১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

চলতি মৌসুমে ১০৮ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের টার্গেট

-


বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো: আশরাফুল ইসলাম (এনডিসি, পিএসসি) বলেছেন, গত বছর আমরা রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের দেশের চাহিদা যেখানে ৯৫ মিলিয়ন কেজি ছিল, সেখানে আমরা ১০৩ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন করেছি। আমাদের টার্গেট ছিল ১০২ মিলিয়ন কেজি। এবার আমাদের টার্গেট ১০৮ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন করা। আমাদের উদ্দেশ্য হলো দেশের চায়ের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা।
তিনি বলেন, গত চা মৌসুমে প্রায় ১.৮ মিলিয়ন কেজি চা বিদেশে রফতানি করা হয়েছে। এবার আরো বেশি করে চা বিদেশে যাচ্ছে। চলতি ক্যালেন্ডারে ১ মিলিয়ন কেজির মতো চা রফতানি ইতোমধ্যে করা হয়েছে। আমাদের বিশ^াস ২.২ থেকে ২.৫ মিলিয়ন কেজি চা আমরা রফতানি করতে পারব। পর্যায়ক্রমে আরো বাড়বে। আমরা মূলত ব্ল্যাক টি রফতানি করে থাকি। কিছু অর্থোডক্স টিও বিদেশে যাচ্ছে। টাকার হিসেবে গত বছর আমরা প্রায় ৩০০ কোটি টাকার চা বিদেশে রফতানি করতে সক্ষম হয়েছি।
শ্রীমঙ্গলস্থ বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের টি রিসোর্চ ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে সপ্তাহব্যাপী ‘প্রিন্সিপাল অ্যান্ড প্রসেসেজ অব কোয়ালিটি টি ম্যানুফ্যাকচারিং কোর্স’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। মো: আশরাফুল ইসলাম বলেন, গত চা দিবসে আমাদের প্রতিপাদ্য ছিল ‘চা দিবসের সঙ্কল্প রফতানিমুখী চা শিল্প’। স্বাধীনতা উত্তরকালে আমরা যে পরিমাণে চা উৎপাদন করতাম, তার বেশির ভাগ চাই বিদেশে রফতানি করা হতো। কিন্তু সময়ের সাথে আমাদের দেশে চায়ের চাহিদা বেড়ে যায়। বর্তমানে চাহিদা ও উৎপাদন দুটোই বেড়েছে। এখন আমরা চায়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরা কিছু পরিমাণ চা এখন রফতানি করছি। যদি আমরা বেশি পরিমাণে চা রফতানি করতে চাই তাহলে কোয়ালিটি অব টির (গুণগত মানের চা) উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। সেটা উন্নয়নের জন্য আমাদের সামগ্রিক পরিবেশ উন্নতি করতে হবে।

তিনি বলেন, ফেয়ার প্রাইস ও ফেয়ার পে পেতে হলে কোয়ালিটি চা উৎপাদন করতে হবে। সেটা করতে পারলে চা অকশনে সঠিক দাম পাবে চা বাগান মালিকরা। এতে এই শিল্পের সাথে জড়িত সব কর্মকর্তা-কর্মচারী সঠিক সময়ে সঠিক সেলারি পাবে। সেটা যদি আমরা নিশ্চিহ্ন করতে পারি তাহলে টেকসই চাশিল্প দাঁড় করাতে পারব। এজন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং ইনকরপোরেট করছি। যেমন- টি টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল কোর্স। আগে যেটা ছিল টি মেকিং কোর্স। সেগুলোও চলমান আছে। পাশাপাশি গত ৪ জুন যে জাতীয় চা দিবস ছিল সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, বিভিন্ন ভ্যালুয়েটেড চা উৎপাদন করতে। আমরা এখন থেকে শুধু লো প্রাইসের চা উৎপাদন না করে ভালো মানের ভ্যালুয়েটেড অ্যারোমা চা উৎপাদন করা। সেটা করতে পারলে বিদেশে বেশি বেশি চা রফতানি করতে পারব। তিনি আরো বলেন, আগে মানুষ শুধু রং চা ও দুধ চা খেত। এখন মানুষ গ্রিন টি, হোয়াইট টি, রোজ টি, অর্থডক্স টিসহ অ্যারোমা টি, জেসমিন টি পান করছে। সে লক্ষ্যেই বাংলাদেশ টি বোর্ড কাজ করছে। আমাদের বিশ্বাস, অদূর ভবিষ্যতে আমরা মানসম্পন্ন এসব চা উৎপাদন করে বিদেশে রফতানি করতে পারব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, আমাদের চায়ের মৌসুম শুরু হয় এপ্রিল থেকে, সে ক্ষেত্রে এখনো আমরা অর্ধেকের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছি উৎপাদনে। আমরা প্রয়োজন ছাড়া চায়ের আমদানির পারমিশন দিয়ে থাকি না। তবে অনেক সময় আমাদের কোয়ালিটি সম্পন্ন চা উৎপাদন করতে হয়। সে জন্য প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন ভ্যালুয়েটেড টি উৎপন্ন করতে। তাই ব্যবসায়ী ও রেগুলেটরি বডি মনে করেন ভ্যালুয়েড কিছু চা আমদানি করে দেশের চায়ের সাথে ব্লেন্ডিং করে কোয়লিটি চা উৎপাদন করে আবার বিদেশে রফতানি করা যায়। অর্থাৎ সামান্য চা আমদানি করে ভ্যালু অ্যাড করা হয়। এতে আমরা অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। আমদানি করা চায়ের চেয়ে অনেক অনেক বেশি পরিমাণ চা আমরা রফতানি করে থাকি।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: ইসমাইল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘প্রিন্সিপাল অ্যান্ড প্রসেসেজ অব কোয়ালিটি টি ম্যানুফ্যাকচারিং কোর্স’ এর মূল উপপাদ্যই হলো কোয়ালিটি চা উৎপন্ন করা। যেহেতু ৯০-৯৫% মানুষ ব্ল্যাক টি খেতে অভ্যস্ত। তাই ব্ল্যাক টিকে কিভাবে আমরা অপটিমাইজ করে সেরা মানের করতে পারি সেটাই শিখবে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীরা। তিনি বলেন, ৭২ রকমের বিষয়কে নির্বিষ করতে পারে গ্রিন টি। হোয়াইট টি অনেক উপকারী একটা চা। ছয় দিনব্যাপী এই কোর্সে অংশগ্রহণকারীরা শিখতে পারবে কিভাবে গ্রিন টির পাশাপাশি হোয়াইট টি, অর্থোডক্স টি, গোল্ডেন টিসহ আরো নানান রকমের প্রিমিয়াম মানের টি মেকিং কিভাবে তৈরি করতে হয়। পাশাপাশি এসব টির ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড প্রসেসিং প্রটোকলগুলো শিখবে।
গতকাল শনিবার শ্রীমঙ্গলস্থ বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের টি রিসোর্চ ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে গবেষণা কেন্দ্রের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট অডিটোরিয়ামে সপ্তাহব্যাপী টি টেস্টিং ও ‘প্রিন্সিপাল এন্ড প্রসেসেজ অব কোয়ালিটি টি ম্যানুফ্যাকচারিং কোর্স’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বিটিআরআই প্রাঙ্গণে নয়া দিগন্তসহ গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।


আরো সংবাদ



premium cement