২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে কী করছে বাংলাদেশ?

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে কী করছে বাংলাদেশ? - ছবি : সংগৃহীত

মিসরের শারম-আল-শেখে রোববার থেকে শুরু হয়েছে ২৭তম জলবায়ু সম্মেলন। যার আনুষ্ঠানিক নাম কনফারেন্স অব পার্টিজ-২৭ বা কপ-২৭।

সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে ১৯৮টি দেশের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। সেখানে জাতিসঙ্ঘ যেমন রয়েছে, তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারি কর্মকর্তা ও পরিবেশ কর্মীরাও রয়েছেন। বিশ্বের যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে, বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। অতীতে এসব সম্মেলন থেকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধের যেসব প্রতিশ্রুতি এসেছে, বাংলাদেশ তার কতটা বাস্তবায়ন করতে পেরেছে?

জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাংলাদেশের বিপদ
জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলো ঠিকভাবে মোকাবেলা করার জন্য গত বছর একটি মন্ত্রণালয় গঠন করেছে বাংলাদেশের সরকার। পরিবেশে ও বন মন্ত্রণালয়ের সাথে মিশিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় তৈরি করা হয়েছে।

ওই মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলছেন, বৈশ্বিক ক্ষতির শিকার দেশগুলোকে প্রতিবছর যে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল, এবারের সম্মেলনে সেই বিষয়ে আলোচনায় জোর দেবে বাংলাদেশ।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আতিক রহমান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় থাকা দেশের মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার দিক থেকে বাংলাদেশের হয়তো খুব বেশি কিছু করার নেই। কারণ সমস্যাটা তো বৈশ্বিক। সেটার সমাধানের জন্য উন্নত দেশগুলোর দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে।‘

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যারা কাজ করেন, সেই অ্যাকটিভিস্ট এবং সিভিল সোসাইটির সদস্যরা বলছেন, দশ বছর আগের তুলনায় জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির বিষয়ে এখন সচেতনতা অনেক বেড়েছে। সরকারের নীতি নির্ধারণেও তার প্রভাব পড়ছে। যেমন একসময় কয়লা ভিত্তিক জ্বালানির ওপর গুরুত্বারোপের নীতি নেয়া হলেও এখন বাংলাদেশ তা থেকে সরে এসেছে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে এখনো বাংলাদেশের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।

ড. আতিক রহমান বলেন, ‘আমাদের এখানে এখন দুর্যোগ বেশি হচ্ছে, নদী ভাঙন বাড়ছে, বেশি বেশি ঝড়, বন্যা হচ্ছে। সেই সাথে উত্তরবঙ্গে শুষ্কতা তৈরি হচ্ছে আর দক্ষিণবঙ্গে লবণাক্ততা বাড়ছে। এসব কিছুই হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।‘

অ্যাকটিভিস্টদের তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের ৬৫ লাখ মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে। যেভাবে উষ্ণতা বাড়ছে, তাতে আগামী কয়েক বছরে তিন থেকে চার কোটি মানুষ বাস্তুহারা হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

ড. রহমান আরো বলেন,‘কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে, এর সমাধান পুরোপুরি আমাদের হাতে নেই। কারণ এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যা। আমেরিকা, চীনের মতো দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ না কমালে, পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশের মতো গরীব দেশগুলোর পক্ষে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। কারণ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য যতো কার্বন নিঃসরণ হয়, সেখানে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর দায় খুবই সামান্য,‘

এ কারণেই সঙ্কট মোকাবেলায় তহবিল বরাদ্দ ও সেটার ব্যয়ের ওপর জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ। ২০২৫ সাল পর্যন্ত ক্ষতির শিকার দেশগুলোর জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো সেই অর্থ পুরোপুরি পাওয়া যায়নি। যদিও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য 'লস অ্যান্ড ড্যামেজ' নামে যে নতুন তহবিলের কথা আলোচনা হচ্ছে, তা এবছরের সম্মেলনেও মূল আলোচ্য সূচিতে জায়গা পায়নি।

বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো: শাহাবউদ্দিন বলেন, পরিবেশ উন্নয়নে তারা বৃক্ষরোপণ, উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী তৈরি করছেন। পাশাপাশি ঝুঁকিতে থাকা মানুষজনের জন্য নানা প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সহায়তা কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।

তিনি জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ১৯৯১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ১৯৭টি বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে।

কিন্তু তার পরও, ড. আতিক রহমান বলেন, উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচনের মতো বিষয়গুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার চাইতে অনেক গুরুত্ব পায়। তিনি মনে করেন, এই অগ্রাধিকার নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।

