এত সাহস কোথায় পেল আফগানরা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৩ জুন ২০২৪, ১৯:১৭, আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪, ১৯:২৪
আগের ম্যাচেই জয়ের বিশ্বরেকর্ড গড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পেয়েছিল টানা ৮ জয়ের দেখা। বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্টে টানা এতো ম্যাচ জেতেনি আগে কোনো দল। সেই অপরাজেয় অজিদেরই কিনা হেসেখেলে উড়িয়ে দিল আফগানিস্তান।
প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, এতো সাহস কোথায় পেল তারা? অবশ্য উত্তর পেতে খুব একটা সমস্যা হবার কথা না। আফগানরা তো লড়াকু জাতি, সাহস নিয়েই তাদের বাঁচতে শেখা। আজ নিশ্চয়ই আফগানীদের তেমনই অনুভব হচ্ছে, যেমনটা হয় তাদের যুদ্ধ জয়ে।
আফগানিস্তানে বোধহয় আজ বিরাজ করছে বিশ্বকাপ জেতার আনন্দ। হবারই কথা, কতো অযুহাতে, নানা বায়নাতে এই আফগানদের তো কম নাচায়নি অজিরা। বড় দলগুলোর নাগাল পাওয়া যখন এমনিতেই দুস্কর, তখন রশিদ খানদের বিপক্ষে একের পর এক সিরিজ স্থগিত করেছে তারা।
ভারত-পাকিস্তানের মতো রাজনৈতিক কোন কারণ নয়, সীমান্তেও নেই সংঘাত; তবুও অস্ট্রেলিয়া দ্বিপক্ষীয় কোনো সিরিজে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হয় না নারীদের ক্রিকেট খেলতে না দেয়ার অযুহাতে। ফলে বৈশ্বিক আসরগুলোই সম্বল নিজেদের জাত চেনাতে।
সফলতার চেয়ে বড় প্রতিশোধ আর কি হতে পারে। আফগানরাও হেঁটেছে সেই পথে। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে জবাবটা যেন দিলো চোখে চোখ রেখে। যেন বলতে চাইলো, অযুহাত নয়, তোমরা মুখোমুখি হওনা ভয়ে! আমরা তো বুলেট-বোমার সামনেও মাথা নত করিনি।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একটা জয় যে তাদের খুব করে চাওয়া, তা বিগত ম্যাচগুলোর দিকে তাকালেই স্পষ্ট। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আর ২০২৩ ভারত বিশ্বকাপে আসি আসি করেও ধরা দেয়নি জয়। খুব কাছে এসেও হাত ফসকেছে, জয়ের সুবাস মেখে হতাশ করেছে।
ঘরের মাঠে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়াকে রীতিমতো কাঁপিয়ে দিয়েছিল আফগানিস্তান। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছিল টি-টোয়েন্টিতে দুই দলের প্রথম দেখা। তাতেই অজিদের চোখ রাঙায় আফগানরা। যদিও শেষ ২ ওভারে ৩৩ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেনি, তবে ২৮ রান তুলে কাঁপিয়ে দিয়েছিল অজিদের।
তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় ভারত বিশ্বকাপ। ওয়াংখেড়েতে যা ঘটেছিল, তা চোখ যেন বিশ্বাস করতে চায় না। ক্রিকেটে কীর্তির অভাব নেই, তবে ম্যাক্সওয়েল সেদিন যা করেছিলেন; তা যেন রূপকথা। অজিদের কাছে তা আনন্দের হলেও বুক ফেঁটেছিল আফগানদের। হাতছোঁয়া দুরত্বে থাকা জয়টা আরো একবার যে ফাঁকি দিয়ে যায়।
ম্যাক্সওয়েলের কাছে সেদিন স্বপ্নভঙ্গ হয় আফগানিস্তানের। ২৯১ রানের পুঁজি পাবার পর বল হাতেও দাপুটে শুরু করে আফগানরা। ৯১ রানেই তুলে নেয় অজিদের ৭ উইকেট। কিন্তু এরপর ১২৮ বলে ২০১* রানের ইনিংস খেলে ম্যাক্সওয়েল দলকে জিতিয়ে আনেন ৩ উইকেটে।
তবে এবার আর ভুল হলো না। তৃতীয়বারের চেষ্টায় অজিবধ গল্প লিখলো আফগানিস্তান। এবার অবশ্য পুঁজি ছিলো সামান্য, ১৪৮। তবে জয়ের জন্যে তাই যথেষ্ট হলো। এবারও অবশ্য জ্বলে উঠেছিলেন ম্যাক্সওয়েল, তুলে নেন আসরে নিজের প্রথম ফিফটি (৫৯), তবে আজ আর দলকে বাঁচাতে পারেননি।
ম্যাক্সওয়েল একপ্রান্ত আগলে রাখলেও অপরপ্রান্ত থেকে একের পর একজনকে তুলে নেন নাইব-নাভিন মিলে। ফলশ্রুতিতে মিচেল মার্শের ১২ ও স্টয়নিসের ১১ বাদে আর কেউ পারেনি দুই অংকের ঘরে পৌঁছাতে। অতিরিক্ত থেকে আসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬ রান। ১৯.২ ওভারেই অজিরা গুটিয়ে যায়। আফগানরা পায় ২১ রানের জয়।
এই জয়ে সেমিফাইনাল স্বপ্নও বেঁচে রইলো আফগানিস্তানের। ২৫ জুন বাংলাদেশকে হারাতে পারলে খুলে যাবে স্বপ্নের দুয়ার। বিপরীতে এই হারে কঠিন হলো অজিদের শিরোপার দৌড়। শেষ ম্যাচে তাদের ভারতকে হারাতে হবে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত অবকাঠামোহীন এই দেশটির ক্রিকেটাররা দেশপ্রেমের শক্তিতে যে ইতিহাস সৃষ্টি করলো আজ, তা মনের গহীনে ঝড় না তুলে পারেই না। যেন বলতে চাইছে নিজেদের বীরত্বগাঁথা, বলতে চাইলে আর নেই কোনো বাধা, এখন শুধু এগিয়ে যাবার পালা। যেমন করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তালেবান সরকারের অধীনে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা