১৭ জুন ২০২৪
`

প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকা সমাজসেবার ২ কর্মকর্তার পকেটে!

-


প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে মাদারীপুরের সমাজসেবার দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে তারা এই টাকা তুলে নিলেও প্রকৃত প্রতিবন্ধীরা জানেন না তাদের নামে ভাতার কার্ড রয়েছে। পরে কার্ড করতে গিয়ে জানতে পারেন, শুধু কার্ডই নয়, তাদের নামে ভাতার টাকাও তুলে নেয়া হয়েছে।
সমাজসেবা অধিদফতরে দেয়া একাধিক অভিযোগ থেকে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রুপাই হাওলাদারের নামে মাদারীপুর সদর উপজেলা হতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অথচ রুপাই এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। সম্প্রতি তিনি নিজের নামে ভাতার আবেদন করতে গিয়ে দেখেন কেউ তার নামে কার্ড করে ইতোমধ্যে কয়েক কিস্তির টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছে। যার মধ্যে পাঁচ কিস্তির টাকা গেছে ০১৯২৩৫৫৮২৩৭ নম্বরে। আর দুই কিস্তির টাকা ০১৬৭০১৩৯১১১ নম্বরে ঢুকেছে। অথচ এই দু’টি নম্বরের কোনটিই তার নয়। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার টাকা চলে যাচ্ছে সহকারী সমাজসেবা অফিসার মো: শাখাওয়াত হোসেন হাওলাদারের বিকাশ নম্বরে।

শাখাওয়াতের বাড়ি রুপাই হালদারের ইউনিয়নে। একই ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো: মামুন খান ও ছালমা বেগম দম্পতির বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়ে ফাতেমা আক্তারের নামে ২০২০-২১ অর্থবছর হতে নিয়মিতভাবে ০১৯২৮১১৩৭৩০ এই নম্বরে টাকা গেলেও হঠাৎ গত তিন কিস্তির টাকা চলে যায় অন্য নম্বরে। ফাতেমার মা অফিসে গিয়ে জানতে পারেন মেয়ের নামের টাকা বর্তমানে ০১৯২২১৮১২২৩ নম্বরে যাচ্ছে। যে নম্বরটি সহকারী সমাজসেবা অফিসার শাখাওয়াত হোসেনের এক ঘনিষ্ঠজনের। কেন্দুয়া ইউনিয়নের ঘটকচর গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর সরদার অভিযোগ করে বলেন, তার নামে প্রতিবন্ধী ভাতা পাস হয়েছে ২০২২-২৩ অর্থবছরে। অথচ তিনি একটি টাকাও পাননি। জেলা সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারেন তার নামে পাস হওয়া প্রথম পাঁচ কিস্তির টাকা ০১৩৩০৯৫৩৭৪৭ এই মোবাইল নম্বরে দেয়া হয়েছে। আর দুই কিস্তি গেছে ০১৭১৫১৯৯৫৯৪ এই নম্বরে। কিন্তু নম্বর দু’টির একটিও তার নয়। নম্বরগুলো কালকিনি উপজেলার সহকারী সমাজসেবা অফিসার মশিউর রহমান ও তার এক আত্মীয়ের। মশিউর রহমান শাখাওয়াত হোসেন হাওলাদার এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা দুইজন ১৯৯৮ সালে ফিল্ড সুপারভাইজার হিসেবে সমাজসেবা অধিদফতরে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তারা ঘুরেফিরে মাদারীপুরের বিভিন্ন উপজেলাতেই কর্মরত আছেন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তার একই সাথে পদোন্নতি পেয়ে ফিল্ড সুপারভাইজার হতে সহকারী সমাজসেবা অফিসার হিসেবে বিধিবহির্ভূতভাবে পূর্ববর্তী কার্যালয়েই পদায়ন পেয়েছেন।

সরকারি চাকরিজীবীদের নির্দিষ্ট সময় পরপর বদলির বিধান থাকলেও এই দু’জন প্রায় ২৫ বছর ধরে সদরসহ মাদারীপুরেরই বিভিন্ন কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সুবাদে এলাকায় গড়ে তুলেছেন বিশাল চক্র। যাদের সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কাজ ও অপকর্ম করে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন একই এলাকায় চাকরি করার কারণে প্রভাব খাটিয়ে সমাজসেবা অধিদফতরসহ বিভিন্ন দফতরের মাধ্যমে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে তারা অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে দুই সহকারী সমাজসেবা অফিসারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।


আরো সংবাদ



premium cement