তিনি আরো বলেন‘আমরা তো আর বড় দাগে বৈশ্বিক ক্ষতি কমিয়ে আনার মতো কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবো না। কিন্তু শিক্ষা আর সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে, দারিদ্র দূর করতে পারলে নিজেদের ক্ষতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হবো।‘

জাতিসংঘের যেসব চ্যালেঞ্জ
জাতিসঙ্ঘের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ শতকে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রির বেশি বাড়লে বিশ্বে মারাত্মক খাদ্য ঘাটতি দেখা দেবে। সংস্থাটির এই বছরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনো তাপমাত্রা সেই কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ধরে রাখার মতো অবস্থায় নেই।

বিশেষ করে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি।

জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘রিপোর্টের পর রিপোর্টে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি পরিষ্কার ও অন্ধকার চিত্র পাওয়া যাচ্ছে।‘

শিল্প-বিপ্লব পূর্ব সময়ের চেয়ে তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি যেন না বাড়ে, সেজন্য শীর্ষ কার্বন উদগীরণকারী দেশগুলোর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আশা করা হয়েছিল গতবছরের সম্মেলন থেকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে প্রতিশ্রুতি মিলেছে সেখানে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।

কপ-২৬ সম্মেলনে উপস্থিত থাকা বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, ‘২০২১ সালে উন্নত দেশগুলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা ১.৭ থেকে ২.৭ পর্যন্ত হয়। যেটা অর্জিত হয়েছে প্রত্যেকটা দেশ তাদের টার্গেট রিভাইস করতে রাজি হয়েছে।‘

কিন্তু জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত এক বছরে সেখানে খুব বেশি অগ্রগতি দেখা যায়নি। এবারের সম্মেলনে এটাও গুরুত্ব পেতে যাচ্ছে।

২০২১ সালে গ্লাসগো সম্মেলন থেকে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। তার মধ্যে রয়েছে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনকারী দেশ হলো চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। কপ-২৬ সম্মেলন থেকে তারা বলেছে যে ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্য অর্জনে একসাথে কাজ করবে। কিন্তু গত এক বছরে সেরকম অগ্রগতি দেখা যায়নি।

চীন ও ভারতের আপত্তির মুখে গত বছর কয়লা ভিত্তিক জ্বালানি থেকে পুরোপুরি সরে যেতে পারেনি বিশ্ব। চীন আর ভারতের বক্তব্য হচ্ছে কয়লা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিলে উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। তাদের অর্ধেকের বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় কয়লা থেকে। তবে ধাপে ধাপে কয়লার ব্যবহার মানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

গত সম্মেলনে জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে সমুদ্র বিষয়ে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি এসেছিল। সেখানে বন্যা ঠেকাতে বাধ দেয়া, খরা সহিষ্ণু শস্য উৎপাদন আর সেচের জন্য বৃষ্টির পানি ধরে রাখার মতো বিষয়ে যেসব প্রতিশ্রুতি ছিল।

বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য সহায়তা দিতে প্যারিস চুক্তিতে বলা হয়েছিল ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর এক শ‘ বিলিয়ন ডলার একটি তহবিলের নিশ্চিত করা হবে।

কিন্তু এখনো সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। এবারের সম্মেলনে এই বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কী ঘটবে ভবিষ্যতে?
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, শিল্প বিপ্লব শুরুর আগে বিশ্বের যে তাপমাত্রা ছিল তার থেকে বৃদ্ধির মাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা গেলে বড় ধরণের বিপদ এড়ানো যাবে। তা না পারলে বিপজ্জনক হয়ে পড়বে প্রকৃতি, পরিবেশ এবং মানুষের জীবন।

অনেক বিজ্ঞানীর আশঙ্কা যে ভয়ঙ্কর এই পরিণতি ঠেকানোর আর কোনো উপায় নেই এবং চলতি শতকের শেষে গিয়ে বিশ্বের তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। তা হলে এর প্রভাব বিশ্বের একেক জায়গায় একেক রকম হবে :

ব্রিটেনে বৃষ্টিপাতের মাত্রা প্রচণ্ডভাবে বেড়ে গিয়ে ঘনঘন বন্যা হবে।

সাগরের উচ্চতা বেড়ে প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের ছোট অনেক দ্বীপ বা দ্বীপরাষ্ট্র বিলীন হয়ে যেতে পারে।

আফ্রিকার অনেক দেশে খরার প্রকোপ বাড়তে পারে এবং পরিণতিতে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ায় অতিরিক্ত গরম পড়তে পারে এবং খরার প্রকোপ দেখা দিতে পারে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
৪৬তম বিএসএস প্রিলি পরীক্ষা : শুরুতেই স্বপ্নভঙ্গ ৮১ শিক্ষার্থীর মরুর উষ্ণতায় ক্ষতির মুখে কৃষি ছেলেদের কারণে বিপাকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের

সকল