১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বিদায়ী টেস্টে ইংল্যান্ডকে জয় উপহার দিতে চান এন্ডারসন

বিদায়ী টেস্টে ইংল্যান্ডকে জয় উপহার দিতে চান এন্ডারসন - ছবি : সংগৃহীত

লর্ডসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শুরু হওয়া তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে যাচ্ছেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি পেসার জেমস এন্ডারসন। জয় দিয়ে বিদায়কে রাঙাতে চান এন্ডারসন। টেস্ট ফরম্যাটে পেসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭০০ উইকেটের মালিক হলেও ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে এসেও জয়কে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন ৪১ বছর বয়সী এন্ডারসন।

তিনি বলেন, ‘শেষ ম্যাচে উইকেট শিকার করতে পারি বা না পারি, তাতে কোনো আক্ষেপ থাকবে না। পুরো ক্যারিয়ারে যেমন দলের জয়ই বড় লক্ষ্য ছিল, শেষ ম্যাচেও অন্য কিছু ভাবছি না।’

এন্ডারসনের শেষ ম্যাচ নিয়ে শিহরিত ওয়েস্ট ইন্ডিজও। তবে অভিজ্ঞ এই পেসারের ‘অবসর-পার্টি’ পণ্ড করার লক্ষ্য ক্যারিবীয়দের। ক্রিকেটের মক্কাখ্যাত লর্ডসে আগামীকাল বুধবার বিকেল ৪টায় শুরু হবে সিরিজের প্রথম টেস্ট।

ইংল্যান্ডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রব কি, টেস্ট দলের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও টেস্ট অধিনায়ক বেন স্টোকসের সাথে আলোচনার পর গত এপ্রিলে অবসরের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছিল এন্ডারসনের। ২০২৫-২৬ মৌসুমের অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হতে যাওয়া অ্যাশেজকে সামনে রেখে ইংল্যান্ড দলকে নতুনভাবে সাজানোর পরিকল্পনার কথা এন্ডারসনকে জানান কি-ম্যাককালাম ও স্টোকস। এরপরই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সিদ্বান্ত নেন এন্ডারসন। এ জন্য বেছে নেন ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচকে।

ইংল্যান্ড ক্রিকেটের বড় তিন কর্মকর্তার দেয়া অবসরের ইঙ্গিতে অবাক হননি এন্ডারসন। এমন কিছু হতে যাচ্ছে, সেটি আগের থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন তিনি, ‘আমি বলব না অবাক হওয়ার মতো কোন ঘটনা ছিল এটি। বড় তিন কর্তা যখন আমাকে ম্যানচেস্টারের এক হোটেলে কথা বলতে ডাকে, তখন আমি মনে করিনি কোনো সাধারণ বিষয় হতে যাচ্ছে। এমন কিছু হবে, তেমন ধারণা করেছিলাম। আমার মনে হয়, আমাকে শান্ত দেখে তারা নিজেরাই বেশ অবাক হয়েছিল। আমি কিভাবে এতটা শান্ত ছিলাম, আমি নিজেও নিজেকে নিয়ে অবাক হয়েছিলাম। আমি আবেগাপ্লুত হইনি বা রেগে যাইনি বা অন্য কিছুই করিনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘তাদের দৃষ্টিভঙ্গি জানার পর আমাকে নিয়ে তাদের পরিকল্পনার প্রশংসা করি। আমি তাদের বিষয়টি মেনে নিয়েছি ও এজন্য আমার কোনো কষ্টও নেই।’

২০০২ সালের ডিসেম্বরে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় এন্ডারসনের। পরের বছর মে মাসে লর্ডসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় এই ডান-হাতি পেসারের। এরপর টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮৭ ম্যাচ খেলে ফেলেন তিনি। ২০০ টেস্ট খেলে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার বিশ্ব রেকর্ডের মালিক ভারতের শচীন টেন্ডুলকার।

২২ বছরের বর্ণাঢ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ারে বিশ্বসেরা দুই স্পিনার অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্ন এবং শ্রীলঙ্কার মুত্তিয়া মুরালিধরনের পর তৃতীয় বোলার ও প্রথম পেসার হিসেবে গত মার্চে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে ৭০০ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন এন্ডারসন। ২৬ দশমিক ৫২ গড় ও ২ দশমিক ৭৯ ইকোনমি রেটে ৭০০ উইকেট নিয়ে বহু রেকর্ডের মালিক তিনি।

২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাকগ্রার ৫৬৩ উইকেট টপকে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি পেসার হন এন্ডারসন।

ইংল্যান্ডের হয়ে ১৯৪ ওয়ানডেতে ২৬৯ উইকেট এবং ১৯টি টি-টোয়েন্টিতে ১৮ উইকেটও শিকার করেছেন এন্ডারসন। ২০১৫ সালে সর্বশেষ সাদা বলের ক্রিকেটে খেলেছেন তিনি।

এমন দুর্দান্ত পরিসংখ্যান নিয়ে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচেও দলের জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছেন না এন্ডারসন। তিনি বলেন, ‘আমি পুরো ক্যারিয়ারে যেভাবে বোলিং করেছি, এখনো সেভাবেই বোলিং করছি। আমি জানতাম আজ বা দুই বছর পর হলেও একদিন থামতেই হবে। এই সপ্তাহে কিছুটা অবদান রাখতে পারলেই খুশি হবো। ১ উইকেট নিতে পারি বা যাই পারি, আমি অল্প অবদান রাখতে চাই এবং ম্যাচটি জিততে চাই।’

২২ বছর আগে অভিষেক হওয়া লর্ডসে ইতি টানার টেস্টে আবেগ সামলানোর কথা জানান এন্ডারসন। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত এই সপ্তাহে আমি আবেগম তাড়িত হবোই। কিন্তু এই মুহূর্তে কান্না থামানো দিকেই সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিচ্ছি।’

দীর্ঘ টেস্ট ক্যারিয়ারে এন্ডারসনকে সবচেয়ে বেশি কী আনন্দিত করেছে, এমন কথা জানতে চাওয়া হলে এন্ডারসন বলেন, ‘মাত্র ৪২ বছর বয়সে ১৮৮ টেস্ট খেলা আমাকে সবচেয়ে গর্বিত করে এবং আমি এখনো আমার সম্ভাব্য সেরাটা দেয়ার জন্য নিজেকে চাপ দিচ্ছি।’

জাতীয় দল থেকে অবসর নেয়ার পর ইংল্যান্ডের পেস বোলিং মেন্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এন্ডারসন।
প্রতিপক্ষ হলেও এন্ডারসনের প্রশংসা করতে ভুল করেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, এখনো এন্ডারসনের অনেক কিছু দেয়ার আছে এবং প্রমাণ করার মতো অনেক বিষয় আছে। আমি সবসময় দুর্দান্ত খেলোয়াড়দের বিপক্ষে খেলতে পছন্দ করি এবং নিঃসন্দেহে এই খেলার সেরা খেলোয়াড়দের একজন সে। তার সাথে শেষবারের মতো খেলার অপেক্ষায় আছি।’

এন্ডারসনের বিদায় টেস্টে জয় পেতে চায় ওয়েস্ট ইন্ডিজও। কিন্তু ইংল্যান্ডের মাটিতে অতীত পারফরমেন্স বড় চিন্তার কারণ ক্যারিবীয়দের। ১৯৮৮ সালে সর্বশেষ ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর নয় সিরিজের মধ্যে সাতটিতে পরাজিত হয়েছে, দু’টিতে ড্র করেছে ক্যারিবীয়রা। তারপরও এই সিরিজে ভালো খেলার ব্যাপারে আশাবাদী হোল্ডার। তিনি বলেন, ‘দল হিসেবে আমরা আত্মবিশ্বাসী। এন্ডারসনের শেষ ম্যাচে জিততে চাই আমরা। এমনকি সিরিজও জিততে মরিয়া পুরো দল। দীর্ঘ দিন ধরেই আমরা ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ জিততে পারিনি। এবার জয়ের লক্ষ্য নিয়েই আমরা মাঠে নামতে চাই।’

এন্ডারসনের বিদায়ী টেস্টের একাদশ ঘোষণা করেছে ইংল্যান্ড। টেস্ট অভিষেক হবে উইকেটরক্ষক ব্যাটার জেমি স্মিথ ও পেসার গাস অ্যাটকিনসনের। এন্ডারসন ও ক্রিস ওকসের সাথে পেস বিভাগ সামলাবেন অ্যাটকিনসন। একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে আছেন শোয়েব বশির।

ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট সিরিজটি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। এখন পর্যন্ত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ ম্যাচ খেলে ৩ জয়, ৬ হার ও ১ ম্যাচ ড্রতে ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে নয় দলের টেবিলের তলানিতে আছে ইংল্যান্ড। অপরদিকে, ৪ ম্যাচ খেলে ১ জয়, ২ হার ও ১ ম্যাচ ড্রতে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ষষ্ঠস্থানে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

ইংল্যান্ড দল
বেন স্টোকস (অধিনায়ক), জ্যাক ক্রলি, বেন ডাকেট, ওলি পোপ, জো রুট, হ্যারি ব্রুক, জেমি স্মিথ, ক্রিস ওকস, গাস অ্যাটকিনসন, শোয়েব বাশির, জেমস এন্ডারসন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল
ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট (অধিনায়ক), জশুয়া ডি সিলভা, টেভিন ইমলাচ, মিকাইল লুইস, জাচারি ম্যাককাস্কি, কির্ক ম্যাকেঞ্জি, আলিক আথানাজে, কাভেম হজ, জেসন হোল্ডার, আলজারি জোসেফ, শামার জোসেফ, জার্মেই লুইস, গুদাকেশ মোতি, জেইডেন সিলেস ও কেভিন সিনক্লেয়ার।
সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement