১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

নারায়ণগঞ্জে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট

নদীপথে আসছে গরু
-


নারায়ণগঞ্জে কোরবানির হাটে নদীপথে কোরবানির পশু আসতে শুরু করেছে। ট্রলারে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তীসহ আশপাশের হাটগুলোতে কোরবানির পশু আনতে শুরু করেছেন ব্যাপারীরা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসব পশু নারায়ণগঞ্জের হাটগুলোতে আসছে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের হাটগুলোতে পাবনা সিরাজগঞ্জ, রংপুর , জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন জেলা থেকে নদীপথে কোরবানির পশু আসছে। ঈদুল আজহার এখনো এক সপ্তাহ বাকি। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জের পশুর হাটগুলো জমে উঠেছে। গত রোববার দুপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী ফতুল্লা ডিআইটি হাট, শীতলক্ষ্যা নদী তীরবর্তী চরসৈয়দপুর সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলের ২ নং ঢাকেশ্বরীর শীতলক্ষ্যা নদীর ঘাটসহ একাধিক হাটে ট্রলার থেকে কোরবানির পশু নামাতে দেখা গেছে। জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ১৮টি অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট বসছে। সিটি করপোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জ ও কদমরসুল অঞ্চলে এ হাটগুলো বসছে। এদের অধিকাংশ হাটই শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ও আশপাশের এলাকায়। এ ছাড়া বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী, পাগলা মুন্সি খোলা, তালতলা, ফতুল্লার ডিআইটিসহ আশপাশের হাটগুলোতে নদীপথে কোরবানির পশু আসতে শুরু হয়েছে । দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরুর পাইকাররা নদীপথে ট্রলারযোগে কোরবানির হাটে ষাঁড় গরুসহ নানা জাতের পশু উঠাচ্ছেন। ফতুল্লার ডিআইটি মাঠের গরু পাইকার শফিকুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে ট্রলারযোগে ২৫টি কোরবানির গরু নিয়ে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, এবারে সব কিছুর দাম বেশি তাই খরচ বেশি হওয়ায় গরুর দাম একটু বেশি হবে। একই হাটের গরুর ব্যাপারী সাইফুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে জানান, ট্রলারে ৩০টি গরু নিয়ে এসেছেন তিনি। আরো ২৬টা গরু আসবে। শাহজাদপুর থেকে তিনি প্রতি বছরই গরু নিয়ে নারায়ণগঞ্জের হাটগুলোতে আসেন। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের এ গরুর ব্যাপারী জানান, পথে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। সামান্য লাভ হলেই গরু বিক্রি করে দিবেন বলে জানান।

সিদ্ধিরগঞ্জের ৮ নং ওয়ার্ডে গোদনাইল ইব্রাহীম টেক্সটাইল মিলসের খালি মাঠে উঠাচ্ছেন গরু। গরুর পাইকার রাসেল মিয়া বলেন, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে ৩০টি গরু নিয়ে ট্রলারযোগে তারা ৮ নং ওয়ার্ডের অস্থায়ী গরুর হাটে উঠাচ্ছেন। একই জেলা থেকে পাইকার ময়নাল ব্যাপারীর নেতৃত্বে ট্রলারযোগে ২৪টি গরু নিয়ে একই হাটে নিয়ে এসেছেন। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের পাইকার আব্দুর রহমান বলেন, তিনি ২টি গরু নিয়ে কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলের হাটে এনেছেন।
তিনি বলেন, এবার গরুর দাম গতবারের চেয়ে একটু বেশি। গতবার যে গরু এক লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে এবার সেই গরু এক লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হবে। এভাবেই শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ও আশপাশের অস্থায়ী পশুর হাটে কোরবানি গরু আসতে শুরু করেছে। গরুর ক্রেতারাও হাটগুলোতে গরু দেখা শুরু করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ সদরের চর সৈয়দপুর শীতলক্ষ্যা সেতু থেকে গরু নামাচ্ছেন পাবনা থেকে আসা গরুর ব্যাপারী মাইনুল। তিনি জানান, ঈদের এখনো এক সপ্তাহ বাকি। এবার আগেভাগেই গরু নিয়ে আসছি। কষ্ট করে গরু লালন পালন করেছি। সবাই চায় কিছু টাকা লাভ করতে।
জালকুড়ির বাসিন্দা মঞ্জু মিয়া নয়া দিগন্তকে বলেন, কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাটে গরু দেখতে এসেছি। এখন গরুর দাম কেমন দেখে গেলাম। পরে এসে কিনে নিয়ে যাবো।

এ দিকে জেলার ফতুল্লা, বন্দর, সোনারগাঁও, আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জের বিভিন্ন স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাটে কোরবানির পশু উঠতে শুরু করেছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের আনাগোনায় হাটগুলো মুখর হয়ে উঠছে। এখনো ঈদের কয়েক দিন বাকি থাকায় হাটে গরু আসা শেষ হয়নি। কোরবানির আগের দিন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু আসা অব্যাহত থাকবে।
সরেজমিনে কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটগুলোতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গরু আসতে শুরু করেছে। খামারিরা নানা জাতের গরু এনে হাটে তুলেছেন। ক্রেতারাও আসতে শুরু করেছেন হাটে।
কোরবানি ঈদ কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলায় স্থায়ী-অস্থায়ী সব মিলিয়ে প্রায় ৭৫টি হাট বসছে। এসব হাটে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু আসতে শুরু করছে।
ফতুল্লার ভুঁইগড় সোনালী সংসদ মাঠে বসা হাটে গরু নিয়ে এসেছেন খামারি হবি। তিনি বলেন, আমি পাবনা থেকে ১৬টি গরু নিয়ে এসেছি। আমার এখানে সর্বনিম্ন দুই লাখ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ লাখ টাকা দামের গরু রয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও গরু নিয়ে এসেছি। আশা করছি, এবারও হয়তো ভালো দামেই গরু বিক্রি করতে পারবো।
এ দিকে ঈদুল আজহা উদযাপনে নৌপথে হয়রানি ঠেকাতে বিশেষ নজরদারি থাকবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত আইজিপি ও নৌ পুলিশের প্রধান মো: আবদুল আলীম মাহমুদ। বৃহস্পতিবার নৌ পুলিশ সদর দফতরে যাত্রী, পণ্য ও কোরবানির পশু পরিবহনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

নৌ পুলিশ প্রধান বলেন, কোরবানির পশু পরিবহনে যাতে কোনো প্রকার বিঘ্ন না হয় সে জন্য কোরবানির পশু বহনকারী সব নৌযান কোন হাটে ভিড়বে তা উল্লেখপূর্বক ব্যানার লাগাতে হবে। কোরবানির পশুসহ অন্যান্য পণ্যবাহী নৌযান যেন নৌপথে কোনো প্রকার হয়রানির শিকার না হয় সে দিকে নৌ পুলিশের বিশেষ নজরদারি থাকবে।
নৌপথের যে কোনো সমস্যায় জরুরি যোগাযোগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নৌপথে যেকোনো সমস্যায় নৌ পুলিশের কন্ট্রোল রুমের নম্বর- ০১৩২০১৬৯৫৯৮ অথবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে নৌ পুলিশকে অবগত করলে নৌ পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের নৌপথে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ণ রাখতে এবং পশু ও পণ্য পরিবহন নিরাপদ ও নির্ঝঞ্ঝাট করতে নৌ পুলিশ বদ্ধ পরিকর। ঈদে নৌ পুলিশ সব নৌ ঘাট, নৌ টার্মিনালগুলোতে দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি বলেন, ঈদুল আজহা উদযাপনে নৌপথ ব্যবহারকারী সবাই যেন নিরাপদে তাদের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন এবং ব্যবসায়ীরা যাতে নির্বিঘে্ণ পণ্য ও কোরবানির পশু নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যেতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাটে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করবে নৌ পুলিশ।

 


আরো সংবাদ



premium cement