১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


রাজারবাগ পীর সম্পর্কে যা বলা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে

রাজারবাগ পীর সম্পর্কে যা বলা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে মিথ্যা মামলা, ভুয়া ওয়ারেন্ট এবং জামিনের পেশাদার চক্র গড়ে উঠেছে। আর এইসব মামলায় হয়রানি ও নিঃস্ব হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

সম্প্রতি ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক’ মামলার জন্য আলোচনায় এসেছেন ঢাকার রাজারবাগ এলাকার পীর দিল্লুর রহমান।

গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডির তদন্তে জানা যায়, পীর দিল্লুর রহমান বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৮০০টি ভুয়া মামলা করেছেন। এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৪৯টি মামলা দেয়ার তথ্যও পেয়েছে তদন্ত কর্মকর্তারা।

আর এইসব মামলার পেছনে আছে সাত হাজার একর জমি ও রাবার বাগান দখল। পীরের পক্ষে তার অনুগতরা এসব মামলা দায়ের করেছেন বলে জানা গেছে।

বিষয়টি দেশের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। মামলাগুলো স্থগিত করে পীরের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। শুধু তাই নয়, এর আগে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রাজারবাগ পীরের সব আস্তানা বন্ধের যে সুপারিশ করেছে, তা বাস্তবায়নের জন্যও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তবে রাজারবাগ পীরের পক্ষে এক বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ৮০০ দূরের কথা, তিনি কারো বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেননি। কিন্তু যারা মামলা করেছেন, তারা কোনো না কোনোভাবে পীরের লোক। পীর এখানে কৌশল অবলম্বন করেছেন।

যারা মামলার শিকার হয়েছেন তাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির জানান, ‘সিআইডির তদন্তে দেখা গেছে, যারা মামলা করেছেন তারা পীরের মুরিদ, আইনজীবী, কর্মচারী ও বাবুর্চি যারা মামলা করেছেন তারা কেউ বাদিদের চেনেন না। মামলার উদ্দেশ্য হলো দেশের বিভিন্ন এলাকায় পীরের অবৈধ জমি দখল করা অথবা দখল করা জমি নিজের আয়ত্তে রাখা।’

তিনি বলেন, ‘আদালত এখন তিন ধরনের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। পীরের পক্ষে করা সব মামলা একযোগে সিআইডি তদন্ত করে দেখবে। তারপর মামলাগুলোর ভবিষ্যত নির্ধারণ করা হবে। পীরের কোনো উগ্রবাদী সংশ্লিষ্টতা আছে কি না তা তদন্ত করবে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। তাছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনকে পীরের সম্পদের তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তবে রাজারবাগের পীরের এসব মামলাই দেশের একমাত্র ঘটনা নয়। বাংলাদেশে মিথ্যা মামলার একাধিক চক্র আছে বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয় ভুয়া ওয়রেন্ট ও জামিনেরও চক্র আছে।

ভুয়া ওয়ারেন্টে অনেক লোকেরই হাজতবাসের ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। গত বছর হাইকোর্ট এসকল চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল। কারণ এই ধরনের চক্রে আদালতের এক শ্রেণীর কর্মচারী ও আইনজীবীও জড়িত।

আইনজীবী শিশির মনির জানান, ‘হাইকোর্টে এ নিয়ে একজন আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা চলছে। আর মূল কথা হলো আমাদের বিচার ব্যবস্থার যে সিস্টেম তাতে মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করা সহজ। দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলার পর মামলা দিয়ে জীবন অতিষ্ট করে তোলা হয়। পঞ্চগড়ে মামলায় জামিন পেলে, কক্সবাজারে মামলা হয়, সেখানে জামিন পেলে ঢাকায় মামলা হয়। এভাবে চলতে থাকে।’

আর বাংলাদেশের আইনেই মিথ্যা মামলার করার ফাঁক আছে বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু।

তিনি জানান, ‘১৯৪৪ সালের পুলিশ প্রবিধানেই বলা আছে সত্য বা মিথ্যা যে অভিযোগই করা হোক না কেন তা মামলা হিসেবে থানাকে রেকর্ড করতে হবে। আর কোনো মামলা মিথ্যা প্রমাণের আগে তাকে মিথ্যা বলার সুযোগ নেই।’

অবশ্য আদালতের রায়ের আগে তদন্ত পর্যায়েও মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হতে পারে। তবে তা হতে হবে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে। তদন্ত পর্যায়ে যদি পুলিশ দেখে মামলা মিথ্যা তাহলে তদন্ত কর্মকর্তা আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেবেন। আর তখন ম্যাজিস্ট্রেট চাইলে বাদিকে শোকজ করে তাৎক্ষণিকভাবে সিআরপিসির (দণ্ডবিধির) ২৫০ ধারায় ছয় মাসের কারাদণ্ড দিতে পারেন। আবার মামলার রায়ে যদি আসামি নির্দোষ প্রমাণিত হন তখনো বাদির বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিতে পারেন।

তিনি বলেন, ‘তবে মিথ্যা মামলার এই প্রতিকার পাওয়ার তেমন কোনো নজির নেই। এটা অনেকটাই আদালতের ওপর নির্ভর করে।’

এদিকে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মিথ্যা মামলার ব্যাপারে আলাদাভাবে প্রতিকারের ব্যবস্থা আছে। মামলা মিথ্যা প্রমাণ হলে সাত বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে।

সূত্র : ডয়েচে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement

সকল