কিনা জানি না। সরকার যদি বিক্রির জন্য সুবিধা দেয় তাহলে কিছু টাকা লাভজনক হতে পারব, পুজি পাট্টা উঠাইতে পারবো।

স্থানীয়রা জানান, অন্যান্য এলাকার লিচুর চেয়ে সোনারগাঁওয়ের লিচু আকারে একটু বড় ও সুস্বাদু হওয়ায় এ লিচুর চাহিদা বেশি রয়েছে আর সোনারগাঁওয়ের লিচু সবার আগে বাজারে আসে তাই এ লিচুর চাহিদা একটু বেশি। তুলনামূলকভাবে লিচু বেশ দাম থাকে। তবে এবার কতটুকু দাম পাবে তা বলা মুশকিল, কারণ করোনা।

সোনারগাঁও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরা আক্তার জানান, সোনারগাঁওয়ে লিচু পাকার জন্য চাষিরা কোনো রাসানিক দ্রব্য প্রয়োগ করে না। তবে, লিচু বড় হওয়ার ক্ষেত্রে হরমোন জাতীয় ওষুধ, লিচুর রঙ নষ্ট না হওয়ার জন্য ছত্রাকনাশক ও পোকার উপদ্রব বন্ধ করার জন্য তারা কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকেন।

সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম জানান, সোনারগাঁওয়ের লিচু আকারে বড় ও সুস্বাদু হয়ে থাকে। এবছর লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। করোনার কারণে যাতে লিচু হাটে-বাজারে নিতে ব্যবসায়ীদের কোনো সমস্যা না হয় সেই ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement