১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

আমাদের জেলে

-

জানো, নদীমাতৃক বাংলাদেশ । অতীতে এ দেশের দুটো প্রধান ঐতিহ্য ছিল- নৌকা আর জলাশয়ে মাছ ধরা। এ দেশে অতীতে প্রায় ১৫০ রকমের নৌকার চলাচল ছিল। সাগর, নদী ও খালে যারা মাছ ধরত তাদের বলা হতো জেলে এবং এখনো তারা এ নামেই পরিচিত।
জল থেকে জাল, আর জাল থেকে হয়তো জেলে শব্দের উদ্ভব। অনেক জেলে মাছ ধরার কাজে নৌকা বা ডোঙা ব্যবহার করত। এখনো অনেকে তাদের সেই ঐতিহ্যবাহী পূর্বপুরুষের পেশায় রয়ে গেছে। সুপ্রাচীনকাল থেকে এ দেশে জেলে সম্প্রদায় মাছ ধরার পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। দেশে প্রায় ১৪ লাখ জেলে রয়েছে। জেলেরা যেখানে বসবাস করে বা মাছ শুঁটকি করে সে জায়গাকে বলা হয় ‘জেলে পল্লী’। নদী, খাল, সাগর প্রভৃতি জায়গায় জাল টেনে তারা মাছ ধরে আসছে। জেলেরা অতীতে তাদের পল্লীতে নানা ধরনের উৎসব করত, গঙ্গাপূজা দিত, এখন সেগুলোও কমে গেছে। তবে শীতের শেষে কোনো কোনো অঞ্চলে মাছ ধরার ‘বইদ উৎসব’ এখনো রয়ে গেছে।

জেলেরা মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত। ১৮৭২ সালে লিখিত ডব্লিউ হান্টারের বর্ণনাতে সেকালে হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলমান সম্প্রদায়ের জেলেদের উপস্থিতিও দেখা যায়। সেকালে হিন্দু জেলেদের মধ্যে ২৩ টি গোত্রের অস্তিত্ব ছিল। এগুলো হলো কৈবর্ত, কেওয়াট, কারিতা, তেওয়ার বা রাজবংশী, দাস শিকারি, মালো বা জালো, চ-াল, বেরুয়া, জিয়ানি, করাল, পোদ বা বিন্দু, বাগদি, পাটনি, নদীয়াল, মালি হারি, গোনরি, বানপুর, গাঙ্গোতা, মুরারি, সুরাইয়া ও লোহিত। মুসলিম সমাজে জেলেরা নিকারি, ধাওয়া, আবদাল ইত্যাদি বলে পরিচিত। তারা মাছ ব্যবসায়ের সাথেই বেশি জড়িত। তবে এখন অনেক মুসলমান লোকেরাও মাছ ধরার কাজে জড়িত।
বর্তমানে নদী ও জলাশয় সঙ্কুচিত হয়ে পড়ায় এখন সাগরমুখী জেলেদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। পক্ষান্তরে এখন নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাছ চাষের ফলে প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছ ধরা কমে গেছে। তা ছাড়া আগের মতো ওসব জায়গায় মাছও পাওয়া যায় না। আবহমান বাংলার জলাভূমিতে মাছ ধরার যে চমৎকার দৃশ্য, সে দৃশ্যও যেন এখন বিরল।

 


আরো সংবাদ



premium cement