লক্ষ্মীপুর শহর সংযোগ সড়ক প্রশস্তকরণে অনিয়ম দুর্নীতি
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজনের পলায়ন- লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
- ০৩ জুন ২০২৪, ০০:০০
লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের ৪২ কোটি টাকার কাজে চরম অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার ইস্কান্দার মির্জা শামীমের বিরুদ্ধে। সওজের কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশে অতি নিম্নমানের কাজ করে যাচ্ছে এ ঠিকাদার। গত শুক্রবার রাতে পৌর নাগরিকদের পক্ষ থেকে দরপত্র শিডিউল অনুযায়ী কাজ করার জন্য দাবি জানানো হলে ওই রাতে ঠিকাদারের লোকজন ভেকু, যন্ত্রপাতি ও যাবতীয় মেশিনসহ পালিয়ে যায়।
শহর সংযোগ বাজারের দুই পাশে ৬ ফুট করে ১২ ফুট ড্রেন নির্মাণে স্থানে ৩ ফুট করে ৬ ফুটের কাজ চলমান রেখেছে সড়ক বিভাগ। আঁকাবাঁকা করে ড্রেন নির্মাণের স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। রাস্তা প্রশস্তকরণের মেকাডম/সাবগ্রেড ৮০ শতাংশ পাথর ২০ শতাংশ বালু ধরা থাকলেও ৬০ শতাংশ পাথর ৪০ শতাংশ বালু দিয়ে সাবগ্রেড তৈরি করেন ঠিকাদার। নিয়মানুযায়ী পাথর এবং বালু দিয়ে সাবগ্রেড তৈরির ৪৫ দিন শেষ না হতে ১৫ দিনের মাথায় তড়িগড়ি করে রাতের আঁধারে প্রাইম কোট ৪৮ ঘণ্টা না যেতে ৭ ঘণ্টার মাথায় কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করে ঠিকাদার শামীম। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার মাগরিব নামাজের সময় এ সময় জনমনে প্রশ্ন ওঠে খবর পেয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা ছুটে এলে ঠিকাদার ও সড়ক বিভাগের কর্মকর্তার নির্মাণকাজ বন্ধ রেখে ঢালাই গাড়ি, ভ্যাকু ও যাবতীয় মেশিনপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। এস্টিমেট অনুযায়ী কার্পেটিং করার কথা ছয় ইঞ্চি সেখানে করা হচ্ছে ৩-৪ ইঞ্চি এমন অভিযোগ করেন পথচারী আহমদ উল্লাহ।
রাস্তা প্রশস্তকরণে কথা ছিল ৩৬ ফুট, সেখানে কোথাও করা হচ্ছে ৩১ কোনো জায়গায় ৩২, ৩৩, ৩৫ ফুট, এমন অভিযোগ করেন রিয়াদ হোসেন।
সড়ক জনপদ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে রাস্তার উপরে ড্রেন নির্মাণ করারও অভিযোগ রয়েছে। নতুন ড্রেন নির্মাণ না করে পুরনো ড্রেনের ২০ ফুটের মতো নতুন ড্রেনের সংযোজন করে দেয়ার অভিযোগ করেন তমিজউদদীন বাড়ির বাসিন্দারা। ঠিকাদার তার নিজ ক্ষমতাবলে এস্টিমেট ছাড়া কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। নির্মিত ড্রেনগুলোতে পানি নামার ছিদ্রপথ খামখেয়ালিভাবে করায় সাধারণভাবে পানি নামছে না। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার তসলিমুর রহমান বলেন, এ ড্রেনে পানি নামতে হলে আগে বন্যা হতে হবে। তা ছাড়া এসব সড়কে পানি নিষ্কাশন সম্ভব নয়।
আবদুল রহমান নামে এক ট্রাক ড্রাইভার বলেন চুসা ড্রেন, গাইড ওয়াল ড্রেন নির্মাণে নিম্নমানের ইটের কণা-বালু দিয়ে কাজ শেষ করে ঠিকাদার ও সড়ক বিভাগ। যার থিকনেস না থাকায় আস্তর উঠে যাচ্ছে এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।
কাজের মান নিয়ে এলাকাবাসী অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। লক্ষ্মীপুর ইলিশ চত্বর থেকে রামগতি স্টেশনের মনা মাস্টার দরজা পর্যন্ত নয়ছয় করে নির্মাণ কাজটি শেষ করে ঠিকাদার শামীম। নির্মাণকাজ চলমান অবস্থায় প্রকল্পের বোর্ড ব্যবহার করা হয়নি। পথচারী ও যানবাহন চলাচলের নির্মাণকাজ চলছে নিরাপত্তাজনিত সাইন বোর্ড ব্যবহারের চোখে পড়েনি।
লক্ষ্মীপুর শহর সংযোগ দক্ষিণ তেমুহনী থেকে উত্তর তেমুহনী ও ঝুমুর এলাকায় ইলিশ চত্বর থেকে রামগতি স্টেশনের মনা মাস্টার এলাকায় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণের ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রায় ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজটি পেয়েছেন ওবায়দুল কাদেরের ভাগিনা নামে পরিচিত ইস্কান্দর মির্জা শামীম। ২০২১ সালে নির্মাণ কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত তিনবার প্রকল্পটি পরিবর্তন করা হয়েছে। ২০২৪ সালেও নির্মাণকাজটি সম্পূর্ণ করতে পারেনি ঠিকাদার ও সড়ক বিভাগ। এতে পথচারী ও যানবাহনের চলাচলের ভোগান্তিরও শেষ নেই।
এ দিকে ভূমি অধিগ্রহণে স্বজনপ্রীতি করার অভিযোগ রয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিনে বিরুদ্ধে। বাজারের একাধিক স্থানে লাল দাগ দেয়া চিহ্নিত জায়গাগুলো উচ্ছেদ করেনি সড়ক বিভাগ।
স্থানীয় এনামুল হোসেন বলেন, এই রাস্তায় যে পরিমাণ নিম্নমানের কাজ হচ্ছে, তা এর আগে কখনো দেখিনি।
সহকারী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন নির্মাণকাজের তদারকি করার কথা থাকলেও প্রাইম কোট দেয়ার সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন না।
লক্ষ্মীপুর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রাইম কোট দেয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর কার্পেটিং করার কথা ঠিকাদার যদি না করে থাকে তাহলে সঠিক হয়নি।
এসব অনিয়ম নিয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারদের চাপ দেয়ার পর তারা আগের চেয়ে এখন কাজ ভালো করছে। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা