১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
সভাপতিকে বহিষ্কারের দাবি

তোপের মুখে গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের বিতর্কিত আংশিক কমিটি

-

প্রায় দেড় বছর ধরে আংশিক কমিটি দিয়ে চলছে গাজীপুর মহানগর ছাত্রদল। বিতর্কিত ও নিষ্ক্রিয়দের দিয়ে এ কমিটি গঠন করার শুরু থেকেই স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভেতর তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। প্রথম থেকেই তোপের মুখে রয়েছেন বিতর্কিত এ কমিটির সভাপতি রোহানুজ্জামান শুক্কুর ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মিরন। শুক্কুর সম্প্রতি মহানগর বিএনপির সিনিয়র নেতাদের নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করে আরো বেকায়দায় পড়েছেন। ফলে শুক্কুরকে বহিষ্কার ও তার আংশিক কমিটি বিলুপ্ত করে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দাবি আরো জোরদার হচ্ছে।
ছাত্রদলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি রোহানুজ্জামান শুক্কুরকে সভাপতি এবং মাহমুদুল হাসান মিরনকে সাধারণ সম্পাদক করে সাত সদস্যবিশিষ্ট গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। কমিটি ঘোষণার পরের দিন ২৭ জানুয়ারি বিকেলে নবগঠিত কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক মহানগর দলীয় কার্যালয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গেলে স্থানীয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা সভাপতি শুক্কুর ও সাধারণ সম্পাদক মিরনকে লাঞ্ছিত করে দলীয় কার্যালয় থেকে তাড়িয়ে দেন। নবগঠিত কমিটির ওই শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান পণ্ড করার পর বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন। এ ঘটনার পর থেকে প্রতিদিনই পদবঞ্চিতদের সমর্থকরা বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন। এমনকি এই বিক্ষোভ থানাপর্যায়েও ছড়িয়ে পড়ে। নগরীর প্রতিটি থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে নয়া কমিটির নেতাদের প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শুক্কুর-মিরন যেখানেই গিয়েছেন সেখানেই স্থানীয় নেতাকর্মীদের বাধার সম্মুখীন হয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছেন। এভাবে দীর্ঘ দিন যাবৎ উত্তেজনা চলতে থাকে। সাত সদস্যের ওই আংশিক কমিটি বাতিলের দাবিতে লাগাতার বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। শুক্কুর-মিরনের উপস্থিতি টের পেয়ে গত বছর ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে মহানগর সদর থানা বিএনপির আহ্বায়ক ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান আজমল ভূঁইয়ার কার্যালয়েও হামলা চালান পদবঞ্চিতরা।
‘হামলা-মামলায় জর্জরিত ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে ব্যক্তিগত পছন্দের লোক দিয়ে পকেট কমিটি’ করার অভিযোগে পরবর্তী সময়ে এ কমিটিকে আর গ্রহণ করতে পারেননি তৃণমূল নেতাকর্মীরা। ফলে প্রায় দেড় বছর ধরে এভাবেই একধরনের অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে চলতে থাকে এ আংশিক কমিটি।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, শুক্কুর সেন্টারিং কাঠ ব্যবসায়ী এবং মহানগর বিএনপির সাবেক একজন সহসভাপতির বাড়ির কেয়ার টেকার। তাকে গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের মতো এত বড় ইউনিটের দায়িত্ব দেয়া ঠিক হয়নি। শুক্কুর-মিরন তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে ‘খুশি’ করে পদ বাগিয়ে আনার পর তারা বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে তথা দলীয় কর্মসূচিগুলোতে উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি। শুক্কুর-মিরনকে কমিটি দেয়ার পর নগরীর প্রায় সব থানা কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবরা একযোগে পদত্যাগ করে ওই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। রাজধানীর ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ থেকে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর সারা দেশের নেতাকর্মীরা যখন বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়ে মাঠে টিকে থাকার প্রাণপণ চেষ্টায় ছিলেন, ঠিক তখনই শুক্কুর আদালতে হাজিরা দেয়ার নামে স্বেচ্ছায় কারাবরণ করেন বলে অভিযোগ স্থানীয় নেতাকর্মীদের। গেল ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পর জেল থেকে মুক্ত হয়েই শুক্কুর নিজের কমিটি বাঁচাতে এবং নিজের স্বেচ্ছায় কারাবরণের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার, সদর মেট্রো থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম, সাবেক আহ্বায়ক হান্নান মিয়া হান্নু ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পুকে প্রকাশ্যে দোষারোপ করে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দেন। এ অবস্থায় সিনিয়র নেতাদের সমালোচনা ও কুৎসা রটনার দায়ে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কারের দাবি ওঠে।


আরো সংবাদ



premium cement