১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ভারতের ভালো পারফরম্যান্সে যেভাবে শেষ চারে যেতে পারে বাংলাদেশ

লড়াইয়ে টিকে থাকার খানিকটা সম্ভাবনা উঁকি দিয়েছে বাংলাদেশের সামনে - ফাইল ছবি

প্রায় দেড় যুগ পর সুপার এইটে উঠে অনেকটাই যেন আত্মতুষ্টিতে ভুগছে বাংলাদেশ। ক্রিকেটারদের মাঝেও যেন গা-ছাড়া ভাব। প্রধান কোচ হাথুরুসিংহে তো বলেই দিয়েছেন, ‘এখন সবটাই বোনাস।’ যার ফলাফল মিলছে হাতেনাতেই, সেমিফাইনাল স্বপ্ন অনেকটাই উবে গেছে টাইগারদের।

অনেকটা উবে গেছে বললে ভুল হবে, একদমই ছিল না বলা যায়। হয়তো বাংলাদেশ দল ফিরতি টিকেটও কেটে ফেলেছিল দেশে ফেরার আশায়। তবে আফগানিস্তান হঠাৎ করেই একটা সুযোগ করে দিয়েছে, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে খুলে দিয়েছে সম্ভাবনা দুয়ার।

খানিকটা সম্ভাবনা উঁকি দিলেও আছে সমীকরণের কঠিন মারপ্যাঁচ। তবে সবচেয়ে সহজ পথ হয়তো এটাই যে, আজ সন্ধ্যায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বড় জয় চাই ভারতের। তবে অস্ট্রেলিয়া জিতে গেলে সব সমীকরণ শেষ বাংলাদেশের। বিমানের টিকিট কাটতে ভাবতে হবে না আর।

অবশ্য ভারত অস্ট্রেলিয়াকে বড় ব্যবধানে হারালেও নিশ্চিন্ত হওয়ার সুযোগ নেই, তখন নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করতে হবে টাইগারদের। সেক্ষেত্রে আগামীকাল (মঙ্গলবার) ভোরে আফগানিস্তানকে হারাতে হবে বড় ব্যবধানে। শেষ চার নিশ্চিত করতে নেট রানরেট বড় ভূমিকা রাখবে এখানে।

সব দেখেশুনে মনে হতেই পারে, ‘বন্ধু’ রাষ্ট্র ভারত বন্ধুত্বের পরিচয় দেয়ার সঠিক সুযোগটাই পেল এবার। কেননা গাণিতিক সূত্র বলছে, আসল কাজটা করতে হবে ভারতেরই। অস্ট্রেলিয়াকে তাদের হারাতে হবে অন্তত ৫৫ রানে। এরপর বাংলাদেশ আফগানদের বিপক্ষে ৩১ রানে জিতলেই কেবল শেষ চারের স্বপ্ন দেখা যাবে।

কাগজে-কলমে বাংলাদেশের সম্ভাবনা যদিও ০.১%, তবুও অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে সবই সম্ভব। ক্রিকেটের শত বছরের ইতিহাসে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত কতকিছুই তো ঘটেছে, বাংলাদেশও হয়তো থাকবে তারই অপেক্ষায়। যদি আরো একবার ঘটে যায়!

আফগানিস্তানের বিপক্ষে অতীত পারফরম্যান্সই বাংলাদেশের অনুপ্রেরণা উৎস। যদিও দুই দলের লড়াইটা হয় সমানে-সমানে। তবে জয়ের পাল্লা খানিকটা হলেও ভারি বাংলাদেশের। তাছাড়া বিশ্বকাপে এখনো আফগানদের বিপক্ষে শতভাগ জয়ের রেকর্ড ধরে রেখেছে টাইগাররা।

কিন্তু সেটা কি মোটেও সহজ হবে! প্রতিনিয়ত ক্রিকেটে উন্নতি করা আফগানিস্তান যে বসে আছে রক্তের স্বাদ পাওয়া বাঘ হয়ে। বাংলাদেশের অনুপ্রেরণা যদি হয় অতীত পরিসংখ্যান, আফগানদের তখন ভরসা নিজেদের শক্তিমত্তা। যে শক্তিতে ওরা করেছে অজি বধ, হারিয়ে দিয়েছে পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াকে।

বিষয়টা কি শুধুই অঘটন! কিন্তু গ্রুপ পর্বে যে আফগানরা অনেকটাই উড়িয়ে দিয়েছিল তাসমান সাগর পাড়ের আরেক দেশ নিউজিল্যান্ডকে। মাত্র ৭৫ রানে গুটিয়ে দিয়েছিল কিউইদের। শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে অন্যদলগুলোকেও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে আটকে দিচ্ছেন রশিদ-নাবিরা।

বাংলাদেশ যখন সুপার এইটে এসেই নিশ্চিত। নেপাল-নেদারল্যান্ডসকে হারিয়েই তুলছে তৃপ্তির ঢেঁকুর; আফগানরা তখন বড় ক্ষুধার্ত। বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতুক বা হারুক, ওরা বুঝিয়েছে তাদের লক্ষ্যটা অনেক বড়। তারা আকাশ ছুঁতে চায়, লড়াই করতে চায়; প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রাখতে চায়।

পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করলেও তা স্পষ্ট। দলীয় সাফল্য ছাড়া ব্যক্তিগত সাফল্যেও বেশ এগিয়ে আফগানরা। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রান তাদের রাহমানুল্লাহ গুরবাজের। ৬ ম্যাচে ২৩৮ রান তার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ ছক্কাও এসেছে তার ব্যাটে।

সমান সংখ্যক ম্যাচে ২১১ রান নিয়ে চারে আছেন ইবরাহিম জাদরান। তিনি আবার মেরেছেন এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি চার, ২৪টি। যেখানে রানের দৌড়ে সেরা ২০-এ বাংলাদেশের কেবল আছেন তাওহীদ হৃদয়, ৬ ম্যাচে ১৩৯ রান তার! ১১১ রান নিয়ে ২৫তম সাকিব।

উইকেট শিকারেও সেরা অবস্থানে আফগানিস্তান। এখানে রাজ করছেন পেসার ফজলে হক ফারুকী। ৬ ম্যাচে ১৫ উইকেট নিয়ে শীর্ষে তিনি। তাছাড়া পঞ্চম সর্বোচ্চ ১০ উইকেট আছে রশিদ খানের। নাভিন উল হকের উইকেট সংখ্যা ৯। গুলবাদিন নাইব ২ ম্যাচে নিয়েছেন ৬ উইকেট।

বল হাতে অবশ্য ভালো করেছে বাংলাদেশও। বলা যায় বোলাররাই সুপার এইটে তুলেছে দলকে। তানজিম সাকিব ও রিশাদ হোসেন দু’জনেই সমান ৬ ম্যাচে নিয়েছেন সমান ১১টি করে উইকেট। সুপার এইটে নিস্প্রভ মোস্তাফিজ গ্রুপ পর্বে অবশ্য ভালো করেন, নেন ৭ উইকেট।

পরিসংখ্যান কিংনা অতীত ইতিহাস কখনো ম্যাচ জেতায় না যদিও, তবুও অনুপ্রেরণা দিতে রাখে বড় ভূমিকা। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনুপ্রেরণা আফগানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে ৬ ম্যাচে ৫ জয়।

এবার নিশ্চয়ই সংখ্যাটা বাড়াতে চাইবে টাইগাররা। সেমিফাইনালের জন্য না হোক, অন্তত নিজেদের মান ধরে রাখতে। সেই সাথে সান্ত্বনার এক জন্য নিয়ে দেশে ফিরতে।


আরো সংবাদ



premium cement