২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চৈত্রের বৃষ্টি : বোরো ধানের জন্য ভালো হলেও শঙ্কায় আম-লিচু

চৈত্রের বৃষ্টি : বোরো ধানের জন্য ভালো হলেও শঙ্কায় আম-লিচু - সংগৃহীত

বাংলাদেশে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়েছে বৃষ্টি। শেষ সপ্তাহের শুরুতে ব্যাপক শিলাবৃষ্টিও হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্টরা ফসলের ওপর এর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগে আছেন।

তবে চৈত্রের এ বৃষ্টিতে ফসলের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। বরং এখনকার প্রধান ফসল বোরো ধানের জন্য এ বৃষ্টি আশীর্বাদ বলে মনে করছেন তারা।

যদিও আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে আবারো বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফদতর।

তবে বিভিন্ন জেলার কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা জানাচ্ছেন, বৃষ্টি বেশি হলে রাজশাহী ও দিনাজপুরে আম ও লিচুর ওপর প্রভাব পড়বে। আমের মুকুল ঝরে পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে যা বলা হয়েছে
আবহাওয়া অধিদফতর এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

একই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেলেও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

মদঙ্গলবার থেকে আবার বৃষ্টি বাড়তে পারে বলে অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’ এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া-সহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদফতর পূর্বাভাস দিয়েছে।

একই সাথে এসব বিভাগে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

তবে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

তবে বুধবার ২৭ মার্চ অবস্থা পরিবর্তনের কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

শুধুমাত্র রংপুর বিভাগের দু’এক জায়গায় ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে অধিদফতর।

এছাড়া দেশের অন্য জায়গায় আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

ফসলের ওপর প্রভাব
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে, শিলাবৃষ্টি শুধু রাজধানী ঢাকা বিভাগে হওয়াতে ফসলের ওপর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। এখন যেসব ফসল মাঠে রয়েছে তাতে ক্ষতির তেমন কোনো তথ্য নেই।

অধিদফতর বলছে, এখন প্রধান ফসল বোরো ধান। শিলাবৃষ্টি শুধু ঢাকা বিভাগে হওয়াতে ফসলের ওপর এর প্রভাব পড়েনি।

দেশে এ বছর বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ দশমিক ৪০৪ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২২২ দশমিক ৫৬৪ লাখ টন।

অধিদফতর জানাচ্ছে, এবার বোরো ধান আবাদের অগ্রগতি অন্যান্য বারের চেয়ে বেশি। যা ৫০ দশমিক ৫১৫ লাখ হেক্টর।

বোরো ধান রোপণ করা শুরু হয় নভেম্বর মাস থেকে। মার্চের ১০ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত রোপণ করা হয়।

আর এপ্রিলের ১৫ তারিখের পর থেকে হাওরে বোরো ধান কাটা শুরু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

সুনামগঞ্জ জেলার কয়েকজন কৃষক জানিয়েছেন, ধানের জন্য এই বৃষ্টি ভালো হয়েছে। ফলে এখন আর সেচ দিতে হবে না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বিভিন্ন জেলা থেকে ২৪ ঘণ্টায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রতিবেদন তৈরি করে।

অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যে বৃষ্টি হয়েছে তাতে ফসলের ক্ষতির কোনো রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। বরং এটা আমাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ হয়েছে। বৃষ্টি বোরো ধানের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।’

এই মুহূর্তে মাঠে পেঁয়াজ, গম, আলু, রসুন, ভুট্টা, সূর্যমুখী, গ্রীষ্মকালীন ফসল রয়েছে বলে জানান তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘৯০ শতাংশ আলু ইতোমধ্যেই মাঠ থেকে তুলে ফেলা হয়েছে, শিলাবৃষ্টিতে আমের মুকুলের ক্ষতির তথ্য পাইনি।’

দেশে নভেম্বর মাসের শুরু থেকে আলু রোপণ শুরু হয়। এপ্রিল পর্যন্ত থাকবে।

বিভিন্ন জেলার কৃষি কর্মকর্তারা জানান, এরই মধ্যে বেশ কিছু এলাকায় আলু তোলা হয়ে গেছে। এই বৃষ্টিতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি, বাকি যা আছে তাতে বৃষ্টি বেশি না হলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

দেশে রবি, খরিফ-১, খরিফ-২ তিন কৃষি মৌসুমেই পেঁয়াজ চাষ করা হয়। কোনো কোনো জেলায় এক বা দুই মৌসুমেও পেঁয়াজের চাষ করা হয়।

বাংলাদেশে প্রায় দুই দশমিক ১৬ লাখ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় শতভাগ শীতকালেই উৎপাদিত হয়। উৎপাদন ও আমদানি বিবেচনায় এদেশের বার্ষিক পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ৩৫ লাখ টন।

গত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবেই পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, বেশিভাগ জায়গাতেই পেঁয়াজ জমি থেকে তুলে ফেলা হয়েছে। তবে দেখা যায় দাম বিবেচনা করে কেউ আগে পেঁয়াজ তোলে, আবার কেউ পরে।

পাবনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: শাহ আলম বলেন, ‘যে বৃষ্টিপাত হয়েছে তাতে জমিতে এক থেকে দুই সেন্টিমিটার পানি এমনিতেই প্রয়োজন। এটা বোরোর জন্য ভালো হয়েছে।’

দেশে পাবনার সাথিয়া, সুজানগর ও পাবনা সদরে পেঁয়াজের চাষ বেশি হয়।

সুজানগর উপজেলার কয়েকজন পেঁয়াজ চাষী জানান, ‘মাঠের সব পেঁয়াজ এখনো উঠেনি। বৃষ্টিতে যে পানি জমেছে তা না নামলে বাকি পেঁয়াজ নষ্ট হবে।’

আর পাবনার চাটমোহরে রসুনের চাষ সবচেয়ে বেশি হয়। সেখানে বিনা-চাষের রসুন বেশি হয়। অর্থাৎ এ রসুন রোপণ করতে জমি চাষের প্রয়োজন হয় না।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, পাবনার চাটমোহরের এই রসুন থেকে বাংলাদেশের রসুনের চাহিদার বেশিভাগটাই পূরণ হয়।

কৃষি কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, ‘রসুন, পেঁয়াজ বা মরিচের জমিতে এখনো জলাবদ্ধতার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।’

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, শিলাবৃষ্টি বেশি হলে রাজশাহী ও দিনাজপুরে আম ও লিচুর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

বগুড়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো: মতলুবর বলেন, ‘এ এলাকায় শিলাবৃষ্টি হয়নি। বেশিভাগ জমি থেকেই আলু উঠানো হয়েছে। মরিচের জমিতে পানি জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া যায়নি। ফলে তেমন কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই।’

তিনি বলেন, ‘বোরোর জন্য এ বৃষ্টি শাপে বর হয়েছে। সেচ লাগবে না এখন।’
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে হিট স্ট্রোকে পর্যটকের মৃত্যু জামালপুরে বউ-শাশুড়ি দ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষ : নিহত ১, আহত ২ ঈশ্বরদীর তাপমাত্রা ৪১.৫ ডিগ্রি, বেঁকে যাচ্ছে রেলপথ আটক জাহাজের ক্রুদের ছেড়ে দেবে ইরান ফতুল্লা ৮৩০ গার্মেন্টেস শ্রমিক বিরুদ্ধে মামলা শ্রীনগরে ২ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ টানা চতুর্থবার কমলো স্বর্ণের দাম দেশের রাজনীতি ঠিক নেই বলেই অর্থনীতির ভয়ঙ্কর অবস্থা : সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন বগুড়ায় ২ বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত, আহত ৫ সোনারগাঁওয়ে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় নেপালের পানিবিদ্যুৎ কিনছে ভারত, বাংলাদেশের অগ্রগতি কতটুকু?

সকল