পোশাক কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল ‘পিফাস’ ঢাকায় পানিদূষণের বড় কারণ
এসডো ও আইপেনের যৌথ গবেষণা প্রকাশ- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ৩০ মে ২০২৪, ০০:৩৫
পোশাকশিল্প থেকে যে বিষাক্ত রাসায়নিক নির্গমন হয়, তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা ও এর আশপাশের নদ-নদী এবং খাবার পানি দূষণের অন্যতম উৎস হচ্ছে পোশাক কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত কেমিক্যাল ‘পিফাস’। যা মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। এমনকি লিভার নষ্ট ও ক্যান্সারের ঝুঁঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডো এবং আইপেন যৌথভাবে গবেষণাটি পরিচালনা করেছে। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর লালমাটিয়ায় এসডো কার্যালয়ে এই গবেষণাটি উপস্থাপন করা হয়। গবেষণায় বলা হয়েছে, পোশাক কারখানার আশপাশ এলাকার পানির নমুনায় উচ্চমাত্রার ক্ষতিকর পিফাস নামক রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অনেক নমুনায় পিফাসের পরিমাণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং নেদারল্যান্ডসের নির্ধারিত মাত্রার ওপরে। বাংলাদেশে পিফাস নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। যে কারণে এই গবেষণার ফলাফল ইউরোপীয় ইউনিয়ন, নেদারল্যান্ডস এবং যুক্তরাষ্ট্রের মানদণ্ডের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প ‘ফাস্ট ফ্যাশন’ হিসেবে পরিচিত। দেশের অনেক কারখানা বিশ্বের প্রধান ব্র্যান্ডগুলোর জন্য পোশাক তৈরি করে। তাদের বিভিন্ন পণ্যে পিফাসের উপস্থিতি রয়েছে, যা তেল এবং দাগ-প্রতিরোধ করতে পারে। মোট বৈশ্বিক পিফাস ব্যবহারের প্রায় ৫০ শতাংশ ব্যবহার করে টেক্সটাইল শিল্প। পিফাস নির্গমনে বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এ শিল্প।
গবেষণায় বলা হয়, পিফাস, পার- এবং পলিফ্লুরোঅ্যালকাইল রাসায়নিকগুলো ‘চিরস্থায়ী রাসায়নিক’ হিসেবে পরিচিত। কারণ এটি পরিবেশে জমা হয় ও স্থায়ীভাবে থাকে। যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। উর্বরতা, ভ্রƒণ বিকাশ এবং থাইরয়েড ও হরমোনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এছাড়া কিছু পিফাস শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, লিভার নষ্ট করে এবং ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। এরই মধ্যে কিছু পিফাস স্টকহোম কনভেনশনের মাধ্যমে সারা বিশ্বে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং আরো কিছু নিষিদ্ধের ব্যাপারে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
২০১৯ সাল থেকে গবেষণাটি করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ৩১টি পানির নমুনার মধ্যে ২৭টিতে পিফাস পাওয়া গেছে। যার ১৮টি নমুনায় নিষিদ্ধ পিফাস রাসায়নিক পিএফওএ, পিএফওএস, অথবা পিএফএইচএক্সএস পাওয়া গেছে এবং ১৯টি নমুনায় প্রস্তাবিত ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রক সীমা অতিক্রম করেছে।
২০১৯ সালে কর্ণফুলী নদীর পানিতে সর্বোচ্চ পিফাস শনাক্ত করা হয়েছিল, যা প্রস্তাবিত ইউরোপীয় সীমার চেয়ে ৩০০ গুণ বেশি। সেই নমুনায় দু’টি নিষিদ্ধ পিফাসেরও উপস্থিতি ছিল, একটির মধ্যে ডাচ সীমার চেয়ে ১,৭০০ গুণ বেশি এবং অপরটিতে ৫৪,০০০ গুণ বেশি। আরেকটি নমুনা, ২০২২ সালে হাতিরঝিল লেক থেকে নেয়া হয়। যাতে পিএফওএ এবং পিএফওএস উভয়ই উপস্থিত ছিল, যা ডাচ সীমার চেয়ে ১৮৫ গুণ বেশি।
এছাড়া উচ্চ পিফাস পাওয়া গেছে এমন নমুনা পোশাক কারখানার কাছাকাছি এলাকায়। এটা প্রমাণ করে যে, পোশাকশিল্পে পাওয়া পিফাস পানি দূষণের জন্য দায়ী। এজন্য ২০২২ সালে দু’টি জলপথে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ঢাকা এবং আদমজী ইপিজেড) কাছাকাছি আপস্ট্রিম ও ডাউনস্ট্রিমের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, যেখানে ডাউনস্ট্রিমের নমুনায় পিফাসের ঘনত্ব পাওয়া যায়। ২০১৯ সালের চারটি কলের পানির নমুনার মধ্যে তিনটিতে পিফাস পাওয়া গেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের খাবার পানির জন্য নির্ধারিত পিএফওএ সীমার ওপরে।
এসডো এবং আইপেনের গবেষণাটি বাংলাদেশের পোশাকেও করা হয়েছে। পাঁচটি পোশাকের স্যাম্পলের সব ক’টিতেই পিফাস পাওয়া গেছে। আর একটি পুরুষের জ্যাকেটে নিষিদ্ধ রাসায়নিক পিএফওএ পাওয়া গেছে।
এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা বলেন, বাজার বিশ্বব্যাপী হতে পারে, কিন্তু দূষণ স্থানীয় পর্যায়ে বেশি। স্টকহোম কনভেনশনের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশকে পিফাস নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক মান বাস্তবায়ন করা জরুরি।
স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে এসডোর সিনিয়র পলিসি এবং টেকনিকেল উপদেষ্টা এবং গবেষণার প্রধান ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, নদী, লেক, কলের পানি এবং পোশাকে পিফাস আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ও পরিবেশের জন্য গুরুতর হুমকি। তবুও শিল্পকারখানা এবং নীতিনির্ধারকরা সাড়া দিচ্ছেন না। পোশাক শিল্পকারখানায় পিফাসের নিরাপদ বিকল্প রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইপেন গ্লোবালের গবেষক এবং এ গবেষণার সহ-লেখক জিটকা স্ত্রাকোভা। তিনি বলেন, মানব বিকাশের সব পর্যায় পিফাসের স্থায়ী এক্সপোজারের কারণে প্রচুর স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে। টেক্সটাইল শিল্পকে তাদের পিফাস ব্যবহার দ্রুত বন্ধ করা উচিত এবং তাদের পণ্যে পিফাস-সামগ্রী সম্পর্কে স্বচ্ছতা থাকা উচিত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা