কেন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে এমন উন্মাদনা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৯ জুন ২০২৪, ১৩:৪৫
সহজ কথায় বলতে গেলে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ফুটবলের ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা, স্প্যানিশ লিগের বার্সা-রিয়াল ম্যাচের মতোই, বলা যায় ক্রিকেটের এল-ক্লাসিকো।
তবে গত এক যুগ বা তারও বেশি সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতা এই ম্যাচের গুরুত্ব বাড়িয়েছে বহুগুণে।
একে তো এই দু’দল দ্বি-পক্ষীয় সিরিজে মুখোমুখি হয় না, এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের বৈঠকে দু’দেশের ক্রিকেট কর্মকর্তাদের নানা বিষয়ে মনোমালিন্য লেগেই থাকে। এর সাথে যোগ হয়েছে সমর্থকদের আগুনে ঘি দেয়া নানা কার্যক্রম।
যেমন ভারতে আয়োজিত ২০২৩ বিশ্বকাপে পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা ভিসার জন্য অপেক্ষা করেছে সবচেয়ে বেশি সময়। পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের চিঠিতেই হয় না, ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা ক্লিয়ারেন্স লাগে।
ক্রিকেট সম্পর্কিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেজগুলোর কমেন্ট সেকশনে নানা বিষয়ে ঝগড়া লেগেই থাকে।
বিশ্বকাপের মঞ্চে আদতে দু’দলের পারফরম্যান্সে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে যেমন ভারত জিতেছে ছয় ম্যাচে, পাকিস্তান একটি।
এর মধ্যেও বেশ কিছু ম্যাচ ইতিহাসের পাতায় এবং সমর্থকদের স্মৃতিতে বহুদিন টিকে থাকবে।
যেমন ২০০৭ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে টাই হওয়ার পরে বল-আউট (অনেকটা পেনাল্টির মতো), ২০০৭ বিশ্বকাপের ফাইনালে মিসবাহ উল হকের বিখ্যাত স্কুপ, ২০২১ বিশ্বকাপে ভারতের ১০ উইকেটে হাড়, ২০২২ বিশ্বকাপে কোহলির অবিস্মরণীয় ইনিংসে ৮ বলে ২৮ রান তাড়া।
নিউইয়র্কে ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এই ম্যাচটি রোববার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হবে।
ক্রীড়া দুনিয়ার সবচেয়ে বড় লড়াইগুলোর একটি এই প্রথম আয়োজিত হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে, তাও আবার নিউইয়র্কে, যে শহর ঘুমায় না বলে কথিত আছে।
নিউইয়র্কে হুট করে বানিয়ে ফেলা এক স্টেডিয়ামের গ্যালারি রোববার উপমহাদেশের সময় সন্ধ্যা রাতে ভরে উঠবে ভারত ও পাকিস্তানের সমর্থকে, তাদের অনেকে উপমহাদেশ থেকেই খেলা দেখতে চলে গেছে।
আবার অনেকে সেখানেই থাকে, ঘর থেকে দূরে, তাদের ঘর এখন যুক্তরাষ্ট্রেই।
তবে ক্রিকেটের দুই পরাশক্তি যে উত্তর আমেরিকায় এই প্রথম ক্রিকেট খেলছে তা নয়, নব্বইয়ের দশকে টরন্টোতে এই দু’দল ওয়ানডে সিরিজ খেলেছিল।
১৯৯৬, ১৯৯৭, ১৯৯৮- তিন বছর এই ওয়ানডে সিরিজ আয়োজিত হয়েছিল কানাডার এই অভিজাত শহরে।
আমেরিকার মানুষের মধ্যে এটা কতটা আলোড়ন ফেলছে সেই প্রশ্ন যদিও থেকেই যায়, তবুও বোঝার সুবিধার্থে একটা তুলনা করা যেতে পারে।
আমেরিকার ন্যাশনাল ফুটবল (নামে ফুটবল, আদতে রাগবির মতো আমেরিকান একটা স্পোর্ট) লিগের (এনএফএল) সুপার বোলের সবচেয়ে উত্তেজনাকর ম্যাচের দর্শক ছিল ১২৫ মিলিয়ন, সাড়ে ১২ কোটি মানুষ পৃথিবীব্যাপী দেখেছিল এই খেলা।
আর ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচের প্রত্যাশিত দর্শক সংখ্যা ৪০০ মিলিয়ন, ৪০ কোটির মতো মানুষ। টেলিভিশন, মোবাইলফোন, ট্যাব, কম্পিউটার কিংবা মাঠেই বা বড় কোনো স্ক্রিনে বুদ হয়ে থাকবে এই ম্যাচ দেখতে।
মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান
ভারত ও পাকিস্তান একে ওপরের বিপক্ষে মোট ১২টি টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে, যেখানে ভারত আটটিতে এবং পাকিস্তান তিনটিতে জয় পেয়েছে।
তার মধ্যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যে সাতবার মুখোমুখি হয়েছে দু’দল, তার মধ্যে ছয়টিতে জিতেছে ভারত, একটিতে পাকিস্তান।
এটা হতে যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আট নম্বর ম্যাচ।
দু’দলে ১২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচের ১১টিতেই খেলেছেন ভারতের বর্তমান অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
এই দুই দলের দেখায় সবচেয়ে বেশি রান করেছেন ভিরাট কোহলি, ৪৮৮ রান।
সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানও কোহলির অপরাজিত ৮২। ২০২২ বিশ্বকাপের এই ইনিংসটি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেরই সেরা ইনিংসগুলোর একটি বলে মনে করা হয়।
সবচেয়ে বেশি ১১ উইকেট নিয়েছেন তিনজন, ভারতের ভুবনেশ্বর কুমার ও হার্দিক পান্ডিয়া এবং পাকিস্তানের উমর গুল।
একটাই ভয়- উইকেটেই না খেলা মুষড়ে পড়ে
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ এমনিতেই জমে ওঠে, তার ওপর এবারে মোহাম্মদ আমির ফিরেছেন। আমির বনাম ভিরাট লড়াই দেখার জন্য সমর্থকরা অপেক্ষা করছে।
দু’জনই ম্যাচ জেতাতে সক্ষম, সাথে আছেন শাহিন শাহ আফ্রিদি, রোহিত শর্মা, রিজওয়ান, সূর্যকুমার যাদব।
ভারত-পাকিস্তানের পুরো স্কোয়াডই তারকায় ঠাসা।
কিন্তু উইকেট নিয়ে এখন পর্যন্ত একটা অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার এডেলেইড থেকে আনা মাটি দিয়ে তৈরি নিউইয়র্কের এই উইকেট কারো মন ভরাতে পারছে না। না ক্রিকেটারদের, না দর্শকদের, না বিশ্লেষকদের।
ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন বলেন, এই রকম উইকেটে খেলাটা হতাশাজনক।
এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের ছয় ইনিংস হয়েছে নাসাউ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। যেখানে মাত্র দু’বার ১০০ পার করেছে ইনিংসের রান।
শ্রীলঙ্কা অলআউট হয়েছিল ৭৭ রানে, সেই রান তাড়া করতে দক্ষিণ আফ্রিকার চার উইকেট চলে যায়।
মাত্র পাঁচ মাসে তৈরি করা এই ক্রিকেট স্টেডিয়াম দেখতে সুন্দর, সুযোগ-সুবিধা আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু আইসিসি বিপাকে পড়েছে উইকেটের মান নিয়ে।
আইসিসি একটি বিবৃতিতে বলছে, ‘উইকেটের মানে উন্নতি আনার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ।’
যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে পাকিস্তানের হারে ভারত এগিয়ে থাকবে?
যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সুপারওভারে হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করা পাকিস্তান এখনই বাদ পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা অনুভব করছে। বোলিং-ব্যাটিং দুই বিভাগেই যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেটাররা পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। যাদের কেউ কেউ পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত, কেউ কেউ ভারতীয়, কিন্তু এখন তারা ক্রিকেট খেলছেন যুক্তরাষ্ট্রের জার্সি গায়ে।
যুক্তরাষ্ট্রে দুই ম্যাচ জিতে একটা আরামদায়ক পরিস্থিতিতে আছে, ওদিকে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছে উত্তর আমেরিকার আরেক দল কানাডা।
সব মিলিয়ে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তান হেরে গেলে আরো কোণঠাসা হয়ে পড়বে।
আর ভারত আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সহজ জয় তুলে নিয়েছে।
পাকিস্তান এখন পর্যন্ত দলের জন্য সেরা সমন্বয় কী হবে সেটা বুঝে উঠতে পারেনি। আজম খান, ইফতিখার আহমেদরা পারফর্ম করতে পারছেন না। শাহিন শাহ শুরুটা ভালো করলেও পুরনো বলে খানিকটা ফিকে দেখাচ্ছে।
তবে পাকিস্তানের জন্য এসব পরিস্থিতি একেবারেই চেনা, যেমন ২০২২ সালেও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল পাকিস্তান, এরপর শেষ পর্যন্ত ফাইনালে খেলেছে দলটি।
এবারে দুশ্চিন্তা একটাই, প্রতিপক্ষ ভারত।
ভারতের মূল অস্ত্র ভিরাট কোহলি, তিনি প্রথম ম্যাচে বাউন্স বুঝে উঠতে পারেননি, অচেনা এই মাঠে ভিরাটকে চেনা যায়নি।
তবে ঋষভ পান্ত আছেন, তিনি এবারে তিন নম্বরে ব্যাট করবেন, কোহলি ইনিংস ওপেন করছেন রোহিতের সাথে।
হার্দিক-সূর্যকুমাররা আছেন মিডল অর্ডারে।
বোলিংয়ে ভারত অনেকটাই নির্ভর করবে জসপ্রিত বুমরাহর ওপর। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের অন্যতম সেরা এই বোলার মুখিয়ে থাকবেন পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামতে।
নিউইয়র্কের গ্যালারিতে বসতে পারবে ৩৪ হাজার মানুষ। এর টিকিটের দাম দেড় হাজার ডলার থেকে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত। ওখানে উপস্থিত অনেকে বলছেন কালোবাজারে এই টিকিটের দাম অবিশ্বাস্য, ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা দিয়েও কিনছে কেউ কেউ।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা