১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বীণের কথা

-

বীণ বেদে ও সাপুড়ে সম্প্রদায়ের এক ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র। এটি অনেকের কাছে তুবড়ি নামে পরিচিত। অঞ্চলভেদে এটি তিক্তিরী ও পুঙ্গী নামেও পরিচিত। বীণ শুধু আমাদের দেশেই নয়, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার আরো অনেক দেশের সাপুড়ে এই বাদ্যযন্ত্র প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহার করে আসছেন।
সাপুড়েদের বিশ্বাস, বীণের বিশেষ সুরে সাপ সাড়া দেয়। ভালোভাবে বীণ বাজাতে পারলে লুকানো সাপ সে সুরের আকর্ষণে বেরিয়ে আসে। তখন সাপুড়েদের সেসব সাপ ধরতে সুবিধে হয়। এ ছাড়া সাপের খেলা দেখানোর জন্য সাপুড়েরা বীণ বা তুবড়ি বাজিয়ে থাকেন। বীণের মধুর সুরে সাপ ফণা তুলে মাথা দুলিয়ে নাচে।

ফুঁ দিয়ে বাজানো হয় বলে বীণ শুষির অন্তর্ভুক্ত বাদ্যযন্ত্র। বিশেষ জাতের ছোট আকারের লাউকে পাকিয়ে ও শুকিয়ে বীণের প্রধান অংশ তৈরি করা হয়। এই বিশেষ জাতের লাউ হয় পাহাড়ে। বর্তমানে এ ধরনের লাউয়ের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে অনেকেই ঝুনা নারকেলের খোলকে বীণ তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করছেন। শুকনো লাউকে বস বলে। লাউ বসের খোলের ভেতর এক জোড়া বাঁশি জুড়ে দিয়ে তুবড়ি তৈরি করা হয়। খোলে ফুঁ দেয়ার জন্য অন্য প্রান্তে একটি খাটো নল লাগানো হয়। বাঁশের তৈরী এক জোড়া বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে বীণ বাজানো হয় আর বাঁশির ছিদ্রে হাতের আঙুল ব্যবহার করে বীণের সুর নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফুঁ দেয়া বাতাস প্রথমে লাউয়ের খোলে প্রবেশ করে যা আঙুল দিয়ে চেপে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই বাঁশির অন্যতম বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, ফুঁ দেয়া বন্ধ হলেও কিছুক্ষণ বীণ বাজতে থাকে।

লাউখোলের মধ্যে সঞ্চিত বাতাস বাঁশি বাজতে সাহায্য করে। এতে একটু বিরতি দিয়ে বা দম নিয়ে পরে ফুঁ দেয়া যায়। কেননা বীণ বাজাতে যথেষ্ট জোরে ফুঁ দিতে হয়। এতে বীনবাদকের কষ্ট হয়। এখনো এ দেশে প্রত্যেক সাপুড়ের বীণ থাকে। তবে সাপুড়েদের সংখ্যা দিন দিন কমছে। ফলে বীণবাদকদের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। তা ছাড়া বীণবাদনের ওপর কোনো শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় সাপুড়েরা নিজেদের দক্ষতার গুণেই বীণ বাজিয়ে থাকেন। অন্য কোনো শিল্পীরা সাধারণত বীণ ব্যবহার করেন না।
ছবি : সংগ্রহ

 


আরো সংবাদ



premium cement